রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন ফি কমানোর দাবি
2023-09-07 00:52:04
আগামী নভেম্বরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বাদশ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যে, বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সমাবর্তনে রেজিস্ট্রেশনের সময়, ফি এবং যোগ্যতা নির্ধারণ করে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, স্নাতক সম্পন্নকারী শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করতে পারবেন না এবং রেজিস্ট্রেশন ফি পাঁচ হাজার টাকা। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরপরই এই দুটি বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ জানাচ্ছেন সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরা। স্নাতক সম্পন্নকারী শিক্ষার্থীদের সমাবর্তনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া এবং অর্থনৈতিক মন্দার কথা তুলে ধরে সমাবর্তন ফি কমানোর দাবি জানাচ্ছেন তারা।
গত ৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, নভেম্বর মাসে সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হবে। সভাপতিত্ব করবেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. সাহাবুদ্দিন। সমাবর্তনের রেজিষ্ট্রেশন ফি পাঁচ হাজার টাকা। ২০১৭ ও ২০১৮ সালের স্নাতকোত্তর, এমবিবিএস, বিডিএস ও ডিভিএম এবং ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এমফিল, এমডি ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনকারীগণ অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে রাবির একাদশ সমাবর্তনে ফি নির্ধারণ করা হয়েছিলো তিন হাজার ৫৭০ টাকা। ওইবারও নিবন্ধন ফি বেশি হওয়ায় অর্ধেকেরও কম গ্র্যাজুয়েট অংশ নিয়েছিলেন। এছাড়া, একাদশ সমাবর্তনের পর ২০২০ সালের ২৭ অক্টোবরে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ২৫২তম সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক পাস শিক্ষার্থীরাও সমাবর্তনে অংশ নিতে পারবেন।
স্নাতক সম্পন্নকারীদেরও সমাবর্তনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া উচিত জানিয়ে ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী কাদির স্বচ্ছ বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্ম ১৯৫৩ সালে এবং এই ২০২৩ সালে এসেও বিশ্ববিদ্যালয়টি ১৯৫৩ সালেই পড়ে আছে। চার বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার পরেও একজন সমাবর্তনে আসতে পারবে না, কিন্তু সামান্য একটা সন্ধাকালীন মাস্টার্স করলেই আসতে পারবে! এসব আজগুবি ও হতাশাজনক নিয়মকানুন কর্তৃপক্ষের অদূরদর্শিতাকেই নির্দেশ করে।
ফিসারিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহাবুবুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী করা বাধ্যতামূলক নয়। সুতরাং, স্নাতক পাশ করে সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ না দেয়া দুঃখজনক। এই সুযোগ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পেয়ে থাকে। স্নাতক সম্পন্নকারীদের সমাবর্তনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া বিষয়ে একাডেমিক কাউন্সিলের পূর্বের সিদ্ধান্তকে এড়িয়ে যাওয়া সম্মানজনক হবে কি? তৎকালীন একাডেমিক কাউন্সিলের ঐ সিদ্ধান্ত বর্তমান সম্মানিত বয়োজ্যেষ্ঠ অধ্যাপকগণই নিয়েছিলেন, কেউ বিরোধিতা করেননি। বর্তমান সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।
রেজিস্ট্রেশন ফি কমানো উচিত জানিয়ে আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের রেজওয়ান গাজী মহারাজ বলেন, রাজশাহীর যে অর্থনৈতিক অবস্থা, তাতে এখানে পড়াশোনা করে থাকা-খাওয়াই কষ্টকর। সেখানে শিক্ষার্থীদের জন্য পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করাটা অসম্ভব ব্যাপার। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হাতে যেহেতু সময় আছে, সেহেতু তাদের সব কিছু বিবেচনা করে স্নাতকদের অংশগ্রহণ ও রেজিষ্ট্রেশন ফি কমিয়ে সকল শিক্ষার্থীদের সুযোগ করে দেয়া উচিৎ।
সাবেক শিক্ষার্থী শিহাবুল ইসলাম ব্যাঙ্গ করে বলেন, ৫ হাজার টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কি আরও দুটো ভবন তুলবে?
এবিষয়ে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, স্নাতকের সমাবর্তন প্রসঙ্গে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের যে সিদ্ধান্তটি ছিল, সেটি তখনকার প্রেক্ষাপটে নেয়া হয়েছিল। আমরা এখনকার পরিস্থিতির উপর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কোনো এক অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত সারাজীবন বহাল থাকবে, এমন কোনো বিধি নেই। সমাবর্তন নিয়ে বড় একটি কমিটি কাজ করে, সেখানেই এই সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয়। এককভাবে এখানে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই।