18171

যেভাবে শুরু হলো বয়কট শব্দের প্রচলন

যেভাবে শুরু হলো বয়কট শব্দের প্রচলন

2020-07-20 17:37:38

ক্লাস বয়কট, ম্যাচ বয়কট অথবা আন্দোলন বয়কট; দৈনন্দিন জীবনের নানা ক্ষেত্রে আমরা বয়কট শব্দটি শুনে থাকি অথবা প্রয়োগ করে থাকি। কোনো অনুষ্ঠান, আয়োজন বা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ প্রত্যাহার করে নেয়ার ব্যাপারটিকে বয়কট নামে অভিহিত করা হয়। তো এই বয়কট শব্দটির উত্‍পত্তি কীভাবে হলো?

অন্য সব শব্দের মতো ইংরেজি এই শব্দটি অন্য কোনো শব্দের সাথে সঙ্গতি রক্ষা করে তৈরি হয়নি। তাই এ শব্দটি ঘিরে রয়ে গেছে রহস্য। সেই রহস্য উদঘাটন করতে চাইলে আমাদের ফিরে যেতে হবে ১৮৮০ সালে। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে আইরিশ ভূমি যুদ্ধের সময় লর্ড আর্নে নামক এক জমিদারের এজেন্ট ছিলেন চার্লস বয়কট নামের এক ব্রিটিশ ক্যাপ্টেন।

জমিদারের অনুপস্থিতির জন্য চার্লস বয়কট তার সহায় সম্পত্তির দেখাশোনা করতেন। আয়ারল্যান্ডের মায়ো কাউন্টির জমিদার ছিলেন লর্ড আর্নে। তখন খরার কারণে আয়ারল্যান্ডে ব্যাপক ফসলহানি হয়। এ উদ্বেগে প্রজাদের তখন মাথায় হাত। নিজেরাও বা কী খাবেন, আর জমিদারের খাজনাও বা কিভাবে পরিশোধ করবেন! জমিদার আর্নে তখন এগিয়ে এলেন প্রজাদের প্রতি তার মহত্ত্ব দেখাতে। প্রজাদের খাজনা সেই বছরের জন্য ১০ শতাংশ কমিয়ে দিলেন তিনি। তবে মাত্র ১০ শতাংশ খাজনা হ্রাসে গরিব প্রজারা সন্তুষ্ট হতে পারলো না।

একে তো তারা দরিদ্র, তার ওপর সেবার ছিল ভয়ানক ফসল মন্দা। তাই তারা আন্দোলন করে ২৫ শতাংশ খাজনা কমানোর দাবি জানালো। তবে লর্ড আর্নে প্রজাদের সেই দাবি মানলেন না। তার বিশ্বস্ত প্রতিনিধি চার্লস বয়কটকে পাঠিয়ে দিলেন বিদ্রোহকারীদের দমন করার জন্য। কৃষকদের এই দুরাবস্থায় এগিয়ে এলেন তখনকার সময়ে আইরিশ ল্যান্ড লীগের এক সদস্য চার্লস স্টুয়ার্ট পারনেল।

তিনি সবাইকে বুদ্ধি দিলেন, অত্যাচারীদের শান্তিপূর্ণ উপায়ে সামাজিকভাবে বহিষ্কার করা হবে। পারনেল শোষকদের সাথে অযথা মারামারি কাটাকাটিতে যেতে চাননি। পারনেলের কথা শুনে স্থানীয় সবাই বয়কটকে অবজ্ঞা করা শুরু করলেন। শ্রমিকরা বয়কটের অধীনে থাকা জমিতে কাজ করলেন না। ব্যবসায়ীরা বয়কটের কাছে পণ্য বিক্রি করা বন্ধ করে দিলেন। এমনকি স্থানীয় ডাকপিওন

বয়কটের চিঠি পর্যন্ত নিতে অস্বীকৃতি জানালো। শান্তিপূর্ণ সেই বিদ্রোহ সবাইকে এতটাই নাড়া দিয়েছিল যে বয়কটের নিজের বাড়ির চাকর-চাকরানীরা চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে গেল। সমাজের সবাই এভাবে বয়কটকে একঘরে করে রাখল। তার অধীনে থাকা জমিতে কেউ ফসল চাষ করতে রাজি হলো না। এতে করে বয়কট অর্থনৈতিকভাবে বেশ ক্ষতির সম্মুখীন হতে লাগলেন। ফসল চাষের জন্য বয়কট বাইরের কাউন্টিগুলো থেকে ৫০ জন চাষী নিয়ে আসলেন। তবে তাদেরকে নিরাপত্তা দিতে ও ফসলের রক্ষণাবেক্ষণে এক হাজার সশস্ত্র নিরাপত্তা কর্মী নিযুক্ত করতে হলো। কারণ বিদেশ থেকে ফসল চাষের জন্য লোক নিয়ে আসায় স্থানীয় কৃষকরা বয়কটের উপর বেশ ক্ষেপে গিয়েছিলেন।

তবে পারনেল জনতাকে সবসময়ই শান্তিপূর্ণ থাকার আহ্বান জানাতেন এবং এভাবেই বয়কটকে 'বয়কট' করার আন্দোলন চালিয়ে গেলেন। যাই হোক, বিদেশ থেকে আনা চাষী ও ওই বিশাল নিরাপত্তা বহরের খরচ বহন করতে বয়কটকে হিমশিম খেতে হলো। এতে করে পরবর্তী বছর বয়কটের জমির ফসল থেকে যা লাভ হলো, তা ভাড়া করা কর্মীদের বেতন দিতে গিয়েই সব শেষ হয়ে গেল। অর্থনৈতিক দিক থেকে আরো পঙ্গু হয়ে গেলেন বয়কট।

পরের বছরও তাকে এভাবে সামাজিকভাবে বহিষ্কার করার রীতি চলতে থাকল। এদিকে বয়কটকে বয়কট করার এই কাহিনী সেকালের সব সংবাদপত্রে ফলাও করে গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করা হলো। ভিন্নধর্মী এই আন্দোলনে সাড়া পড়ে গেল সারা বিশ্বে। কোনো অন্যায় অবিচার মেনে না নিয়ে দলগতভাবে কাউকে অথবা কোনো সংগঠনকে পরিত্যাগ করার অর্থে 'বয়কট' শব্দটি ব্যবহার হতে থাকল। এরপর থেকে ধীরে ধীরে এই শব্দটি ইংরেজি শব্দ ভান্ডারের একটি তাত্‍পর্যপূর্ণ শব্দে পরিণত হয়।

সম্পাদক: ইসমাঈল হোসাইন রাসেল
যোগাযোগ: ক্যাম্পাস টাইমস
৪৩ শহীদ নজরুল ইসলাম সড়ক, হাটখোলা রোড, চৌধুরী মল, টিকাটুলি, ঢাকা-১২০৩
মোবাইল: ০১৬২৫ ১৫৬৪৫৫
ইমেইল:[email protected]