
লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক রেদোয়ান সালেহীন নাঈমের ওপর সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। এতে সাংবাদিকসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হন।
গতকাল রোববার রাত ৯টার দিকে রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতরে ও বাহিরে এ হামলা হয়। খবর পেয়ে দ্রুত রামগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবুল বাশার ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুব আলম ঘটনাস্থলে যান। এ ঘটনায় রাত ১টার দিকে আঙ্গারপাড়া ও টামটা এলাকা থেকে জড়িত মাসুদ, কামাল ও তুষার নামের তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
স্থানীয়রা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার বিকেল সাড়ে ৪টায় উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের শৈরশই গ্রামের গনক বাড়ির উঠানে ফুটবল খেলার সময় একই বাড়ির উদ্দীপন এনজিও কর্মী সোহাগ আলমের এক বছর বয়সী শিশু আনাছুর রহমান আনাছের মাথায় ফুটবল পড়ে গুরুতর আহত হয়। এ ঘটনায় শিশু আনাছের মা আমেনা আক্তার বিথী ফুটবল খেলোয়াড় রাহুল (১০) ও সাফোয়ানকে (১২) জিজ্ঞাসা করলে তাদের স্বজনদের সঙ্গে তর্কাতর্কি হয়।
সন্ধ্যায় সাড়ে ৬টায় শিশু আনাছের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। পরে আনাছকে রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে রাহুলের বাবা রাজন ও সাফোয়ানের বাবা লিপনসহ অন্যরা শিশুর বাবা সোহাগকে আইনের আশ্রয়ে গেলে গ্রামে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে হুমকি দেয়। একপর্যায়ে তাদের বাধা অতিক্রম করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর হাসপাতালের ভেতর থেকে আহত শিশু আনাছকে টেনে বের করার চেষ্টা করে অভিযুক্তরা।
এ ঘটনায় শিশুর বাবা সোহাগ আলম, তাঁর নিকটাত্মীয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রেদোয়ান সালেহীন নাঈমসহ অন্যরা বিষয়টি জানতে হাসপাতালে যায়। সেখানে গিয়ে শিশু আনাছের বাবার কাছে পুরো ঘটনা জানতে চাওয়ার একপর্যায়ে মাসুদ, তুষার, কামাল ও লিটনসহ ২০-২৫ জনের একটি গ্রুপ বাঁশ, লাঠি ও কাঠ নিয়ে তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এতে রেদোয়ান সালেহীন নাঈম, আজিজ শাকিল, সাঈদ আলম শাহীন, জাহীদ হাসান পাবেল, তারেক আজিজ, সায়মন স্যাম, তারেকসহ কয়েকজন আহত হয়। এ ঘটনার খবর সংগ্রহ করতে গেলে দৈনিক খবরের কাগজের রামগঞ্জ প্রতিনিধি রায়হানুর রহমানকে মারধর করা হয়।
আহতরা সবাই রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আনোয়ার হোসেন বলেন, হাসপাতালে ঢুকে মারধর করার ঘটনায় কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। এ ঘটনার চিকিৎসক ও নার্সও অনিরাপদ।
ঘটনার খবর পেয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক মাহাবুব আলম সেখানে যান। এ সময় তিনি বলেন, ‘এই ন্যাক্কারজনক হামলার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করতে হবে। পুলিশের সাথে কথা বলেছি। পুলিশ আশ্বস্ত করেছে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হবে। অন্যথায় বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করব।’
রামগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ আবুল বাশার বলেন, ‘খবর পাওয়ার সাথে সাথে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। এ ঘটনায় নেতৃত্বদানকারী মাসুদ, তুষার ও কামালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’