30502

সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যাচ্ছে বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষকরা

সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যাচ্ছে বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষকরা

2024-06-25 18:45:43

সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয় স্কিম’ থেকে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে জারি করা প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের,বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বেতন সুপার গ্রেড ও স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তনের দাবিতে শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) শিক্ষক সমিতি।

আজ মঙ্গলবার (২৫ জুন) দুপুর ১২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ভার্চুয়াল এক মিটিংয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয় স্কিম’ থেকে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে জারি করা প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবিতে অনড় অবস্থানে রয়েছেন দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। গত দু’মাস ধরে বিবৃতি, সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদান ও অবস্থান কর্মসূচির পরও এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের উদ্যোগ না নেওয়ায় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতৃত্বে এবার কঠোর অবস্থানে যাচ্ছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ।

অনানুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতারা শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসেনি। এমতাবস্থায় ১ জুলাই থেকে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করা হবে বলে জানা গেছে। তারই ধারাবাহিকতায় বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছে।

এ অবস্থায় আসন্ন জুলাই মাসের শুরু থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ হয়ে অচল অবস্থার মধ্যে পড়তে যাচ্ছে দেশের উচ্চশিক্ষার অন্যতম এই প্রতিষ্ঠান।

গ্রীষ্মকালীন ও ঈদের দীর্ঘ ছুটির পর শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরতে শুরু করলেও ক্লাস-পরীক্ষা না হওয়া নিয়ে রয়েছেন দুশ্চিন্তায়। আবার অনেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট ফিরতে পারে বলে মনে করছেন।

জানা যায়, গত বছরের আগস্টে চালু হওয়া সর্বজনীন পেনশনে নতুন প্রত্যয় স্কিম যুক্ত করেছে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ। গত ১৩ মার্চ এ নিয়ে দু’টি পৃথক প্রজ্ঞাপনে প্রত্যয় স্কিমের রূপরেখা ঘোষণা করা হয়। পরে ২০ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নতুন এ স্কিমের বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়। এরপর তিন দাবিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করে।

তাদের তিনটি দাবি হলো, গত ১৩ মার্চ অর্থমন্ত্রণালয় কর্তৃক জারি করা প্রত্যয় স্কিমের পেনশন বিষয়ক বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন।

এ তিনটি দাবির কোনোটি সরকার থেকে এখন পর্যন্ত মানা হয়নি। তাই শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন আন্দোলন চলমান রেখেছে।

তিন দাবিতে বিবৃতি দেওয়া, গণস্বাক্ষর সংগ্রহ, মানববন্ধন, স্মারকলিপি দেওয়া এবং অবস্থান কর্মসূচির মতো শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হলেও এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। দু’পক্ষের অনড় অবস্থানের কারণে অচল অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে।

শিক্ষকদের দাবি, প্রস্তাবিত প্রত্যয় স্কিম বাস্তবায়ন হলে বর্তমান শিক্ষার্থী যারা আগামী দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় আসতে আগ্রহী, তারাই এর ভুক্তভোগী হবেন। তাই তাদের চলমান আন্দোলন আগামী দিনের তরুণ সমাজের স্বার্থরক্ষা তথা উচ্চ শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের চক্রান্তের বিরুদ্ধে।

গত ৪ জুন দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ডাকা অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালিত হয়। এদিন দুপুরে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন শেষে হাবিপ্রবির নতুন একাডেমিক ভবনে শিক্ষক সমিতির নেতারা ২৪ জুন পর্যন্ত সরকারকে সময় বেঁধে দেন

ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ২৫, ২৬ ও ২৭ জুন অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করবেন শিক্ষকরা। এছাড়া ৩০ জুন শিক্ষকরা পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করবেন। তবে, পরীক্ষা কর্মবিরতির আওতামুক্ত থাকবে। দাবি আদায় না হলে আগামী ১ জুলাই থেকে দেশের সবকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালিত হবে।

বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ বশির উদ্দিন বলেন, কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত ও আমাদের সিদ্ধান্ত একই আমরা আগামী ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যাচ্ছি। এসময় সকল প্রকার ক্লাস-পরীক্ষা এর অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

তিনি আরো বলেন, "একই সাথে দাবি আদায়ে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যে কর্মসূচি ঘোষণা করবে তার সাথে বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষকরা একাত্মতা প্রকাশ করে কর্মসূচি পালন করবে। "

এদিকে, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া নবীন শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। শিক্ষকদের সর্বাত্মক কর্মবিরতির ঘোষণায় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারাও।

ট্যুরিজম এন্ড হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী বি এম গোলাম রসূল বলেন," করোনার দীর্ঘ সময়ে পড়ালেখার ক্ষতি কাটিয়ে এখনও উঠতে পারিনি। এছাড়াও  ক্যাম্পাসের অস্বাভাবিক পরিস্থিতির কারণে কিছুদিন পর পর ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত হচ্ছে। এতে আমরা সেশন জট নামের অভিশপ্ত জীবনের ঝুঁকিতে পড়েছি। যা আমাদের স্বপ্ন পূরণে বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এ কারণে সরকার ও শিক্ষকদেরকে বিনীত অনুরোধ করছি এমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহন না করে যাতে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হয়।"

সম্পাদক: ইসমাঈল হোসাইন রাসেল
যোগাযোগ: ক্যাম্পাস টাইমস
৪৩ শহীদ নজরুল ইসলাম সড়ক, হাটখোলা রোড, চৌধুরী মল, টিকাটুলি, ঢাকা-১২০৩
মোবাইল: ০১৬২৫ ১৫৬৪৫৫
ইমেইল:[email protected]