21273

'শাস্তি কম হয়েছে'

'শাস্তি কম হয়েছে'

2021-02-02 00:22:53

গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির দায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিয়া রহমান, সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজান ও মুহাম্মদ ওমর ফারুককে শ্বাস্তি প্রদান করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এর মধ্যে প্রথম দুইজন ৮ পৃষ্টার এক আর্টিকলের প্রায় পাঁচ পৃষ্ঠাই plagiarism-এর দায়ে দুষ্ট অর্থাৎ কাট & পেস্ট। এত বড় একটা ক্রাইম প্রমাণিত হওয়ার পর কি করে এত লঘু একটা শাস্তি হয় সেইটাই আমার মাথায় কিছুতেই আসছে না।

তাদের এই চৌর্যবৃত্তির অভিযোগটা আনলো কারা? মূল আর্টিকেলটি যেই জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিল সেই জার্নালের প্রকাশক অভিযোগ করেছে। We have to বুঝতে হবে। এইটা একটা আন্তর্জাতিক প্রকাশক প্রতিষ্ঠান থেকে আসা অভিযোগ। তাই বাধ্য হয়েই প্রশাসন এই লঘু দন্ড দিয়েছে। কেন এই লঘু শাস্তি? কারণ অভিযুক্তরা ক্ষমতাসীন সরকার ঘরানার। তারা যদি বিপরীত ঘরানার হতো তাহলে হয়ত চাকুরী হারাতো নিশ্চিত এবং ওটাই হতো যথাযোগ্য শাস্তি।

কিন্তু গতকাল রিপোর্টটা পড়ে প্রথম যেই রিঅ্যাকশনটা আমার মাথায় এসেছে সেটা হলো তারা এখন ছাত্রছাত্রীদের কোন মুখ নিয়ে শ্রেণীকক্ষে যাবেন? শিক্ষকতা কি কেবলই বই পড়ানো? একেকজন শিক্ষক হলো সমাজের রোল মডেল, মেন্টর। এই জন্যই বলছি এইধরণের ক্রাইমের শাস্তি কেবল একটাই হয় আর তা হলো চাকুরী থেকে বরখাস্ত। এক ধাপ পদাবনতি কি নির্লজ্জদের জন্য আদৌ কোন শাস্তি? এরা এখন আরো জোরে সোরে রাজনীতি করা শুরু করবে। এরাই হবে দলের জন্য অ্যাসেট। দুদিন পরই যখন মানুষের মেমরি থেকে এটা মুছে যাবে তখন রাজনীতির প্রভাব খাটিয়ে দ্রুত প্রমোশন ঠিকই বাগিয়ে নিবে। যাদের নৈতিক স্খলন প্রমাণিত তাদের কোন ভাবেই চাকুরীতে বহাল রাখা উচিত না। এইটা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য মঙ্গলজনক না। এদের যদি ন্যূনতম আত্মসম্মানবোধ থাকে তাহলে স্বেচ্ছায় চাকুরী ছেড়ে সলিটারি জীবন বেছে নিত।

আরেকটি কথা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাঝে কি কেবল এই দুইজনই চৌর্যবৃত্তি করেছে? না। এর আগেও অনেকের নামে নানা সময়ে অভিযোগ এসেছে কিন্তু কিছু হয়নি। এইবার হয়েছে কারণ অভিযোগটা এসেছে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান থেকে। এখন যারা শিক্ষক আছেন তাদের মধ্যে তদন্ত করলে বা খোঁজ নিলে অনেকের বিরুদ্ধেই এই অভিযোগ আনা যাবে বলে আমার বিশ্বাস। সকল শিক্ষকের প্রকাশিত সকল আর্টিকেলই আসলে তদন্ত করে দেখা দরকার। শুধু তাই না, যারা প্রিডেটরি জার্নালে আর্টিকেল প্রকাশ করে বা একই আর্টিকেল ঘুরিয়ে ফিরিয়ে লিখে একাধিক জার্নালে প্রকাশ করে তাদের ভিতরেও ক্রিমিনাল মাইন্ড বসবাস করে। এরাও শিক্ষক হওয়ার যোগ্য না।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকরা ছাত্রদের দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশের কারণে চাকুরী হারায় আর এখানে চৌর্যবৃত্তির মত এত বড় ক্রাইম করেও চাকুরী থাকে। সত্যিই কি সেলুকাস!! শিক্ষকদের দায়িত্ব হলো ছাত্রদের সুখদুখ দেখভাল করা। পড়াশুনার জন্য ছাত্রদের যেই ন্যূনতম আবাসিক পরিবেশ থাকার দরকার বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে তার ধরে কাছেও নাই। সারা বাংলাদেশের সকল শিক্ষকদের উচিত ছাত্রদের হয়ে দাবি জানানো এবং প্রয়োজনে আন্দোলন করা। আমরা যারা সেটা করছি না সেটাই বরং অন্যায়।

লিখেছেন কামরুল হাসান মামুন, শিক্ষক-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

সম্পাদক: ইসমাঈল হোসাইন রাসেল
যোগাযোগ: ক্যাম্পাস টাইমস
৪৩ শহীদ নজরুল ইসলাম সড়ক, হাটখোলা রোড, চৌধুরী মল, টিকাটুলি, ঢাকা-১২০৩
মোবাইল: ০১৬২৫ ১৫৬৪৫৫
ইমেইল:[email protected]