30324

গণিত বইয়ের শ্রমিকেরা অর্ধেক কাজ করে চলে যেত কেন

গণিত বইয়ের শ্রমিকেরা অর্ধেক কাজ করে চলে যেত কেন

2024-05-27 23:07:21

শৈশবের যোগ-বিয়োগের কাটাকাটি সেরেছেন আর শ্রমিকেরা অর্ধেক কাজ রেখে চলে যাওয়ার অঙ্ক কষেননি, এমন কেউ নেই।

শুধু তা–ই নয়, ছাত্রাবাসের ছাত্ররা হুটহাট কোথায় চলে যেত, আবার নতুন ছাত্র আসত, তাদের খাওয়াদাওয়ার খরচের হিসাব রেখেছি আমরা। আবার কোনো এক বোকা চৌবাচ্চার একটি নল দিয়ে পানি ভরে আবার আরেকটি নল খুলে রেখে দেয়। এদিকে মাঝি তার নৌকা নিয়ে স্রোতের প্রতিকূলে দাঁড় বেয়ে ঠিক কোথায় যেত, সেই হিসাবও মিলে না আমাদের।

এখন প্রশ্নটি হচ্ছে এগুলো কি নিতান্তই মজার ছলে অঙ্ক কষার জন্য? উত্তরটি হচ্ছে ‘না’। শৈশবের পাঠ্যবইয়ের এসব অঙ্ক নিয়ে আমাদের এই প্রজন্মের এখন বিনোদনের খোরাক হলেও এর পেছনে রয়েছে নিগূঢ় বাস্তবতা।

কথা বলা যাক অর্ধেক শ্রমিকের কাজ রেখে চলে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে। হিউম্যান রিসোর্সের ভাষায় এটিকে বলে ‘এমপ্লয়ি টার্নওভার’। অর্থাৎ টার্নওভার বলতে এমন কর্মীদের বোঝায়, যাঁরা তাঁদের কর্মরত প্রতিষ্ঠান ছেড়ে চলে যান। টার্নওভারের হার হলো মোট কর্মীর শতাংশ, যাঁরা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠান থেকে চলে যান। বৃহত্তর ইন্ডাস্ট্রিগুলো একটি আর্থিক বা ক্যালেন্ডার বছরে তাদের টার্নওভারের হার পরিমাপ করে থাকে।

বাংলাদেশ তথা এশিয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এমপ্লয়ি টার্নওভার যেন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। এটি অনেক দেশের এইচআর ম্যানেজারদের ঘুমহীন রাত দিচ্ছে। কর্মী ধরে রাখার তুলনায় কর্মী প্রতিস্থাপন বেশি ব্যয়বহুল। এ জন্য পুরো নিয়োগপ্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করতে হয়। ফলে সময় ও অর্থ দুটিই বেশি খরচ হয়। একসঙ্গে অনেক কর্মী কাজ ছেড়ে গেলে প্রতিষ্ঠানের ওপরও অনেক বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

আমাদের পাঠ্যবইয়ের শ্রমিকদের চলে যাওয়াটা এখান থেকেই বাস্তবতার আলোকে আনীত। এখন আসা যাক কেন তাঁরা চলে যান। কর্মীরা যখন তাঁর কর্মরত প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে বেশি বেতন পান, তখন চলে যান। আবার প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ নানা অসন্তোষের ফলও তাঁদের চলে যাওয়া।

অনেক প্রতিষ্ঠানপ্রধান স্বল্প বেতনে অধিক কাজ করিয়ে নিতে চান। তখন উপায়ান্তর না দেখে শ্রমিকেরা কাজ ছেড়ে দেন। আবার কোনো কোনো কাজে পদোন্নতির সুযোগ কমই থাকে কিংবা জটিল প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়, তখন ভালো সুযোগ-সুবিধা ও পদোন্নতি পেতে কর্মীরা অন্য প্রতিষ্ঠানে চলে যান। কর্মী টার্নওভারের জন্য দায়ী এ রকম অগণিত কারণ আছে।

কর্মীদের টার্নওভার সংস্কৃতি কমিয়ে আনতে এর কারণ উদ্‌ঘাটন করতে হবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রথমত, প্রতিযোগিতামূলক বেতন ও সুবিধাদি প্রদান করে কর্মীদের সন্তুষ্টি নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কর্মীরা যদি মনে করেন তাঁদের পরিশ্রমের যথার্থ মূল্যায়ন করা হচ্ছে, তাহলে তাঁরা প্রতিষ্ঠানের প্রতি আরও বিশ্বস্ত ও নিবেদিত থাকবেন।

দ্বিতীয়ত, একটি সহায়ক ও বন্ধুত্বপূর্ণ কর্মপরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন। যেখানে কর্মীরা স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারেন, তাঁদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সমঝোতার সম্পর্ক বজায় থাকে, সেখানে কর্মীরা অনেক বেশি উৎপাদনশীল ও সুখী থাকেন। তৃতীয়ত, নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও উন্নয়নের সুযোগ দিতে হবে। এর ফলে কর্মীদের দক্ষতা বাড়বে এবং তাঁরা ক্যারিয়ার উন্নয়নে উৎসাহী হবেন।

কর্মীদের ভালো কাজের স্বীকৃতি প্রদান এবং পুরস্কৃত করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি তাঁদের মনোবল বৃদ্ধি করে এবং প্রতিষ্ঠান থেকে তাঁদের বিচ্ছিন্ন হওয়ার প্রবণতা কমায়। পাশাপাশি কর্মজীবন ও ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে ভালোভাবে ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করা উচিত।

এ ছাড়া সুবিধাজনক কর্মঘণ্টা, ছুটির সুবিধা ও নানা প্রণোদনাসহ বাস্তবসম্মত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। এর ফলে প্রতিষ্ঠান ও কর্মীদের মধ্যে একটি শক্তিশালী ও দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক গড়ে তোলা সহজ হবে। ফলে গণিত বইয়ের শ্রমিকেরা থাকুক বা না থাকুক আপনার প্রতিষ্ঠানের কর্মী টার্নওভার কমানোর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করা সম্ভব হবে।

তামান্না আক্তার
শিক্ষার্থী
ম্যানেজমেন্ট বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

সম্পাদক: ইসমাঈল হোসাইন রাসেল
যোগাযোগ: ক্যাম্পাস টাইমস
৪৩ শহীদ নজরুল ইসলাম সড়ক, হাটখোলা রোড, চৌধুরী মল, টিকাটুলি, ঢাকা-১২০৩
মোবাইল: ০১৬২৫ ১৫৬৪৫৫
ইমেইল:[email protected]