প্লাজমা নিয়ে মানুষের পাশে 'টিম ৭১'


ঢাকা | Published: 2021-05-04 06:12:40 BdST | Updated: 2024-03-29 20:19:38 BdST

করোনার ভয়াবহতা যেন থামছেই না। আক্রান্তের হার, মৃত্যুহার রোধ করা দিন দিন যেন কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এখনো ভ্যাক্সিন আবিষ্কৃত না হওয়ায় চিকিৎসার সর্বশেষ ধাপ হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে শত বছরের পুরাতন পদ্ধতি "প্লাজমা থেরাপি"। করোনা আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়েছেন এমন কারো রক্তের প্লাজমা আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে দেয়ার নামই এই প্লাজমা থেরাপি। এক্ষেত্রে থাকে বেশ কিছু শর্তাবলীও। সুস্থ হওয়ার পর অন্তত ১৪ দিন পার হতে হয়, এন্টিবডি থাকতে হয়, শারীরিকভাবে উপযুক্ত হতে হয় ইত্যাদি। মুমূর্ষু রোগীদের পরিবারের জন্যে প্লাজমা সংগ্রহ যেন এক বিরাট সংগ্রাম।

দিনটা ৩০ শে মে, ২০২০। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোঃ ইসতিয়াক উদ্দিন এ সংগ্রামকে আরো সহজ করতে, রোগীদের পরিবারকে সহযোগিতা করার চিন্তা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খুলে ফেলেন ফেসবুক গ্রুপ "প্লাজমা ব্যাংক, বাংলাদেশ(কভিড-১৯)"। লক্ষ্য একটাই। জরুরি প্রয়োজনে মুমূর্ষু রোগীদের প্লাজমা সংগ্রহ করে দেয়া। আক্রান্ত থেকে সুস্থ হয়ে ইসতিয়াক নিজেও দুইবার প্লাজমা ডোনেট করেছেন। প্রথমদিকে একা লড়তে গিয়ে ভালই হিমশিম খান তিনি। গ্রুপের মাধ্যমে দিন দিন প্লাজমা সংগ্রহ করে মুমূর্ষু রোগিদের সেবা দেয়ার পরিমাণটা বেড়ে যায়। গ্রুপের কার্যাবলী ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন জায়গায়। ফেসবুক গ্রপে প্রতিনিয়ত পোস্ট। ফোনের পর ফোন।

এর ব্যাপ্তি বাড়াতে ইসতিয়াক সারাদেশ থেকে স্বেচ্ছাসেবক নেন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ এবং জেলা থেকে ৭১ জন তরুণ নিয়ে গঠন করেন "টিম-৭১"। প্রতিনিয়ত নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাচ্ছে "টিম-৭১" এর সকল স্বেচ্ছাসেবক। সদস্যদেরকে চাঙ্গা রাখতে, দায়িত্ব ভাগ করে দিতে অনলাইনে প্রতি সপ্তাহে করেন গুরুত্বপূর্ণ মিটিং।

"টিম-৭১" নাম দেয়ার পেছনে কারণ জিজ্ঞেস করলে ইসতিয়াক জানান, "১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধসহ জাতির সকল অর্জনে শিক্ষার্থীসহ তরুণদের ভূমিকাই ছিল মুখ্য। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হওয়া এই তরুণরা করোনাযুদ্ধ মোকাবেলা করে যাচ্ছে শুরু থেকেই। সেই চেতনা থেকেই এই নামটি দেয়া। আমরা তরুণরা আশাবাদী এই করোনা মোকাবেলায় খুব দ্রুত সফলতা পাব"।

স্বেচ্ছাসেবক ছাড়াও তাদের সাথে যুক্ত আছেন ডিএমপি, ওয়ারী জোন এর সহকারী পুলিস কমিশনার মোঃ হান্নানুল ইসলাম, ডেমরা ট্রাফিক জোন, ডিএমপির সহকারী কমিশনার ইমরান হোসেন মোল্লা সহ ১০ জন অভিজ্ঞ ডাক্তার।

.

প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিগত প্রায় এক বছরে তারা এই গ্রুপের মাধ্যমে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দুই হাজারেরও বেশি কোভিড এবং নন কোভিড রোগীকে প্লাজমা ও রক্ত সংগ্রহ করে দিয়েছে, দান করতে পেরেছে। অনেকেই প্লাজমা থেরাপি গ্রহণ করে সুস্থ হয়ে উঠছেন।

এই গ্রুপ থেকে প্লাজমা পেয়ে সুস্থ হওয়া মাওলানা আব্দুস সালাম এর ছেলে সালমান জানান, "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত "প্লাজমা ব্যাংক, বাংলাদেশ(কভিড-১৯)" ফেইসবুক গ্রুপটি একটি সাধারন স্বেচ্ছাসেবক গ্রুপ এর থেকেও বেশী কিছু। ওদের উছিলায় আল্লাহ আমার বাবার মতো আরও অনেক মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে বলেই আমি বিশ্বাস করি। ওরা প্রতিদিন যেই অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে, হয়তোবা কারও জীবন বাঁচানোর জন্য অথবা কারও বেঁচে থাকার তীব্র প্রচেষ্টার অংশীদার হিসেবে। বেশীরভাগ মানুষকেই হয়তোবা ওরা দেখে নাই কখনো, শুধুমাত্র মানুষ হিসেবেই তার যুদ্ধে নিজেরাও অংশ নিয়েছে। ওদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। ভালো কাজগুলো বেঁচে থাকুক"।

করোনার ভয়াবহতা শেষ না হওয়া অবধি "টিম-৭১" তাদের এ মানবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা মোঃ ইসতিয়াক উদ্দিন। প্লাজমা সংগ্রহের পাশাপাশি জরুরি রক্ত যোগান দিতে ব্লাড ব্যাংক, বাংলাদেশ(টিম-৭১) নামের নতুন প্লাটফর্ম খুলেছে তারা। প্রতিদিন রোগীর স্বজনরা চাওয়া মাত্রই জরুরি ভিত্তিতে সরবরাহ করে দিচ্ছে টিম-৭১।

//