2235

সালমান মুক্তাদিরকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এনে সেমিনার করানো কতটুকু যুক্তিসংগত?

সালমান মুক্তাদিরকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এনে সেমিনার করানো কতটুকু যুক্তিসংগত?

2017-09-20 02:37:33

নুর হোসেইন নয়নঃ

সালমান মুক্তাদির। বাংলাদেশের প্রথম সফল ইউটিউবার। দেশে নতুন প্রজন্মের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়, নাটকের অভিনেতা, লাখ লাখ টাকা ইনকাম করা যুবক, একশ্রেণীর তরুণসমাজের আইকন। এসব সবই সত্য, তবুও একটা প্রশ্ন - দিনশেষে সালমান মুক্তাদিরের কাছ থেকে আমরা কি পাচ্ছি?

সালমান দেশের প্রথম সফল ইউটিউবার, কেউ না কেউ প্রথম ইউটিউবার হবেই। পৃথিবীর ইতিহাসে অনেকেই অনেক কিছুতে প্রথম হতে পারে। সেটা কোন ব্যাপার না, আসল ব্যাপার হলো- সে প্রথম হয়ে কি দিচ্ছে? সালমানের কিছু ভিডিও ও নাটক দেখেছি। থিম মোটামুটি একই, লুতুপুতু টাইপ। ভার্সিটিতে পড়ুয়া কিছু ছেলেমেয়ে, যাদের প্রধান কাজ একসাথে হ্যাং আউট আর ফান করা, ভার্সিটি থেকে বাসায় এসে ধুন্ধুমার মজা করা। এই লাইফে মজার কোন শেষ নাই, পুরোটাই মজা। পুরোটাই বাপের টাকার শ্রাদ্ধ করে মাস্তির লাইফ কাটানো। এই ভুল মেসেজটা দেশের প্রথম ইউটিউবারের কাছ থেকে কামনা করা হয় না। এই দেশের ভার্সিটিপড়ুয়া ছেলেমেয়েদের লাইফের বাস্তব কষ্টগুলো অনেক নিষ্ঠুর, নাটকের চাইতেও নাটকীয়।

সালমান মুক্তাদির দেশের অন্যতম জনপ্রিয় তরুণ। তাই বলে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বারবার এনে সেমিনার করানো কতটুকু যুক্তিসংগত? জনপ্রিয় তো হিরো আলমও, জনপ্রিয় কেকা ফেরদৌসিও কিংবা ড. মাহফুজুর রহমানও। তাই বলে হিরো আলমকে টেলিভিশন ফিল্ম এবং ফটোগ্রাফি বিভাগের সেমিনারে, কেকা ফেরদৌসিকে পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠা দিবসে আর মাহফুজুর রহমানকে সঙ্গীত বিভাগের নবীনবরণে আনা যায় না। যদি তাই হয়, জনপ্রিয়তাকে সর্বোচ্চ মাপকাঠি ধরে রাখা কিছু মানুষ তো তাহলে ভারতের একজন বিশ্ববিখ্যাত সেলেব্রিটিকেই এদেশে এনে সেমিনার করাবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী ইউটিউবার হতে চান, ইউটিউবার হতে চাওয়া পাপ না। লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীকে আলো দেখানো 10 minutes school এর আয়মান সাদিক কিংবা মজায় মজায় শেখার পথিকৃৎ বুয়েটের চমক হাসান এরাও ইউটিউবার। কিন্তু সালমানের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সালমানের মত ইউটিউবার হতে গিয়ে সস্তা জনপ্রিয়তা পেতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী যখন থার্ড ক্লাস "বাংলা ফানি ভিডিও" বানানোর চেষ্টা করেন অথবা -"রাস্তায় ছেলেটির...চেপে ধরলেন মেয়েটি" নামের প্র্যাংক ভিডিও বানান সেটা কষ্ট দেয়।

সালমান মুক্তাদির কথা বলার মত গুরুত্বপূর্ণ কোন বিষয় না। তাকে নিয়ে এত কথা বলার মানেও হয় না। কিন্তু কথাগুলো উঠছে কারণ অনেকের কাছেই তিনি আইকন। তার সমালোচনা অনেকেই নিতে পারেন না। অনেকেই হয়তো বলবেন, "এডমিন সাহেব, আপনি হিংসায় জ্বলে পুড়ে মরছেন কেন? সালমান মুক্তাদির চান্স পায়নি আর আপনি পেয়েছেন এ কারণে তাকে ছোট করবেন না। ১০০ টা নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন দাগিয়েই নিজেকে বড় ভাবছেন?।" তাদের জন্য আগেই বলে রাখি, রাজশাহীর পলান সরকারকে চেনেন নিশ্চয়ই, নিজের টাকায় বই কিনে রাজশাহীর গ্রামে গ্রামে এক বই বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছেন যে সাদামনের মানুষটি তিনি পড়াশোনা করেছেন ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত। ওনাকে যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আনা হয় আমি নিজে ওনার পা ধরে সালাম করব। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা চূড়ান্ত মাপকাঠি নয়, মনের শিক্ষাগত যোগ্যতাই আসল।

সালমান মুক্তাদিরের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কিছু বলার ইচ্ছা নেই, তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিনারে যদি কাউকেই আনতেই হয় তবে পলান সরকার, আয়মান সাদিক কিংবা চমক হাসানের মত এমন কাউকে আনুন যিনি এই বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীদের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলার যোগ্যতা রাখে। অবশ্যই "F..k Bangladesh" বলে স্ট্যাটাস দেয়া সালমান মুক্তাদিরের মত কাউকে আনবেন না যিনি এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের রিপ্রেজেন্ট করা তো দূরের কথা, নিজের দেশকে সম্মান করতেই জানেন না।

লেখক ঢাবির আইন বিভাগের শিক্ষার্থী 

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। ক্যাম্পাস টাইমস-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)

 এমএসএল 

সম্পাদক: ইসমাঈল হোসাইন রাসেল
যোগাযোগ: ক্যাম্পাস টাইমস
৪৩ শহীদ নজরুল ইসলাম সড়ক, হাটখোলা রোড, চৌধুরী মল, টিকাটুলি, ঢাকা-১২০৩
মোবাইল: ০১৬২৫ ১৫৬৪৫৫
ইমেইল:[email protected]