23394

কঠোর নজরদারিতে আনা হচ্ছে বুয়েট ক্যাম্পাসকে

কঠোর নজরদারিতে আনা হচ্ছে বুয়েট ক্যাম্পাসকে

2021-12-19 08:48:27

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের দু'বছরের মাথায় ক্যাম্পাসকে উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে কড়া নজরদারির আওতায় আনার উদ্যোগ নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে নিজ হল শেরে বাংলা হলে রাতভর নির্যাতন করে হত্যা করে বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী। ওই ঘটনায় সম্প্রতি বুয়েটের ২০ বহিষ্কৃত ছাত্রের মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছে আদালত।

ভবিষ্যতে এ ধরনের নির্যাতনের ঘটনা বন্ধ করতে এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ও হলগুলোতে এক্সেস কন্ট্রোল এবং ইমার্জেন্সি এলার্ম সিস্টেম চালু করবে বুয়েট কর্তৃপক্ষ। সব শিক্ষার্থীকে ইউনিফাইড স্মার্ট আইডি কার্ড সরবরাহের কথাও ভাবা হচ্ছে। এছাড়াও পুরো ক্যাম্পাসকে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা করেছে কর্তৃপক্ষ।

ইতোমধ্যেই কর্তৃপক্ষ এ পরিকল্পনাগুলোর খসড়া প্রস্তুত করেছে এবং কয়েকটি প্রকল্প প্রণয়ন করেছে।

বুয়েটের ইন্সটিটিউট অব ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকশন টেকনোলজির পরিচালক অধ্যাপক মো. রুবাইয়াত হোসাইন মণ্ডল বলেন, "আমরা এমন একটি নিরাপদ বুয়েট ক্যাম্পাসের কথা ভাবছি যেখানে শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে।"

প্রকল্পগুলোর সমন্বয়কারী হিসেবে অধ্যাপক মণ্ডল মনে করেন যে এগুলো বাস্তবায়িত হলে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে।

তিনি আরও জানান যে, বাজেট পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে কাজ শুরু করে দেবেন। খুব শীঘ্রই ফান্ডিং পাবেন বলে তার আশা।

বাংলাদেশে প্রকৌশল শিক্ষার প্রধান বিদ্যায়তন হিসেবে ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় বুয়েট। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির ১৮টি ডিপার্টমেন্টে প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন।

প্রকল্পগুলোর খসড়ানুসারে আগামী তিন মাসের ভেতর এলার্ম কন্ট্রোল সিস্টেম এবং ছয় মাসের মধ্যে এক্সেস কন্ট্রোল সিস্টেম চালু করা হবে বলে আশা করেন এই অধ্যাপক।

প্রথমদিকে আটটি আবাসিক হল ও একাডেমিক ভবনগুলোতে এ সিস্টেমগুলো চালু করা হবে। ধীরেধীরে অন্যান্য জায়গাগুলোতেও এগুলো চালুর পরিকল্পনা করা হয়েছে।

প্রতিটি হলের সামনে চারটি করে গেট স্থাপনের পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। দুটো সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য, একটি শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধীদের জন্য। আরেকটি গেট রাখা হবে ইমার্জেন্সি এক্সিট হিসেবে। ২৪ ঘন্টা সেখানে নিরাপত্তা প্রহরী নিযুক্ত থাকবে।

শুধুমাত্র আবাসিক শিক্ষার্থী, দ্বায়িত্বশীল শিক্ষক ও নিরাপত্তা কর্মীরাই কার্ড পাঞ্চ করে হলের ভেতর প্রবেশ করতে পারবেন। কোনোপ্রকার গেস্ট বা আত্মীয়-স্বজন এমনকি রক্তের সম্পর্কের কেউও হলে অবস্থান করতে পারবে না। শিক্ষার্থীরা অতিথিকক্ষ বা গেস্টরুমে তাদের আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে পারবে। প্রত্যেকটি হলে গেট স্থাপনসহ আনুষঙ্গিক এ কাজগুলো বাবদ হলপ্রতি প্রায় ২০-২৫ লাখ টাকা করে প্রয়োজন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, হলের গেস্টরুম, ক্যাফেটেরিয়াসহ প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় 'প্যানিক বাটন' স্থাপনের কথা ভাবা হচ্ছে। এ বাটনগুলো

কোনোপ্রকার গেস্ট বা আত্মীয়-স্বজন এমনকি রক্তের সম্পর্কের কেউও হলে অবস্থান করতে পারবে না। শিক্ষার্থীরা অতিথিকক্ষ বা গেস্টরুমে তাদের আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে পারবে। প্রত্যেকটি হলে গেট স্থাপনসহ আনুষঙ্গিক এ কাজগুলো বাবদ হলপ্রতি প্রায় ২০-২৫ লাখ টাকা করে প্রয়োজন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, হলের গেস্টরুম, ক্যাফেটেরিয়াসহ প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় 'প্যানিক বাটন' স্থাপনের কথা ভাবা হচ্ছে। এ বাটনগুলো সরাসরি ইমার্জেন্সি এলার্ম সিস্টেমের সাথে সংযুক্ত থাকবে এবং কর্তৃপক্ষের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধায়নে পরিচালিত হবে। কোনো শিক্ষার্থী কোনো বিপদে পড়লে বা যদি কেউ তাকে র্যাগিং বা লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করে তবে সে বাটনটি চেপে কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে সজাগ করতে পারবে। এ সিস্টেমটি চালু করতে হলপ্রতি ৪ থেকে ৪.৫ লাখ টাকার প্রয়োজন।

শিক্ষার্থীদের জন্য ইউনিফাইড আইডি কার্ড

খসড়া প্রস্তাবে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে একটি ইউনিফাইড স্মার্ট আইডি কার্ড সরবরাহের কথা বলা হয়েছে। এটির সাহায্যে তারা লাইব্রেরি ও হলে প্রবেশ করতে পারবে এবং মেডিকেল সেন্টারে সেবাগ্রহণ করতে পারবে। সকল প্রকার প্রাতিষ্ঠানিক কাজে তাদের এ কার্ড ব্যবহার করতে হবে।

কর্তৃপক্ষ এক্সেস কন্ট্রোল সিস্টেমের আওতায় এ কার্ডগুলোর অবস্থান শণাক্ত করতে পারবে। এতে কোন শিক্ষার্থী হল, মেডিকেল সেন্টার বা লাইব্রেরিতে আছে কিনা সেটি কর্তৃপক্ষ খুব সহজেই জানতে পারবে।

কেন্দ্রীয়ভাবে সিসিটিভি নিয়ন্ত্রণ

নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কর্তৃপক্ষ পুরো বুয়েট ক্যাম্পাস শক্তিশালী সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা করেছে। একটি কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেল গঠনের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যাদের কাজ হবে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ অন্যান্যদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা এবং অনাকাঙ্খিত কিছু ঘটার আগেই তা কর্তৃপক্ষকে জানানো এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক (ডিএসডব্লিউ) ড. মিজানুর রহমান বলেন, "আবরার ফাহাদের ঘটনাটি আমাদের জন্য অত্যন্ত তিক্ত একটি অভিজ্ঞতা। এখন আমরা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার ব্যাপারে ব্যাপকমাত্রায় চিন্তিত।"

তিনি আরো জানান, "আমরা ক্যাম্পাসের ডিজিটালাইজকরণে যা যা পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন, তা দ্রুততম সময়ের মধ্যে করব। নতুন যে সিস্টেমগুলোর কথা বলা হয়েছে, তার যথাযথ তদারকির জন্য অতিদ্রুত দক্ষ কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হবে।"

 

সম্পাদক: ইসমাঈল হোসাইন রাসেল
যোগাযোগ: ক্যাম্পাস টাইমস
৪৩ শহীদ নজরুল ইসলাম সড়ক, হাটখোলা রোড, চৌধুরী মল, টিকাটুলি, ঢাকা-১২০৩
মোবাইল: ০১৬২৫ ১৫৬৪৫৫
ইমেইল:[email protected]