আফ্রিকার দেশগুলোতে একের পর এক সেনা অভ্যুত্থান
2023-09-03 13:43:49
আফ্রিকার দেশ গ্যাবনের সামরিক অভ্যুত্থানই এখন পর্যন্ত বিশ্বের সর্বশেষ অভ্যুত্থান। নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে দেশটির সেনাবাহিনী এক রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছে গত ৩০ আগস্ট। ইতিহাস বলছে, ১৯৫০ সালের পর থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৪৮৮টি অভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটেছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের কোথায় কত অভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটেছে তাই নিয়েই আমাদের আজকের আয়োজন।
সামরিক অভ্যুত্থানের সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটেছে আফ্রিকার দেশ গ্যাবনে। তার অল্প কয়েক দিন আগেই আফ্রিকারই আরেক দেশ নাইজারে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে। গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে আফ্রিকারই আরেক দেশ বুরকিনা ফাসোতে ক্ষমতা গ্রহণ করে সেনাবাহিনী। ২০২১ সালে আফ্রিকার আরও ৩ দেশ—গিনি, শাদ এবং সুদানে অভ্যুত্থান ঘটে। তার আগের বছর একই ঘটনা ঘটে মালিতে। সব মিলিয়ে সাম্প্রতিক বিবেচনায় বলা যায়, আফ্রিকার দেশগুলোতেই সামরিক অভ্যুত্থানের হার বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব সেন্ট্রাল ফ্লোরিডার অধ্যাপক জোনাথন পাওয়েল এবং ইউনিভার্সিটি অব কেনটাকির ক্লেটন থাইনের এক গবেষণা বলছে, ১৯৫০ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত মোট ৪৮৮টি অভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘটেছে আফ্রিকায়—মোট ২১৬টি। এর মধ্যে ১০৮টি অভ্যুত্থানই ছিল সফল।
জোনাথন পাওয়েল ও ক্লেটন থাইনের গবেষণা বলছে, এই ৭৩ বছরে আফ্রিকার ৫৪টি দেশের মধ্যে ৪৫টি দেশেই অভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটেছে। কোনো কোনো দেশে একাধিকবারও অভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটেছে। বুরকিনা ফাসোতে সবচেয়ে বেশিবার ক্ষমতা দখল করেছে সেনাবাহিনী। সুদান, বেনিন এবং নাইজেরিয়ায় ঘটেছে ৬ বার করে। মালি, মৌরিতানিয়া, ঘানা এবং বুরুন্ডিতে ঘটেছে ৫ বার করে।
অঞ্চল হিসেবে সবচেয়ে বেশি অভ্যুত্থান ঘটেছে আফ্রিকায়। বিগত ৭৩ বছরে আফ্রিকার ২১৬ বার সেনা অভ্যুত্থান হয়েছে। এর মধ্যে সফল ১০৮ টি। এর পরেই রয়েছে লাতিন আমেরিকা। অঞ্চলটিতে ১৪৬টি অভ্যুত্থানের মধ্যে ৭০টি সফল হয়েছে। এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোতে ৪৯টি সেনা অভ্যুত্থানের ২৭টি সফল হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে ৪৪ টির বিপরীতে সফল হয়েছে ২২ টি। ইউরোপের এই সংখ্যা যথাক্রমে ১৭ এবং ৮। অঞ্চল হিসেবে সবচেয়ে কম সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ায়। এই অঞ্চলের ৮টি দেশে মোট ১৬ বার অভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১০টি প্রচেষ্টাই সফল হয়েছে, ব্যর্থ হয়েছে মাত্র ৬ টি।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আফ্রিকায় সবচেয়ে বেশি অভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে নিকটতম অভ্যুত্থানগুলোর সময়কাল নিচে উল্লেখ করা হলো—
গ্যাবন: ২০২৩ সালের ৩০ আগস্ট নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট আলী বঙ্গোকে এক হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনী।
নাইজার: ২০২৩ সালের ২৬ জুলাই নাইজারের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজুমেকে ক্ষমতাচ্যুত করে গৃহবন্দী করে দেশটির সেনাবাহিনী।
বুরকিনা ফাসো: ২০২২ সালের প্রথম মাসেই অর্থাৎ জানুয়ারিতে দেশটির প্রেসিডেন্ট রোচ কাবোরকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ইব্রাহিম ত্রাওরে।
শাদ: ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে আফ্রিকার দেশ শাদের ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। সে সময় দেশটির প্রেসিডেন্ট ইদ্রিস ডেবি বিদ্রোহ কবলিত অঞ্চল পরিদর্শনের সময় সেনা বিদ্রোহে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।
গিনি: একই বছরে অর্থাৎ ২০২১ সালে গিনির ক্ষমতা দখল করেন দেশটির সেনাবাহিনীর কর্নেল মামাদি দম্বুয়া। সে সময় ক্ষমতাচ্যুত হন দেশটির প্রেসিডেন্ট আলফা কোন্ডে।
সুদান: ২০২১ সালের অক্টোবরে দেশটির সেনাপ্রধান জেনারেল আব্দেল ফাত্তাহ আল-বুরহান দেশটির শাসন কাউন্সিলকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করে নেন। দেশটি এখন গৃহযুদ্ধের মধ্যে রয়েছে।
মালি: এই অঞ্চলে নিকটের অতীতে অর্থাৎ ২০২০ সালের আগস্টে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে মালিতে। দেশটির সেনাবাহিনীর একদল কর্নেল প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম বুবাকার কেইতাকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করে। এই অভ্যুত্থানের পর আসিমি গইতাকে দেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পরে পাল্টা এক অভ্যুত্থানে আসিমি দেশের প্রেসিডেন্টে পরিণত হন।
তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা ও ওয়াশিংটন পোস্ট