21793

প্রযুক্তির নেতিবাচকতা রুখতে আমরা কি প্রস্তুত?

প্রযুক্তির নেতিবাচকতা রুখতে আমরা কি প্রস্তুত?

2021-04-09 00:03:52

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির এক অভূতপূর্ব বিপ্লব সাধিত হয়েছে আমাদের দেশে বিগত কয়েক বছরে। আর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির এই বিপ্লবের ফলে আমাদের তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং সরবারহ পূর্বের তুলনায় অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে দেশের সমসাময়িক খবর জানতে মানুষ যেখানে টেলিভিশনের সামনে বসে থাকতো বা পত্রিকার দিকে তাকিয়ে থাকতো আজ সেখানে মুহুর্তের খবর মুহুর্তেই পৌছে যায়। এই অসম্ভব কাজ খুবই সীমিত সময়ে সম্ভব হয়েছে তথ্য প্রযুক্তির ইতিবাচক প্রসারণের মাধ্যমে।

এখন প্রশ্ন হলো আমরা এই তথ্য প্রযুক্তির কতোটুকুন কিভাবে ব্যবহার করছি ? একটি বিষয় মনে রাখা উচিৎ যে আমরা যারা শহরে বসবাস করি তাদের কাছে যে কোন তথ্য দিয়ে তা বিশ্বাস করানো বর্তমান সময়ে খুব কঠিন। কারণ আমরা তথ্য প্রযুক্তির ছোঁয়ায় আমাদের পারিপাশ্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে ওয়াকিবহাল থাকি। কিন্তু যারা একদম প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকে তাদের কাছে যদি এই তথ্য প্রযুক্তির নেতিবাচক ব্যবহার করার মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হয় তাহলে তারা বিভ্রান্ত হবে এটাই স্বাভাবিক।

আমাদের মাঝে কয়েকটি অংশ রয়েছে। একটি অংশ যারা তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে নানাবিধ তথ্য নান্দনিক ভাবে উপস্থাপন করে তা সহজেই দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছড়িয়ে দেয় মুহুর্তের মধ্যে। আর একটি অংশ রয়েছে যারা শুধু তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে এই সব তথ্য গ্রহণ করে থাকে। এই বাস্তবতায় দ্বিতীয় অংশ শিক্ষার অভাবে কিংবা তাদের জানার পরিসর কিংবা যুক্তির পরিসর ছোট হওয়ার ফলে যা দেখে সেটাকেই সঠিক বলে বিশ্বাস করে। এবং যার ফলে উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে যারা তথ্য প্রযুক্তির নেতিবাচক ব্যবহার করে থাকে তারা অনেকাংশে সফল হয়ে থাকে। কোটা সংস্কার আন্দলোন এবং নিরাপদ সড়কের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে বিএনপি-ছাত্রদল, জামাত-শিবির চক্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করছিল তা আপনাদের সকলের কাছেই স্পষ্ট।

স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি তাদের রাজনৈতিক পরিচয়ে যখন আর ফায়দা লুটতে পারছে না তখন তারা কৌশলে এগিয়ে যাচ্ছে। এরা এখন বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এবং অন্যান্য সংগঠন এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে কৌশলে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এদের কাজও হলো যে কোন মূল্যে তরুণ প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করে শান্তিপূর্ণ শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট করে সারা দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে সরকারকে বিপাকে ফেলা। শিবির-নেতা কর্মীরা তাদের এই ঘৃণ কাজ বাস্তবায়নের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং তাদের দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার এটি একটি অংশ। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন নামে গ্রুপ তৈরী করে সেখানে মেম্বার অ্যাড করে বৃহৎ বৃহৎ ভার্চুয়াল প্লাটফর্ম তৈরী করেছে।

এসকল গ্রুপে সাধারণত তারা সব সময় সরকার বিরোধী পোস্ট দেয় বিষয়টি এমন নয়। অপ্রাসঙ্গিক পোস্ট শেয়ার করে গ্রুপ মেম্বারদের মাঝে বোঝানোর চেষ্টা করে যে গ্রুপ গুলো নিরপেক্ষ। কিন্তু যখনই কোন সামজিক আন্দোলন শুরু হয় যৌক্তিক কোন দাবিকে সামনে রেখে ঠিক তখনই জামাত শিবির চক্র তাদের ভার্চুয়াল গ্রুপ গুলোতে সরকার বিরোধী পোস্ট শেয়ার করতে শুরু করে এবং গুজব ছড়িয়ে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়।

আসুন সমসাময়িক হেফাজতে ইসলামের ইস্যুতে কিছু বিষয়ে দৃষ্টিপাত করি। হেফাজতের যে সকল নেতারা ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে সহজ সরল মুসলমানদের বিভ্রান্ত করে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের নেশায় মত্ত হয়েছে তাদের মূল হাতিয়ার কী জানেন ? এদের মূল হাতিয়ার হলো অসহায় মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। এই সকল শিক্ষার্থীদের মাদ্রাসার পরিবেশ ছাড়া বাইরের পৃথিবী সম্পর্কে জানার সু্যোগ কম দেওয়া হয়। এমন ভাবে ইসলামের দোহাই দিয়ে এই শিক্ষার্থীদের ব্রেন ওয়াশ করা হয় যার ফলে শিক্ষার্থীরা তাদের অবচেতন মনে কোরআন এবং হাদিস থেকে কিছু হুজুরের মতামতকে বেশি প্রাধান্য দিতে শুরু করে। অর্থ্যাৎ হুজুর যা বলবেন তা মানলেই জান্নাত নিশ্চিত বিষয়টা এমন এবং হুজুরের কথায় যেন তারা জীবন দিতেও প্রস্তুত। হুজুরদের কথায় তারা রাস্তায় নামলো, গাড়ি পোড়ালো, রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট করলো। এখন কথা হলো তারা না হয় কতিপয় হেফাজতি হুজুরদের দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে ইসলাম অসমর্থিত ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত হচ্ছে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অন্যান্য অনলাইন প্লাটফর্ম গুলোতে কারা সক্রিয় সরকার বিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ?

যেটা ইতোমধ্যে বলেছি যে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি জনসমর্থনের অভাবে রাজপথে রাজনীতি করার যোগ্যতা হারিয়েছে ঠিকই কিন্তু তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে অনলাইনে গড়ে তুলেছে শক্তিশালী দূর্গ। এরা অনলাইনে যেকোন ইস্যুতে সরকার বিরোধী তথা রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড গুলোকে গতিশীল করার চেষ্টা করে চলেছে। এরা এমন একটি সংঘবদ্ধ চক্র যারা আপনার যেকোন যৌক্তিক পোস্টে তা যদি সরকারের পক্ষে যায় সেখানে ফেইক আইডি দিয়ে এমন ভাবে একের পর এক নেতিবাচক মন্তব্য করতে থাকবে যা আপনাকে মানসিকভাবে দূর্বল করে দিবে। যার ফলে আপনি পরবর্তীতে কোন যৌক্তিক পোস্ট করতে দশবার ভাববেন। অথবা আপনি যদি কোন পোস্টে সরকারের পক্ষে যায় এমন মন্তব্য করেন সেখানে এমন ভাবে সংঘবদ্ধভাবে সাইবার আক্রমণ করবে যা আপনাকে মানসিকভাবে দূর্বল করে দিবে।

আপনি কি জানেন কয়েকদিন আগেও বাংলাদেশ ব্যাংক সহ প্রায় দুই শতাধিক প্রতিষ্ঠানে সাইবার হামলা হয়েছে৷ আগে হতো ডাকাতি আর এখন হবে সাইবার হামলা। এভাবে কি কখনো ভেবে দেখেছেন ? যদি ভেবে থাকেন তাহলে ভালো আর যদি না ভেবে থাকেন তাহলে একবার চিন্তা করুন যে আগামী দশ বছর পরে প্রযুক্তির কতো নেতিবাচক ঘটনার মুখোমুখি হবার অপেক্ষায় আমরা। অথচ এই নেতিবাচক ঘটনা গুলো মোকাবেলা কর‍তে আমাদের ভূমিকা কী ?

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির এই অভূতপূর্ব সময়ে আগামী বাংলাদেশের জন্য সব থেকে বড় হুমকি হলো অনলাইনে সরকার বিরোধী এজেন্ডা বাস্তবায়নে নিযুক্ত এই পেইড স্বাধীনতা বিরোধী চক্র। এদের সাথে আমাদের পার্থক্য এরা জানে কখন কোথায় কি পোস্ট করতে হবে। এরা জানে কোন ইস্যুতে কোথায় কি পোস্ট বা মন্তব্য করতে হবে এবং কোন মন্তব্যের উত্তর কিভাবে দিতে হবে। আর আমরা অনলাইন প্লাটফর্ম গুলোকে ততটুকু ব্যবহার করি ঠিক যতটুকু আমাদের প্রয়োজন। তাই কোন ইস্যু তৈরী হলে আমরা আসলে বুঝে উঠতে পারিনা যে কোন ইস্যূতে কিভাবে কাজ করতে হবে, কি পোস্ট করতে হবে এবং তার ভাষাইবা কেমন হওয়া উচিৎ।

আপনি কি খেয়াল করেছেন ইদানীং সরকারের পক্ষে পোস্ট করলে এবং হেফাজতের কিছু নামসর্বস্ব হুজুর বা জামাত- শিবিরকে নিয়ে নেতিবাচক কোন পোস্ট করলে অনেক ক্ষেত্রে আপনার আইডি লক হয়ে যাচ্ছে বা ডিজেবল হয়ে যাচ্ছে নতুবা আইডি সিকিউরিটির অভাবে হ্যাক হয়ে যাচ্ছে। আপনার কি মনেহয় এই কাজ মাদ্রাসায় পড়া শিশুরা করছে ?

ভেবে দেখার সময় এসেছে.......

আসিফ তালুকদার, সাহিত্য সম্পাদক-বাংলাদেশ ছাত্রলীগ

সম্পাদক: ইসমাঈল হোসাইন রাসেল
যোগাযোগ: ক্যাম্পাস টাইমস
৪৩ শহীদ নজরুল ইসলাম সড়ক, হাটখোলা রোড, চৌধুরী মল, টিকাটুলি, ঢাকা-১২০৩
মোবাইল: ০১৬২৫ ১৫৬৪৫৫
ইমেইল:[email protected]