প্রতি ১৬ শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক চায় ঢাবি


DU Correspondent | Published: 2022-01-16 06:22:24 BdST | Updated: 2024-04-24 06:37:48 BdST

শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন ও দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির লক্ষ্যে আসন সংখ্যা পুনর্নির্ধারণ করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষ। পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে সুপারিশ এনে ইতোমধ্যে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে ডিনস কমিটি। এই সুপারিশ অনুমোদন হলে বিভিন্ন বিভাগে ভর্তির ক্ষেত্রে এক হাজার ১৫টি আসন কমবে এবং প্রতি ১৬ জন শিক্ষার্থী পাবে একজন করে শিক্ষক।

এমনটি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল। যেটি পরবর্তী অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় উত্থাপন এবং সিন্ডিকেটে চূড়ান্ত হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি আসন কমবে কলা অনুষদে। এতে ১৭টি বিভাগে কমবে ৫১৫টি আসন। অৰ্থাৎ, ১৮৭৫ আসন থেকে কমে ১৩৬০ আসনে নেমে আসবে। এছাড়া ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে ২০০টি, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে ১৫৭টি, জীববিজ্ঞান অনুষদে ৯০টি, আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অনুষদে ১০টি, আইন অনুষদে ২০টি, চারুকলা অনুষদে ৫টি, ইনস্টিটিউটসমূহে ৪০টি আসন কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে। তবে কিছু বিভাগে আসন সংখ্যা বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে। সর্বোপরি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় আসন সংখ্যা ৭ হাজার ১২৫টি থেকে কমে ৬ হাজার ১১০টিতে নেমে আসবে। 

যেসব বিভাগে আসন কমবে

ডিনস কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, কলা অনুষদের বাংলা বিভাগে ১২টি, ইংরেজিতে ৩০টি, আরবিতে ৫০টি, ফারসি ভাষা ও সাহিত্যে ২৫টি, উর্দুতে ৪০টি, সংস্কৃততে ৪০টি, পালি ও বুড্ডিস্ট স্টাডিজে ২৫টি, ইতিহাসে ২০টি, দর্শনে ৫০টি, ইসলামিক স্টাডিজে ৮৫টি, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে ৫০টি, তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনায় ১০টি, ভাষা বিজ্ঞানে ২০টি, সংগীতে ২০টি, বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতিতে ৪০টি এবং নৃত্যকলা বিভাগে ৫টি আসন কমবে।

ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে ম্যানেজমেন্ট বিভাগে ৩০টি, একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমসে ৩০টি, মার্কেটিংয়ে ৩০টি, ফিন্যান্সে ৩০টি, ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমসে ৫০টি, ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমসে ১৫টি, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেসে ১৫টি, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টে ১৫টি আসন কমবে।
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ৫০টি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ২০টি, সমাজ বিজ্ঞানে ৩৫টি, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় ৬টি, লোক প্রশাসনে ২০টি, শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়নে ২০টি, উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজে ৫টি, ক্রিমিনোলজিতে ১০টি, কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডারসে ১০টি, জাপানিজ স্টাডিজে ১০টি আসন কমবে।

জীববিজ্ঞান অনুষদে মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশে ২০টি, উদ্ভিদ বিজ্ঞানে ৫টি, প্রাণিবিদ্যায় ২০টি, মনোবিজ্ঞানে ৫০টি আসন কমবে। এছাড়া আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অনুষদের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগে ৪০টি; আইন অনুষদের আইন বিভাগে ২০টি; চারুকলা অনুষদের অংকন ও চিত্রায়নে ৫টি; শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে ৪০টি, সমাজকল্যাণ ও গবেষণায় ৫টি, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে ২০টি আসন কমবে।

যেসব বিভাগে আসন বাড়বে

কলা অনুষদের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগে ৭টি; বিজনেস অনুষদে অর্গানাইজেশন স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড লিডারশিপ বিভাগে ১৫টি; সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে অর্থনীতিতে ২টি, পপুলেশন সাইন্সেসে ১৫টি, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজে ১২টি; জীববিজ্ঞান অনুষদে জীন প্রকৌশল ও জীব প্রযুক্তি বিভাগে ৫টি; আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অনুষদের সমুদ্র বিজ্ঞানে ১৫টি, দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনায় ১০টি, আবহাওয়ায় ৫টি; বিজ্ঞান অনুষদের পরিসংখ্যান বিভাগে ২টি; ফার্মেসি অনুষদের ফার্মেসি বিভাগে ১০টি, পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনিস্টিটিউটে ৫টি, তথ্য প্রযুক্তিতে ২০টি, নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ৫টি, রোবটিক্স অ্যান্ড মেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ৫টি আসন বাড়বে।

এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. মাকসুদ কামাল বলেন, শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি ও দক্ষ মানব সম্পদ তৈরির লক্ষ্যে আসন পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে ভাবছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। যেসব বিভাগগুলোতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাহিদা বেশি সেগুলোতে বাড়ানো হয়েছে আসন। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা, উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমের মান বৃদ্ধি এবং দক্ষ গ্রাজুয়েট তৈরির লক্ষ্যে এ পরিবর্তন আনা হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা আন্তর্জাতিকভাবে লক্ষ্য করেছি যে, পৃথিবীর মানসম্মত যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আছে, সেখানে ১০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক, কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক রয়েছে। কিন্তু আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ২০ জনের অধিক শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষকের ব্যবস্থা রয়েছে। সেটি এখন আমরা ১৬-তে নিয়ে আসব।

তিনি আরও বলেন, শ্রেণিকক্ষের বাইরেও একজন শিক্ষকের গবেষণা করা, শিক্ষার্থীদের গবেষণায় তদারকি করা, ক্লাসের প্রস্তুতির জন্য সময় দরকার। এসব কাজের জন্য যে সময়ের প্রয়োজন, শিক্ষার্থী সংখ্যা বেশি হলে তা পাওয়া যায় না। শিক্ষার্থী বেশি হলে শিক্ষকদের খাতার মূল্যায়ন থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদের গাইড করার ক্ষেত্রে সময় সীমিত হয়ে যায়। তাই আমরা শিক্ষার্থী সংখ্যা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যাতে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে পারি।

ডিন কমিটির এই সুপারিশটি পরবর্তীতে আলোচনার জন্য ভর্তি কমিটি, একাডেমিক কাউন্সিলে উঠবে। পরে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সুপারিশটি চূড়ান্ত হবে বলে জানান অধ্যাপক ড. মাকসুদ কামাল।