17936

বন্ধুত্ব হারানোর কষ্টে বিসিএস ক্যাডার হয়ে ওঠার গল্প

বন্ধুত্ব হারানোর কষ্টে বিসিএস ক্যাডার হয়ে ওঠার গল্প

2020-07-01 18:57:13

চলেন আজকে একটা বন্ধুত্বের গল্প শোনাই। ছেলেটার সাথে স্কুল কোচিং করেছি,কলেজটাও একসাথে,ভার্সিটি আলাদা হলেও যোগাযোগ কমে নাই। বেকার লাইফের শুরু থেকে একত্রে যোগাযোগ করে পড়াশোনা। আমার জীবনের সব সে জানে, সে আমার ২-৩ জন বেস্ট ফ্রেন্ডের একজন।

এরপরে বিভিন্ন চাকরীর এক্সাম দিতে বন্ধু ঢাকা আসত।আমার বাসায় কত রাত গল্প করে কাটিয়েছি,কত বেলা দুইজনে আফসোস করে পার করেছি।একসাথে চাকরীর পরীক্ষা দিয়েছি, ফেইল করব জেনে সারারাত পার্টি করছি। এটা দুইজন বালক থেকে বেকার হওয়া বন্ধুর গল্প, একটা বন্ধুত্বের গল্প।

আমার বন্ধু সেবার বিসিএস ক্যাডার হল।আমার মনে হল একটা কাধ বুঝি ভেঙে গেল।চাকরী না পাওয়া লাইফে কষ্টের কথা শেয়ার করে একটু সাহস খোজার জায়গাটা বুঝি হারিয়ে ফেললাম। আমার পাশে সহযোদ্ধা হারানোর ব্যাথা ছাড়া বাকি সব তার সাফল্যের খুশীতে পূর্ণ ছিল।

মন্দের ভাল যা হল, এবার বন্ধু হয়ত আমাকে হেল্প করবে।পরামর্শ দিবে, সাহস দিবে।আমার উপরে উঠে যাওয়া বন্ধু আমাকে গর্ত থেকে টেনে তুলবে। আমাকে পথ দেখিয়ে সামনে এগিয়ে নিবে। যে মশালের পেছনে পথ চলব বলে স্বপ্নে বিভোর ছিলাম, হঠাৎ সেই মশালটাই নিরুদ্ধেশ হয়ে যাবে ভাবিনি।

মাঝে একটু বলে নেই, আমি নরমালি ফেসবুকে কারো পোস্টে কোন কমেন্ট করিনা।শুধুমাত্র খুওওওব কাছের বন্ধুবান্ধব যারা তাদের এখানে কমেন্ট করি। মজা করি,ফাজলামি করি, দুই চারটা আলতু ফালতু কমেন্ট করি।সেটা আমার সেই বেস্ট ফ্রেন্ডের পোস্টেও করতাম।

তার ক্যাডার হওয়ার ঠিক তিন মাস পরে আবিষ্কার করলাম আমার সেই বন্ধু আমাকে ফেসবুক থেকে আনফ্রেন্ড করে দিছে!!!!!! আমার অপরাধ, আমি তার পোস্টে যেসব কমেন্ট করি সেগুলা নাকি তার "আত্মসম্মানবোধে" লাগে!!

জানি অনেকের কাছে এটা একটা সিম্পল ফেসবুক আনফ্রেন্ড,বাট আমার কাছে আমার লাইফে পাওয়া অন্যতম একটা কষ্ট। সে আমাকে একবার সিরিয়াসলি বলতে পারত যে এমন করিস না, আমি করতাম না।বাট যেটা গত ৪-৫ বছরে তার গায়ে লাগে নাই সেটা ক্যাডার হওয়ার পরেই তার গায়ে লাগল??? এতটাই সম্মান তার নষ্ট হল যে আমার সাথে যোগাযোগটাও বন্ধ করে দিল?

বন্ধু, আমি যখন পড়াশোনা করে হতাশ হতাম আমি ভাবতাম যে অন্তত তোমাকে দেখানোর জন্যেও আমার ক্যাডার হওয়া উচিত।এই যে রেজাল্টের পরদিন এই স্ট্যাটাসটা লিখছি এটা আমার অনেক বছরের জমানো একটা স্বপ্ন।তুমি নিজেও জানো না তোমার সামান্য একটা হেয়ালী বিহেভিয়ার একজন মানুষকে কতটা কষ্ট দিয়েছে যে তাকে ক্যাডার হওয়ার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে!! আমার বাপ আর তুমি না থাকলে জীবনে বিসিএস দেয়ার স্বপ্নটাও দেখতাম না।

ধন্যবাদ তোমাকে, যখন তোমাকে সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন ছিল তখন তুমি আমাকে দূরে সড়াইছ। হৃদয়ের মাঝখানে সবচেয়ে বড় ক্ষতটা তোমার তৈরী। তুমি আমাকে আনফ্রেন্ড না করলে আজকের গল্পটা এমন হত না। হয়ত তোমার উদ্দেশ্য এত্ত বাজে ছিল না,কিন্তু আমার কাছে কষ্টটা অনেক গভীর ছিল।জানি তুমি পোস্ট পড়বা,কমেন্ট খুটিয়ে দেখবা,তোমাকে বলাটা প্রয়োজন, বড় হওয়ার আগে ছোট হওয়াটা জরুরি।

দিনশেষে এটা একটা সামান্য চাকরী।ক্যাডারদের পেছনে কোন বিশেষ পাখা গজায় না।প্রমিজ করছি, এই চাকরী পাওয়ার পরে কাওকে আনফ্রেন্ড করব না।আমি চাইনা আমার কাছে কষ্ট পেয়ে কেও নতুন করে ক্যাডার হোক :P

বিঃদ্রঃ আমার বাপ দাদা চৌদ্দ গোষ্ঠিতে কারো কোটা নাই।কোটা থাকলে হয়ত আজকে ফরেন ক্যাডার পেলেও পেতে পারতাম।

লেখকঃ নাজিরুল ইসলাম নাদিম, বিসিএস ক্যাডার (কর) সুপারিশপ্রাপ্ত।  সাবেক শিক্ষার্থী-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সম্পাদক: ইসমাঈল হোসাইন রাসেল
যোগাযোগ: ক্যাম্পাস টাইমস
৪৩ শহীদ নজরুল ইসলাম সড়ক, হাটখোলা রোড, চৌধুরী মল, টিকাটুলি, ঢাকা-১২০৩
মোবাইল: ০১৬২৫ ১৫৬৪৫৫
ইমেইল:[email protected]