নজরুল থাকার কারণেই দেশে ঘৃণার চাষ হয় না: আবদুল হাই শিকদার


ইবি প্রতিনিধি | Published: 2025-05-21 20:25:29 BdST | Updated: 2025-06-14 08:07:07 BdST

‘বাংলাদেশে ঘৃণার চাষ হয় না, কারণ এখানে নজরুল আছেন। হিন্দু-মুসলমানের একতাই এই দেশের মূল শক্তি, যেটি নজরুল ধারণ করতেন।’

বুধবার (২১ মে) কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের উদ্যোগে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনার ও আলোচনা সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে এসব কথা বলেন কবি, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক আবদুল হাই শিকদার।

তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, বাংলাদেশকে জানতে হলে নজরুলকে জানতে হবে। ভারত ঘৃণার কারখানায় পরিণত হয়েছে, যেখানে একদিনে ৫০০ মসজিদ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। আমাদের দেশে নজরুল আছেন বলেই এখানে ঘৃণার বীজ অঙ্কুরিত হয় না।’

এ সময় তিনি বলেন, ‘বিশ্বে সবচেয়ে বড় দালালি করছে বুদ্ধিজীবীরা। নজরুল আজীবন তাদের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন।’

আবদুল হাই শিকদার আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের আত্মমর্যাদার জায়গায় যে উন্নয়ন হয়েছে, তার কৃতিত্ব একমাত্র জিয়াউর রহমানের। তিনি রাষ্ট্রপতি থাকাকালে বলেছিলেন— হিন্দু হিন্দুই থাকবে, পাহাড়ি পাহাড়িই থাকবে। ফ্যাসিবাদের প্রতীক হচ্ছেন রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রচর্চার মাধ্যমেই দেশদ্রোহীরা জন্ম নিয়েছে, দুঃশাসনের বিস্তার ঘটেছে। রবীন্দ্রনাথের নামে ৩টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে। অথচ নজরুলের নামে আছে মাত্র ১০টি ওয়েবসাইট। সরকার চাইলে নজরুলকে জাতীয় সম্পদ হিসেবে কাজে লাগাতে পারে।’

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বাংলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. মনজুর রহমান। প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম। বক্তব্য দেন কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন।

আলোচনায় আবদুল হাই শিকদার বলেন, ‘হিন্দুদের রেনেসাঁ শুরু হয়েছিল হিন্দু কলেজ দিয়ে। আর বাঙালি রেনেসাঁর সূচনা নজরুলের জন্মের মধ্য দিয়ে— ১৮৯৯ সালে। যেমন আলো, বাতাস, পানি ও খাদ্য ছাড়া জীবন চলে না; তেমনি নজরুল ছাড়া চলে না বাংলাদেশ। নজরুলকে বাদ দিলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ অর্থহীন হয়ে যাবে, অসাম্প্রদায়িকতা ও নারী অধিকার অর্থহীন হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবে যারা রাস্তার দেয়ালে লেখালেখি করেছে, তারা প্রত্যেকে নজরুলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। আমি রবীন্দ্রনাথের সব লেখা পড়েছি। কোথাও মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নাম পাইনি। তিনি শিক্ষার নামে অবজ্ঞা করেছেন, অথচ নোবেল পাওয়ার পর নওগাঁয় তার নামে প্রথম স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়।’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘কলকাতা কেন্দ্রিক রাজাকারদের কারণে বাংলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা ছিল ইংরেজদের দালাল। নজরুল জন্ম না নিলে বাংলা ভাষার ভেতরে যে অগ্নিগিরি লুকানো আছে, তা জানতেই পারতাম না।’

তিনি আরও জানান, নজরুলকে জাতীয় কবি হিসেবে ১৯২৯ সালের পর একমাত্র ইউনুস সরকারই গেজেট আকারে স্বীকৃতি দিয়েছেন।

আলোচনা সভা শেষে আমন্ত্রিত অতিথিদের উত্তরীয় ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। একই সঙ্গে ‘জুলাই বিপ্লব’-এ শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।