প্রেম বিলাসিতা || মেহেদী হাসান
2021-08-09 23:05:52
ইমির আজ খুব সকালে ঘুম ভাঙলো।চারদিক অন্ধকার, শীতের কুয়াশার আবরণ জমে আছে সমগ্র পৃথিবী ব্যাপী। ইমি সদ্য ইন্টার পাশ করেছে।সে ভাই বোনদের মধ্যে বড়।তাঁর দুই জন ছোট ভাই ও তিনজন ছোট বোন আছে।
ইমির বাবা সামান্য বেতনের সরকারি চাকরি করতো। বিদেশে যাবার চেষ্টা করে চাকরিটাই ছেড়ে দিয়েছে। এইদিকে ভিসার নাম গন্ধ নেই।
অন্যদিকে সংসার হলো এক সমুদ্রের মত।এর চাহিদার কোনো কূল কিনারা নেই।আট জনের পরিবার নিয়ে অনেক কষ্টের মধ্যে ইমির মা সংসার চালাতেন।
কিন্তু এখন উপায় কী?
ছেলে মেয়েরা বড় হচ্ছে।
আর সংসারের খরচ চক্র- বৃদ্ধি হারে বাড়ছে।
অন্য দিকে আয় রোজকারের খবর নেই।বিদেশে যাবার জন্য ৩ লক্ষ টাকা দিয়েছিল ইমির এক দূর সম্পর্কের মামার কাছে।এখন মনে হচ্ছে আসল টাকা পাওয়া যাবে না।শুধু শুধু তৈরী চাকরিটা গেল এবং তিন লক্ষ টাকাও নাই হল।
ইমির দুটি যমজ বোন আছে।আর ভাই দুটোর একজন ক্লাস সেভেন এবং ছোট মিয়া থ্রিতে পরে। আর যমজ বোনরা এবার এসএসসি দিবে।
এদিকে সংসারের খরচ এবং দোনার চাপে ইমির বাবা -মা প্রায় পাগলের মতো।
এখন প্রতিদিন মা-বাবার ঝগড়া হয়।মাঝে মাঝে হাতাতাতি পর্যন্ত যায়। তা দেখে ইমির খুব কষ্ট হয়।কারো নিকট বলা যায় না। ইমি মনে করে টাকার অভাব সব কিছুকেই শোষণ করে নেয়।
এখানে সংগীত কিংবা কবিতার ছন্দ শান্তি আনতে পারে না।
যমজ দুই বোনের পরীক্ষার ফ্রি ইমির মা অনেক কষ্ট করে জোগাড় করেছে। ইতোমধ্যে ইমির জন্য বিয়ের সম্বন্ধ আসতে শুরু হয়েছে। ইমি ভাই বোন বাবা- মার কষ্টের কথা বিবেচনা করে বিয়েতে রাজী হয়েছে। যদিও বরের বয়স বেশী।
ইমির বাবার মতে পুরুষের বয়স কোন ব্যাপার না।
কিন্তু ইমি মনে মনে ভাবে ৩৬৫ দিন তো নারী ও পুরুষের মধ্যে ফারাক নাই।
ইমি আরো অনেক কিছুই ভাবে।
কিন্তু ভেবে ভেবে কি লাভ।
ইমি একজনকে পছন্দ করে।কিন্তু সে মুখ দিয়ে বলতে পারবে না।কারণ সে যাকে পছন্দ করে তাঁর চাকরি নেই।ব্যবসা করারও তেমন পুঁজি নেই।ইমি মাঝে মাঝে তার নিকট গণিত কষতে যেত।ইমির মতে সে গাণিতিক বিষয় অনেক সহজে বুঝাতে পারলেও জীবনের গণিত তেমন করে অনেক কমই বুঝতেন। ইমি মনে করে সংসার তো আর গাণিতিক সমস্যা না,সংসারের জন্য দরকার টাকা।
আজ ইমিকে পাত্র পক্ষ দেখতে আসবে, মেয়ে পছন্দ হলে বিয়ে।
ইমির মধ্যে এই নিয়ে কোন আবেগ নেই,থাকবেইবা কেন,অভাবের নিকট আবেগের কোন মূল্য নেই।
আর গরীবের সন্তানের আবেগ হল ছেঁড়া পলিথিনের মতো। যার স্থান হয় মাটির ঘরে। এটাই হলো নিয়তি।
গত কাল বিকালে ইমি তাঁর পছন্দের মানুষের সাথে দেখা করে এসেছে। যদিও সে কোনো কথা বলেনি।
সকাল এগারোটা, ছেলে এবং তাঁর বড় বোন আসলো। ছেলের বড় বোন ইমিকে কুরবানীর গরুর মতো দাঁত, চোখ,পা, হাটার ধরণ দেখতে লাগলো। ইমির অনেক অনিচ্ছা থাকার পরও তা করতে হল।ইমি ইন্টারে এ প্লাস পাওয়া ছাত্রী।
ছেলের বোন ভাইয়ের অনেক গল্প করতে লাগলো। তাঁর ভাইকে বাবা-মা অনেক কষ্ট করে মানুষ করেছে।তাই তাঁর ভাইয়ের বউয়ের অনেক দায়িত্ব পালন করতে হবে।
ইমি মনে মনে ভাবে তাঁর বাবা-মা কী তাকে বাতাসের উপর বড় করেছে?
কী অদ্ভুত সমাজ?
মেয়েদের প্রতি সমাজের কী নিষ্ঠুর দৃষ্টিভংগি? মেয়েরা কী ছেলের অতীত নিয়ে আলাপ করতে পারে? আসলে অর্থনীতি অনেক বড় শক্তি। যাদের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা আছে তাঁরাই জীবনে স্বাধীন। হোক না সে ছেলে বা মেয়ে। সেটা সমস্যা নয়। কিন্তু মেয়েদের অর্থনৈতিক মুক্তি এক মহারণ। লেখাপড়া শেষ করাই যেখানে কঠিন সেখানে চাকরি বা ব্যবসা তো আর কঠিনতর ব্যাপার।
ইমি শান্ত ও ভদ্র মেয়ের মতো বসে আছে।
ছেলের বোন বলছে তাঁর ভাইয়ের পছন্দ হলে এবং মা-বাবা আর অন্যান্য আত্মীয়রা এসে দেখে পছন্দ হলে কোন এক ভাল দিন দেখে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করবে।
এই কথা শুনে ইমির মায়ের মাথায় হাত।
ইতোমধ্যে ধার করা টাকা শেষ, আরো মানুষ আসলে কী ভাবে ব্যবস্থা করবে?
হতাশ হয়ে ইমির মা ছেলের বোনের সাথে হাসিমাখা মুখে সম্মতি দেয়। কিন্তু তাঁর মাথায় সারাক্ষণ টাকার চিন্তা কাজ করছে?
ইমির ভালো লাগার প্রিয় মানুষ তাদের বাড়িতে আজ রাতে কিছু টাকা দিয়ে গেছে। ইমির মনে আছে সে ইন্টার পরীক্ষার সময় কিছু টাকা দিয়েছিল।আজ তাদের এই বিপদে সে আসছে,কিনতু তাকে আপন করতে নয়, পর করতে।
ইব্রা কী করবে?
সে সব বুঝে। কিন্তু নিয়তি তাঁর সাথে নেই। সে ইমির চাহনি দেখে সব বুঝতে পারে। যদিও কখনো সে ইমিকে বুঝতে দেয়নি।
ইব্রা তাঁর পরিবারের বড় ছেলে।ছোট বোন ও ভাই আছে। তাদের দেখতে হবে।বাবা নেই।তাই সে তাদের বাবার মতো। তাই তাঁর জীবনে প্রেম হল বিলাসিতা। কষ্ট হচ্ছে।
বুকের মধ্যে চিন চিন ব্যথা প্রবল থেকে প্রবলতর হচ্ছে।
এই ভেবে যে, ইমি বিয়ের পর তাঁর দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে থাকবে না।
তিন দিন পর ছেলের বাবা-মা এসে ইমিকে দেখে পছন্দ করলো।আসছে জুমাবার বিয়ে।
ইব্রা হাসিমুখে সব কাজ করে দিচ্ছে।
কিনতু তাঁর মনের মধ্যে এক সিডর বয়ে যাচ্ছে। আর নয়ন দুটিতেই যেন সুনামি টেউ।
ইমি আর ইব্রার হৃদয় না পাবার বেদনায় ক্ষত বিক্ষত।
দুই হৃদয়ে চলছে ফিশান।
যা অনবরত খন্ড বিখন্ড হচ্ছে।
ইমি আর ইব্রারা আসে শুধু গরীবের ছেলেমেয়ে হিসাবে অভিনয় করার জন্য।
প্রেম ভালবাসা তাঁদের জীবনে বিলাসিতা মাত্র।
একটি গাউনের কথন
কাফলাম-মীম ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী এক অনিন্দ্য সুন্দর গ্রাম। খেজুরের সারি সারি গাছ দেখে নয়ন জুড়িয়ে যায়।তামাসি এই গ্রামের এক যুবক।তাঁর পরিবারের সদস্য সংখ্যা সাত জন।বাবা-মা ছাড়াও রয়েছে তিন ভাই এবং দুই বোন।তামাসি ভাই বোনদের মধ্যে তিন নম্বর। বোন দুই জন বড়।তবে তামাসি ভাইদের মধ্যে বড়।এটি নিয়ে তামাসি গর্ব বোধ করে।
কারণ সে বড় বোনদের যেমন আদর পায় তেমনি ছোটদের শ্রদ্ধাও সে পায়।
তামাসির দিনকাল ভালোই যাচ্ছিল।
হঠাৎ করেই তামাসির জীবনে এক ধাক্কা আসে।তামাসির প্রতিবেশী রাজ্যের রাজা তাঁর বাবাকে জোড় করে তুলে নিয়ে যায়।কিন্ত তামাসি এর কোনো কারণ খুঁজে পায় না।এদিকে তামাসির মা,বোন ও ছোট ভাইদের কান্না থামছেনা।
তামাসি তাঁর এক মামার কাছ থেকে জানতে পারে তাঁর বাবা এক জন দেশপ্রেমিক, যার জন্য প্রতিবেশী হীরূ রাজ্যের রাজা তার বাবাকে আটক করে।তামাসি তাঁর মামার কাছ থেকে আরো জানতে পারে যে , প্রতিবেশী হীরূ রাজ্যের মানুষদের তামাসির দাদার বাবা আশ্রয় দিয়েছিল।
তামাসির মামা এক জন স্কুল শিক্ষক।যার জন্য তামাসির মামা তামাসিদের রাজ্যের অনেক ঘটনা জানেন।তিনি তামাসিকে বলেন,তামাসিদের পূর্বপুরুষদের অবস্থা ভালোই ছিল।তারা ছিল শান্তি প্রিয়।খেজুর বাগান ছিল তাদের প্রধান পেশা। কী এক ঘটনার ফলে অনেক মানুষ তামাসিদের রাজ্যে এসে আশ্রয় নেয়।ধীরে ধীরে এই আশ্রিতরা একত্রিত হয়ে হীরূ রাজ্য জোড় করে গঠন করে।তখন প্রায় হীরূ রাজ্যের মানুষদের সাথে তামাসিদের রাজ্যের মানুষদের হাতাহাতি ,মারামারি এমনকি যুদ্ধ হত। কোন এক যুদ্ধে তামাসির দাদা নিহত হন।সেই বার অনেক মানুষ নিহত হন।যারা নিহত হত তাদের দেশপ্রেমিক নামে ডাকা হয়। আর তখন থেকেই তাদের বাড়ি দেশপ্রেমিক বাড়ি নামে পরিচিতি পায়।
এখন তামাসি বুঝতে পারছে দেশপ্রেমিক কী বিষয়। কেন তাঁর বাবাকে হীরূ রাজার সেনারা ধরে নিয়ে গেছে।
তামাসির মন এখন অনেক বদলে গেছে। সে এখন বুঝতে পারছে কেন তাঁর গ্রামের মানুষ এত কষ্ট করে।কেন তাঁরা নিজের গ্রামে স্বাধীন ভাবে চলতে পারে না।কেন হীরূ রাজ্যের সেনারা তাদের অত্যাচার করে।কেন হীরূ রাজ্যের সেনারা তাদের বিশ্বাসের (ধর্মের) মানুষদের মেরে ফেলে। তাদের পবিত্র প্রার্থনা গৃহে যেতে বাঁধা দেয়। এমন কি তাদের অত্যাচার থেকে নারী ও শিশুরা পর্যন্ত রক্ষা পায় না।
এরই মধ্যে তামাসি জানতে পারে তাঁর বাবাকে হীরূ রাজ্যের সেনারা মেরে ফেলেছে।
এরপর থেকে তামাসির উপর তাঁর পরিবারের দায়িত্ব অর্পিত হয়। তামাসি অধিক আয়ের জন্য ভূমধ্যসাগর পারি দিয়ে নীল শাম দেশে যায়।
তামাসি মতে শাম দেশ অনেক সুন্দর। শামের গ্রাম তাঁর নিজের গ্রামের মত।কিন্তু এখন শাম এর আবস্থা ভালো না।শামের রাজাকে মারার জন্য হীরূ রাজ্য চেষ্টা করছে।আর হীরূ রাজ্যকে সাহায্য করছে বড় অমীক রাজ্য।অমীক রাজ্য অনেক শক্তিশালী।
তামাসির দাদার সময় থেকে অমীক রাজ্য হীরূদের সাহায্য করে আসছে যা এখনও চলমান। অমীকদের দরকার তেল,যার জন্য তারা হীরূদের সাহায্য করে।ফলে অমীক রাজ্য তামাসিদের রাজ্যসহ সারা দুনিয়া শাসন করতে পারবে।
তামাসি জানতে পেরেছে যে তেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়, বড় কারখানা চলে।
শাম দেশের উপর অমীক রাজ্য হামলা করতে চায়।গত কয়েক বছর যাবত শাম দেশে অনেক মানুষ মারা গেছে। শাম দেশে তামাসির এক বন্ধু হয়েছে। তাঁর নাম তাকলি।তাকলি বাবা-মা বেঁচে নেই।তাই তামাসি, তাকলির কষ্ট বুঝে।
শামদেশে এখন যুদ্ধ চলছে।তামাসি ও তাকলি পরস্পরকে ভালোবাসে।তারা ধ্বংসের মধ্যে শান্তি চায়।তামাসি ও তাকলি দিন রাত কাজ করে পয়সা আয় করে।তাঁরা দুইজন সিদ্বান্ত নেয় আসছে ২২ ডিসেম্বর তাঁরা বিয়ে করবে।এজন্য তাঁরা শাম দেশ থেকে তামাসির দেশে আসে।তামাসির পরিবারের মধ্যে অনেক দিন পর খুশির উপলক্ষ এসে উপস্থিত হয়েছে। কিন্তু বিধাতার হিসাব অনেক রহস্যময়। হঠাৎ করে হীরূ রাজ্যের সেনারা তামাসিদের গ্রামে আক্রমণ করে।যার ফলে তামাসিদের বাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়।তামাসি, তাকলির জন্য একটা বিয়ের গাউন কিনেছিল।কিন্তু হীরূ সেনাদের আক্রমণের ফলে এই গাউনটা শুধু তামাসিদের বাড়িতে ঝুলে ছিল।ময়লা একটি গাউন আর চারদিকে ধ্বংস লীলা, মৃত্যু এবং আহাজারি। আর এটাই তামাসি ও তাকলিদের প্রতিদিনের জীবন। যেখানে প্রতিদিনের বেঁচে থাকাটা হাজার বছরের সমতুল্য। কাফলাম- মীম বাসী দীর্ঘ দিন যাবত ক্লান্ত। তাঁরা শান্তি চায়। কিন্তু এই শান্তি কত দূর?
সাড়া
সর্বত্রই আমি যপি শুধু তোমার নাম
যপে হই না কখনো আমি হয়রান
কৃষ্ণ ছায়ার তলে
গভীর থেকে গভীরে
তুমি আছ হৃদয় মাজার জুড়ে
দাও না সাড়া ওগো তুমি
তোমার পূজা দিব সকলি সর্বকাল ব্যাপি
নয়নের জলে,অবনত মস্তিষ্কের সম্ভাষণে
তোমায় আমি ডাকি প্রতিক্ষণে ক্ষণে
অদ্রি থেকে অদ্রিতে
সবুজের গিলাফে
কৃষ্ণ শিলার চুমুতে
যতোই আমি যাই হৃদয় আমার পূর্ণ হয়
পূণ্যতে
আমার সকল পাপ তুমি মোচন করো হে
আমার সকল পাপ তুমি মোচন করো হে
মোঃ মেহেদী হাসান
৩৬তম বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা)
প্রভাষক (রসায়ন বিভাগ)
ব্রাহ্মাণবাড়িয়া সরকারি কলেজ।