অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষার বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধকতা
2020-10-19 05:39:21
পরীক্ষার মাধ্যমেই শিক্ষার্থী ভর্তি করবে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো৷ তবে পরীক্ষা অনলাইনে না সরাসরি অংশগ্রহণের মাধ্যমে হবে সে বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি৷
উপাচার্যরা মনে করছেন, করোনা পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে তাতে অনলাইনেই ভর্তি পরীক্ষা নিতে হবে৷
তবে ভর্তি পরীক্ষা অনলাইনে হলে বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে৷
ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সংগঠন ‘বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ'-এর সভাপতি এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, ‘‘পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে৷ এখন এ পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে আরো আলোচনা হবে৷''
চ্যালেঞ্জের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘এখন তো স্বাভাবিক সময় নয়৷ তাই চ্যালেঞ্জ তো থাকবেই৷ এর মধ্য দিয়ে কাজ করতে হবে৷''
কবে ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানতে চাইলে রফিকুল আলম বলেন, ‘‘এটি নির্ভর করছে এইচএসসির ফল কবে প্রকাশ করা হবে তার ওপর৷ এ বিষয়ে আগামী মাসে আরেকটি সভা করা হবে৷''
অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা কীভাবে হতে পারে এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুনাজ আহমেদ নূর ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা একটি সফটওয়্যার তৈরি করেছি৷ ইতোমধ্যে এর পরীক্ষা-নিরীক্ষাও হয়েছে৷ উপাচার্যরাও আমাদের সফটওয়্যার দেখে ইতিবাচক মত দিয়েছেন৷''
এই সফটওয়্যারের বিশেষত্ব কি? জবাবে তিনি বলেন, ‘‘এই সফটওয়্যারটি ব্যবহার করতে হলে পরীক্ষার্থীকে সার্বক্ষণিক অনলাইনে থাকতে হবে না৷ শুধুমাত্র শুরুর ১০ মিনিট ও শেষের ১০ মিনিট অনলাইনে থাকলেই হবে৷ এমনকি বিদ্যুৎ না থাকলেও কোন সমস্যা হবে না৷ সফটওয়্যারটি যখন চালু হবে তখন ডিভাইসের অন্য সবকিছু সয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে৷ অফলাইনে থাকলেও নির্দিষ্ট সময় পর পর ছবি উঠতে থাকবে৷ অডিও রেকর্ড হতে থাকবে৷ যা ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সার্ভারে চলে আসবে৷ তখন পরীক্ষকরা এগুলো দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন৷''
এইচএসসি পরীক্ষায় সবাইকে পাশ করিয়ে দেওয়ার পর অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া৷
হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাটের বাসিন্দা জাকারিরা হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমার ছেলে সারওয়ার হোসেন এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল৷ কিন্তু সেই পরীক্ষাটা তো হলো না৷ এখন শুনছি অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা হবে৷ এটা আমাদের জন্য খুবই কঠিন৷ এখানে মোবাইল ফোনেই ঠিকমতো কথা বলা যায় না৷ তাহলে ইন্টারনেট পাবো কোথায়? এই পরিস্থিতিতে আমার ছেলেটা ভালো কোথাও কীভাবে চান্স পাবে তা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন৷ আমরা চাই, সরাসরি ভর্তি পরীক্ষা হোক৷ কষ্ট করে হলেও আমরা যাব৷ ছেলে চান্স পাক আর না পাক আমাদের মানসিক সান্ত্বনা থাকবে৷''
ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা সাহেরা বেগম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমার দুই মেয়ে এবার বিএন কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল৷ তারা খুব কষ্ট করে দারুণ প্রস্তুতি নিয়েছিল৷''
অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে সাহেরা বেগম বলেন, ‘‘এটা তো স্বাভাবিক সময় নয়৷ ফলে যারা এটা করছেন তারা নিশ্চয় ভালো বুঝেই করছেন৷ কিন্তু পরীক্ষাটা ঠিকমতো হলেই ভালো৷ তবে আমি মনে করি এভাবে পরীক্ষা না নিয়ে সরাসরি ভাইবার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করার কথা তারা চিন্তা করতে পারেন৷ সবকিছু মিলিয়ে ভালো একটা জায়গায় মেয়েদের ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি৷''
অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা হলে উচ্চশিক্ষায় গ্রামের শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়বে কীনা জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যে সফটওয়্যারের কথা বলা হচ্ছে, সেটা যদি ঠিকঠাক থাকে তাহলে তো পিছিয়ে পড়ার কারণ নেই৷ একজন শিক্ষার্থীর কত জায়গায় গিয়ে পরীক্ষা দিতে হতো? অভিভাবকদের সেই খরচটা কিন্তু বেঁচে যাচ্ছে৷ তাহলে তারা একটু কষ্ট করে যেখানে ইন্টারনেট আছে, তেমন জায়গায় গেলেই তো পারেন৷ আসলে এই পরিস্থিতিতে বিষয়টিকে নেতিবাচকভাবে না দেখে ইতিবাচকভাবেই দেখা উচিত৷''
বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভার সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শিরিন আখতার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কোন কিছুই চূড়ান্ত নয়৷ আর আমরা তো স্বাধীনভাবে কোন সিদ্ধান্ত নেই না৷ ঢাকা, রাজশাহী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত নেবে আমরাও তাই নেব৷ দেখেন আমরা তো এখন পুরোমাত্রায় অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছি৷ কিন্তু পরীক্ষা নিতে পারছি না৷ ধরুন লিখিত পরীক্ষা অনলাইনে নিলাম, ব্যবহারিক পরীক্ষা কীভাবে নেব? ফলে এখন চূড়ান্ত কিছু বলা যাচ্ছে না৷ পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠকের পর আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারব৷''
এ বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন অর রশিদ বলেছেন, কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়কে গুচ্ছে ভাগ করে ভর্তি পরীক্ষা হবে৷ তবে সবকিছুই চূড়ান্ত হবে ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে৷ আর ভর্তি পরীক্ষাটি হবে এমসিকিউ প্রশ্নের ভিত্তিতে৷ তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কোন পরীক্ষা নেবে না৷ এসএসসি ও এইচএসসির ফলাফলের উপর ভিত্তি করেই আমরা কলেজগুলোতে ভর্তি করবো৷
প্রসঙ্গত, এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল ১৩ লাখ ৬৫ হাজারের বেশি৷ পরীক্ষা না হওয়ায় তারা সবাই এবার উত্তীর্ণ হচ্ছেন৷ বর্তমানে দেশে ৪৬টি সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স প্রথম বর্ষে আসন সংখ্যা ৬০ হাজারের মতো৷ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা ১ লাখ আর সরকারী কলেজগুলোতে আসন সংখ্যা ১২ লাখের মতো৷ ফলে সব শিক্ষার্থীই উচ্চশিক্ষায় ভর্তির সুযোগ পাবেন৷
ডয়চে ভেলে