৫৮ বছর বয়সে স্নাতক পাস করলেন প্রাথমিক শিক্ষিকা


Desk report | Published: 2022-05-07 23:20:13 BdST | Updated: 2024-04-20 22:09:36 BdST

‘ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়’ তা প্রমাণ করলেন ৫৮ বছর বয়সী শামসুন্নাহার বেগম। তাঁর জীবনের সাধ ছিল উচ্চশিক্ষার জগতে পা রাখবেন। ডিগ্রি পাস করবেন। সেই স্বপ্ন পূরণ হলো অবশেষে।

উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি পাস করেছেন তিনি। গত এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহে এ পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। একদিকে সংসার, আরেক দিকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা—এ দুটি সামলে তিনি অর্জন করলেন এ কৃতিত্ব। পরিবার, সহকর্মীসহ অনেকের প্রশংসায় ভাসছেন সংগ্রামী শামসুন্নাহার।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শামসুন্নাহারের জন্ম ১৯৬৪ সালে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের ফানুর গ্রামে। বাবা আফাজ উদ্দিন ছিলেন শিক্ষক। সব ছেলেমেয়েকেই উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করার স্বপ্ন ছিল তাঁর। ঈশ্বরগঞ্জ থেকে ১৯৮০ সালে এসএসসি পাস করেন শামসুন্নাহার। এরপর পিটিআইতে প্রশিক্ষণ নেন। ১৯৮৪ সালে বিয়ে হয় তাঁর। স্বামীর সেনাবাহিনীর চাকরিসূত্রে নানা স্থানে ঘোরাঘুরির কারণে পড়াশোনার ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়ে শামসুন্নাহারের। এর পরও এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ১৯৯৩ সালে কলেজে ভর্তি হন; কিন্তু ১৯৯৫ সালে পরীক্ষা দেওয়ার আগে প্রথম সন্তানের মা হন। পরীক্ষা আর দেওয়া হয়নি। ওই বছরই তিনি আবার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরির সুযোগ পেয়ে যান। যোগ দেন শিক্ষকতায়। পড়াশোনা আর এগোয় না। তবে স্বপ্নটা রয়ে গেল মনে।

সময় বয়ে যায়। ছেলেমেয়েরা ধীরে ধীরে উচ্চশিক্ষায় প্রবেশ করে। শামসুন্নাহার সেই কিশোরী বয়সের স্বপ্নপূরণে উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষা পাস করার জন্য ২০১৩ সালে ভর্তি হন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে। দুই বছরের কোর্স শেষে ২০১৫ সালে তিনি পাস করেন এইচএসসি। এরপর ডিগ্রি অর্জনের জন্য ভর্তি হন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে। তবে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে পরীক্ষা গ্রহণ ও ফল প্রকাশে দেরি হয়। অবশেষে গত জানুয়ারিতে পরীক্ষার পর ২৫ এপ্রিল ফল হাতে পান তিনি।

ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার চট্টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শামসুন্নাহারের এমন কৃতিত্বে আনন্দের জোয়ার বইছে তাঁর পরিবারে।

স্বামী, দুই সন্তান, মা, ভাই-বোন তো আছেই, অন্যরাও তাঁকে তাঁর এই অর্জনের জন্য শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। বাড়িতে ছোটখাটো অনুষ্ঠানও করা হয়েছে শামসুন্নাহার বেগমকে নিয়ে।

শামসুন্নাহারের ছেলে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার এবং মেয়ে স্নাতক (সম্মান) তৃতীয় বর্ষে পড়েন। তিনি বসবাস করেন ময়মনসিংহ শহরেই। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে শামসুন্নাহার বড়। তাঁর ভাই-বোনরাও উচ্চশিক্ষিত এবং বিভিন্ন স্থানে দক্ষতার সঙ্গে পেশাগত দায়িত্ব পালন করছেন। শামসুন্নাহার বেগম বলেন, ‘জীবনের স্বপ্ন ছিল গ্র্যাজুয়েট হব। তবে সংসার আর চাকরির ব্যস্ততার কারণে এত দিন স্বপ্ন পূরণ হয়নি। এবার পূরণ হয়েছে। আজ বাবা বেঁচে থাকলে সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন।