ছাত্রলীগের নামে সব দোষ চালিয়ে দেয়াটা সহজতম আইওয়াশ!
2020-10-01 02:04:30
একটা সরকারি কলেজে সুস্থ-স্বাভাবিক, নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করার দায়িত্ব কার? ছাত্রলীগের? যেখানে দশ বছর ধরে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ সংগত কারণে সেখানে ছাত্রলীগ নামধারী যারা আছে তারা নিশ্চিতভাবেই ছাত্রলীগের বর্তমান রাজনীতি বা সাংগঠনিক কার্যক্রমের সাথে কোনভাবে যুক্ত না।
মিডিয়াতে ছাত্রলীগের নাম আসলে ছাত্রলীগকে নিয়েই সমালোচনা হবে এটা স্বাভাবিক কিন্তু আর কারো দায় কি কারোই চোখে পড়ে না? হোস্টেল সুপারকে কেন এখনো বরখাস্ত করা হয় নাই? অধ্যক্ষ কেন শুধুমাত্র নিজেকে অসহায় সরকারি কর্মকর্তা বলে দাবি করে পার পেয়ে যাবে এরকম একটা ঘটনায়? এত অসহায় তিনি সেটা আগে কখনো কোথাও জানানোর চেষ্টা অন্তত করেছেন? অথর্ব হয়ে নিজের গা বাঁচিয়ে বসে থাকার জন্যই কি নিয়োগ দেয়া হয় এইসব প্রশাসনকে?
তারা যদি গা বাচিয়ে বা এইসব দাপট দেখানো সন্ত্রাসীদের থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিয়ে তাদের সাথে আপোষ করে থাকেন, তাহলেও দায় তা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ওপর বর্তায় তাদের যথাযথ নির্দেশনা দেয়ার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখতে। যেখানে প্রশাসন এরকম অথর্ব, দায়িত্বহীন আর গা বাচিয়ে চলার মানসিকতা নিয়ে বসে থাকে সেই জায়গকে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বা রাজনীতির তকমা লাগিয়ে সুযোগসন্ধানীরা নিজেদের অপরাধের অভয়ারণ্য বানিয়ে ফেলবে এটাই স্বাভাবিক। তাই প্রশ্ন তোলা হলে সবার আগে দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষকে নিয়ে তোলা হোক।
এমসি কলেজে যে এ ধরনের ঘটনা প্রথমবার ঘটে নাই সেটা এই ঘটনার পর অনেকের অভিজ্ঞতা থেকেই বের হয়ে আসছে। এগুলো এখানে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। শুধু ধর্ষণই না, ভিক্টিমদের টাকা পয়সা, গহনা, গাড়ির চাবি পর্যন্ত আটকে রাখে কুলাঙ্গারগুলা৷ কতটা সাহস আর ব্যাকআপ থাকলে এত অনায়াসে এগুলো করা সম্ভব এটা বুঝা কঠিন কিছু না। সবগুলোর মত এই ঘটনাও ধামাচাপা পরে যেত যদি না ছাত্রলীগেরই সাবেক এক নেতা ঘটনাস্থলে দৃঢ়ভাবে ঘটনাটির বিহিত করতে না যেতেন। এদের মত সন্ত্রাসীদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে পালছে কারা? ছাত্রলীগ? না!!
এদেরকে বাঁচাতে ঘটনাস্থলে যেই স্থানীয় নেতা গিয়েছিলো বা তারা যার অনুসারী বা পুলিশের কেউ কেউ যেই নেতার কথায় শুরুতে আপোষ করে মিটিয়ে ফেলার কথা বলেছিলো তাদের নাম কেন মিডিয়াতে ভাইরাল হয় না? স্থানীয় গডফাদারদের ক্যাডার বাহিনীরা তাদের আশকারা পেয়ে বিশৃঙ্খল, বেপরোয়া হয়ে উঠবে, ছাত্রলীগের তকমা লাগিয়ে যাবতীয় অপকর্ম করে বেড়াবে আর সবকিছুর দায় নিতে হবে শুধু ছাত্রলীগকে? আর কাউকে দায় নিতে হবে না?
ছাত্রলীগের নামে সব দোষ চালিয়ে দেয়াটা সহজতম আইওয়াশ। মিডিয়া শুধু ছাত্রলীগকে হাইলাইট করবে, মানুষ ছাত্রলীগকে গালি দিতেই ব্যস্ত থাকবে। অপরাধের মূল একই অবস্থায় থেকে যাবে। দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ তাদের ব্যর্থতা, অথর্বতা আর দায়িত্বহীনতার পরেও পার পেয়ে যাবে। স্থানীয় নেতা আর গডফাদাররাও নিরাপদে আড়ালে থেকে যাবে। সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করার দায় সরকারও এড়াতে পারে না, তাহলে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বারবার ঘটবে। শুধুমাত্র ছাত্রলীগের সমালোচনা করে তৃপ্তি অবশ্যই পেতে পারে অনেকে, কিন্তু সমাধান পাওয়া সম্ভব না৷ কারণ এইসব সমস্যার সমাধান করা শুধুমাত্র ছাত্রলীগের হাতেও না, ছাত্রলীগের একার দায়বদ্ধতাও না।
কিন্তু ছাত্রলীগের নিজের স্বার্থেই জেলা পর্যায়ে কমিটিগুলো হালনাগাদ করে আরো সুশৃঙ্খল হওয়া দরকার। নাহলে ছাত্রলীগের তকমা নিয়ে চলা অযাচিতদের অপকর্মের জন্য বারবার ছাত্রলীগকে প্রশ্নবিদ্ধ হতে হবে।
লেখক: রাইসা নাসের || সদ্য সাবেক সদস্য ডাকসু এবং সহ-সম্পাদক বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়