সহস্র সুমনের নতুন কবিতায় আলোকমিতির লিরিকাল ভিডিও


Dhaka | Published: 2021-09-04 17:15:10 BdST | Updated: 2024-04-19 04:58:06 BdST

আলোচিত কবি সহস্র সুমনের একটি কবিতার লিরিকাল ভিডিও রিলিজ করল আলোকমিতি নামের ভিডিওগ্রাফি সংগঠন। কবিতার নাম "নারী : বিক্ষত পরিচয়। " কবিতায় কণ্ঠ দিয়েছে কলকাতার বিখ্যাত আবৃত্তিকার সংগ্রামীকা মজুমদার।

লিরিকাল ভিডিওটিতে দেখা যায় একটি সংগ্রামী নারীর যাপিত জীবনের সীমাবদ্ধতা ও কষ্টগুলো কাব্যিক ও শৈল্পিক ঢঙ্গে প্রকাশিত হতে। এতে মূল চরিত্রে অভিনয় করেছে চাহাদ রত্না রাফি। একটি পরিবারে শুধু তিন বোন ও মায়ের সংসার কেমন চলে কিভাবে চলে, একই সাথে বিয়ে না হওয়ার ফলে অবিবাহিত নারীর যে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি,সেটি নিপুনভাবে ফুটে উঠেছে এ ভিডিওতে। কিন্তু পরিশেষে নারী জাগরণের চমৎকার এক আহ্বান রয়েছে এখানে।

সব বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে মানুষ হিসেবে মাথা উঁচু করে বাঁচার প্রতিশ্রুতি উচ্চারিত হয়েছে শেষ পর্যায়ে এসে। লিরিকাল ভিডিওটি পরিচালনা করেছে কাঞ্চনজঙ্ঘার কোলে বেড়ে ওঠা ফটোগ্রাফার ও ভিডিওগ্রাফার মারুফ হাসান আবির।

ইতিপূর্বে পঞ্চগড়ের বিভিন্ন ছবি তুলে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় নিজের যোগ্যতা প্রমান করে পুরস্কার ও পদক হাতেও তাকে দেখা গিয়েছে। শিল্পো পরিচচালক ছিলেন তরুণ নির্মাতা আব্দুল্লাহ আল মামুন । এছাড়া এতে আরো অভিনয় করেছে ,এ জেড বাশার,নবী হোসেন খান ,উমর ইবনে শহীদ,রবিউল ইসলাম রবি,শিহাব সুলতান,আরাফাত হোসাইন আয়াত ও আব্দুল্লাহ আল মামুন।

নেপথ্যে যারা ছিলেন ছিলেন : গ্রাফিক্সঃ উমর ইবনে শহীদ । বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানানো হয় আফসানা খুশবু ও রোকনুর জামান রোকন কে।

সম্পাদনা ও পরিচালনাঃ মারুফ হাসান আবির ।
শিল্প পরিচালকঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন
কলমেঃ সহস্র সুমন
কন্ঠেঃ সংগ্রামীকা মুজুমদার

এ বিষয়ে কবি সহস্র সুমনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কাজটি আমি দেখেছি। অসাধারণ হয়েছে। কবিতা থেকে এরকম সুন্দর সুন্দর ভিডিও করার কাজটি আগে থেকেই হতো। কিন্তু নতুন মাত্রা দিয়েছে আমাদের বড় পর্দার শিল্পি টনি ডায়েস। ওনার দেখাদেখি এখন দেশে অনেকেই এরকম দারুণ কাব্যচিত্র নির্মাণ করছে। এটি আমাদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।

ইতিমধ্যে ভিডিওটি পাঠক ও দর্শকদের মাঝে দারুণ সাড়া ফেলেছে। পাঠকদের স্বার্থে পুরো কবিতাটি নিচে দেয়া হলো।


নারী : বিক্ষত পরিচয়
সহস্র সুমন

নিজেকে আজকাল পণ্য মনে হয়, পণ্য,
অবিক্রিত, অধির অপেক্ষায় বিক্রি হবার জন্য ।
প্রতি নিয়ত আমি প্রচন্ড অনিচ্ছায় নিজেকে উপস্থাপন করি,
প্রতি বারই ভিন্ন চুলে, ভিন্ন ভালে, রূপবান রূপে গড়ি ;
ভেতরে ভেতরে গুটিয়ে যাই, মুখোশ পড়ে আসল ঢেকে নকল মেলে ধরি।

অন্য এক পুরুষের পছন্দের মতো হতে চাইতে হয় আমাকে,
আমি চেষ্টাও করি তাকে বোঝাতে হয়তো আমি তারই মনের মত,
কিন্তু নিজেকে পারি না বোঝাতে, কঠিন সাজা উন্নত শির নত।

কেন আমাকে নতুন শাড়ি মুড়ে গিয়ে দাঁড়াতে হবে?
কেন চা দিতে গিয়ে কুশলাদি করতে হবে বিনিময়?
কেন আমি একের পর এক ব্যাপারীর সাথে সাক্ষাত করতে যাবো?
আর কত ক্রেতার সাথে হবে মোর বিক্ষত পরিচয়?

কেন প্রায় একই রকম প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে ভিন্ন পুরুষ দলকে?
আর কত বার হাসিতে রূপান্তরিত করব উত্তাল চোখের জলকে?

কেন, আমি আমাকে অন্যের দায়িত্বে দিতে গেলে আমাকেই দিতে হবে পরীক্ষা?
পাত্রস্থ হবার জন্য নয়, আত্মস্থ হবার জন্য আর কত করতে হবে প্রতিক্ষা?
আমি আমার জন্য নয়, আমি নারী,
এটাই যেন মোর বিক্ষত পরিচয়।

আজ-কাল ভীষণ বোঝা মনে হয় নিজেকে,
মনে হয় আমার কাঁধে আমিই চড়েছি বসে বস্তা বোঝাই পণ্যে,
আমিই যেন চষছি হাল, আমারই শরীর আমারই মন
কোন এক লর্ড ক্লাইভের জন্যে।

এইতো সেদিনও কত আনন্দ, কত উল্লাস, কত বন্ধু ঘেরা সময়,
কেউ কেউ তো ভালোও বাসতো, কেউ চাইতো একান্ত আপন করে পেতে, দখল নিতে হৃদয়।
কিন্তু কেন যেন আমার রূপ, আমার আচরণ, আমার খরচের হাত এসবই আলাপে হয়ে ওঠে মূখ্য,
যিনি কেনাল, যিনি চালাবেন হাল, তার আলোচনা অতি সুক্ষ্ম, অপ্রয়োজনীয় ও পরোক্ষ।

মেয়েরা ক বোন?
এইতো তিন,
ভাই নাই?
নাই।
হুম, এ বাড়িতে শুধু জামাই, বংশের বাতি নাই,
পারিবারিক ঝামেলা হলে ঠেকানোর লাঠি নাই,
বিপদে আপদে গতি নাই।
জানেন? কথা গুলো তীরের মতো বেঁধে, এ ফোঁড় ও ফোঁড় করে দেয় আমাকে,
আর এখন তো বাবা নাই, করোনায় মরেছে, এইতো গত জুলাই।
আমি জানি প্রতিবার একই কথা হবে, তবুও আমাকে যেতে হয়, আমি ব্যাপারীদের সাথে দেখা করতে যাই।
মায়ের মুখটা দেখে আমার বুকের ভেতরটা হু হু করে ওঠে,
মনে হয় আমার বিয়েটা হলে, তার বুকে চেপে থাকা একটা বড় পাথর যাবে গলে।
কিন্তু অবাক লাগে কি জানেন?
একটা ছোট্ট চাকরিও করি, মা-মেয়ের সংসার চলার মত পয়সা কড়ি,
দুজনের নাও, ভেসেই যাবে এ তরী।
কিন্তু না, চাকরি কিছু নয়, স্বাবলম্বীতা কিছু নয়, কোন মূল্য নাই এসবের অনেকের কাছে, কি হবে এসব দিয়ে?
যদি কন্যা তোমার না হয় বিয়ে, অর্থাৎ কেউ করে নি তোমায় বিয়ে!

অবাক না?
জানেন, ছোট বেলা দৌড়ে ফার্স্ট হতাম, ফার্স্ট হতাম ক্লাসেও,
তখন সবাই এমন ভাবে প্রশংসা করত যেন ভেবেই নিয়েছিলাম দিনে যা সত্য, সত্য তা রাতেও।

কিন্তু না, জীবনের আলো আর আধারের উষায় দাঁড়িয়ে ভাবি,
এত গুণ, এতো রূপ, অন্যের পছন্দের মতো হওয়ার চাবি তুই কোথায় পাবি?

আমি তো নিজের জন্য গড়েছি নিজেকে, নিজের মতো করে গড়েছি নিজেকে,
আজ হঠাৎ অপরের মত হতে পারি কিনা এটা এতো গুরুত্বপূর্ণ?
আচ্ছা, আমিতো মানুষ, আমাকে কি ভাবো তোমরা? অসামাজিক, বন্য?

কেন তোমার পছন্দের রঙটি হতে হবে আমার প্রিয়?
কেন প্রিয় পর্যটন স্থানে হতে হবে মানসিক মিলন?
কেন যৌনতায় ভাবতে হবে তোমার মতো করেই?
কেন সব কিছুরই তুলনা হবে কেবল গায়ের জোরেই?

আমি দেখতে কদাকার? খাটো? নইকো গ্রহণযোগ্য?
বেশ ভালোতো, নিজের মত চলব, আয় রোজগার করব,
আমার জীবন আমার কাছে দারুণ উপভোগ্য।

কেমন আচার? কেমন বিচার?
কেমন করে নারীর সাথে সৌন্দর্যের এক সুক্ষ্ম প্রচার?
আর এই যে নারীর প্রচলিত সংসার,
এই যে উপমা ডানা কাটা পরী,
আকাশ ছেড়ে বেছে নিয়েছে জীবন পাখির খাঁচার?

এসব বললে তো আবার বলবেন, হয় নি বিয়ে শাদি,
প্রেমেও তেমন সুবিধে করতে পারিনি -
তাই হয়েছি পুরুষ বিদ্বেষী নারীবাদি।
আমাদের কি আর কথা বলেও শান্তি আছে,
কে কি বলে পাছে!
ধর্ষিত হই, বর্শা মুখে বর্শিত হই, খুন হই বারে বারে,
প্রজন্মের তরে কর্ষিত হই ; তবুও ক্ষমা হয় নাকো, নারী হওয়ার অপরাধে।

যে পুরুষ সুন্দর নয়, সুশ্রী নয়, সে অন্তত মানুষ,
কিন্তু নারী যেন সুশ্রী হতেই বাধ্য,
নয়তো তাহার সমাজ ভেদে নানা রকম শ্রাদ্ধ।

বড্ড খারাপ লাগে জানেন তো? হয়তো জানেন, কিন্ত বুঝবেন কিনা জানি না,
মফস্বলে কেউ একলা মেয়েকে বাসাটাও ভাড়া দেয় না,
অফিস শেষে কোথায় তবে ফিরবো?
একটা ছোট চাকরি করি, এদিকে বিয়েটাও হচ্ছে না,
তাহলে ভাবুন তো কি করব?
সন্ধ্যে বেলা যখন কাজ থেকে ফিরি,
কি মনোরম তারার আকাশ, কোমল বাতাস বইছে ঝিরিঝিরি।

কয়েকটা ছেলে, নখের ডগায় লালচে ধোঁয়ার আগুন জ্বলে,
আমি ভাবি এইতো বুঝি মানুষ ভেবে কেউবা প্রথম আমার প্রেমে পড়ল,
কিন্তু হঠাৎ করেই কি হলো জানেন!
কে যেন এসে পেছন থেকে জাপটে আমায় ধরল।
আমি দেখলাম, কিসের আকাশ, কিসের বাতাশ, কিসের সন্ধ্যে, কিসের প্রভাত!
চারিদিকে শুধু হায়নার দল, মাছের ভিড়ে কুমিরের খল,
তারা নিভে গিয়ে জ্বলে উঠেছে হাজার হাজার দাঁত।

আমিতো কাউকে চাই নি, কাউকে বলি নি আমার হও,
আমি বলি নি আমাকে তোমার মত করে নাও,
থাকতে চেয়েছি নিজের মত, লুকিয়ে সব দুঃখ ক্ষত।
কিন্তু আজ বুঝি, একলা পুরুষ- পুরুষ ও মানুষ,
কিন্তু একলা নারী এই সমাজে ঊণমানুষ, প্রায় মানুষ।
তাকে নিয়ে সব বলা যায়, ইচ্ছে মতো খেল খেলা যায়,
গল্প ফেঁদে, মিথ সাজিয়ে ভোগ করা যায় সবার ইচ্ছে মত।

অনেক কথাই হলো, আমার মতো অনেকেই ভাবেন-
অগোচরে আত্ম হনন করে নেবেন,
সেটা ভিন্ন বিষয়,
আমি অবশ্য তেমনটা ভাবি নি তা নয়।
তবে -
দেখি না কি হয়।
কত কাল ধরে করলামই তো আহাজারি, আমি নারী,
আরো সুস্পষ্ট করে -
প্রচলিত অর্থে পুরুষদের কাছে অগ্রহণযোগ্য ও কদাকার এক নারী,
বিদ্রোহ নয়, নারীই যদি হয় মোর বিক্ষত পরিচয়,
শুধু এটাই বলতে চাই, আমিও একলা চলতে পারি।

 


নারী : বিক্ষত পরিচয়
সহস্র সুমন


---------- Forwarded message ---------
From: Shahosro Shumon <[email protected]>
Date: Sat, Sep 4, 2021, 8:39 AM
Subject: নারীঃ বিক্ষত পরিচয়
To: <[email protected]>


সহস্র সুমনের নতুন কবিতায় আলোকমিতির লিরিকাল ভিডিও।

আলোচিত কবি সহস্র সুমনের একটি কবিতার লিরিকাল ভিডিও রিলিজ করল আলোকমিতি নামের ভিডিওগ্রাফি সংগঠন। কবিতার নাম "নারী : বিক্ষত পরিচয়। " কবিতায় কণ্ঠ দিয়েছে কলকাতার বিখ্যাত আবৃত্তিকার সংগ্রামীকা মজুমদার। লিরিকাল ভিডিওটিতে দেখা যায় একটি সংগ্রামী নারীর যাপিত জীবনের সীমাবদ্ধতা ও কষ্টগুলো কাব্যিক ও শৈল্পিক ঢঙ্গে প্রকাশিত হতে। এতে মূল চরিত্রে অভিনয় করেছে চাহাদ রত্না রাফি। একটি পরিবারে শুধু তিন বোন ও মায়ের সংসার কেমন চলে কিভাবে চলে, একই সাথে বিয়ে না হওয়ার ফলে অবিবাহিত নারীর যে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি,সেটি নিপুনভাবে ফুটে উঠেছে এ ভিডিওতে। কিন্তু পরিশেষে নারী জাগরণের চমৎকার এক আহ্বান রয়েছে এখানে। সব বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে মানুষ হিসেবে মাথা উঁচু করে বাঁচার প্রতিশ্রুতি উচ্চারিত হয়েছে শেষ পর্যায়ে এসে। লিরিকাল ভিডিওটি পরিচালনা করেছে কাঞ্চনজঙ্ঘার কোলে বেড়ে ওঠা ফটোগ্রাফার ও ভিডিওগ্রাফার মারুফ হাসান আবির। ইতিপূর্বে পঞ্চগড়ের বিভিন্ন ছবি তুলে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় নিজের যোগ্যতা প্রমান করে পুরস্কার ও পদক হাতেও তাকে দেখা গিয়েছে। শিল্পো পরিচচালক ছিলেন তরুণ নির্মাতা আব্দুল্লাহ আল মামুন । এছাড়া এতে আরো অভিনয় করেছে ,এ জেড বাশার,নবী হোসেন খান ,উমর ইবনে শহীদ,রবিউল ইসলাম রবি,শিহাব সুলতান,আরাফাত হোসাইন আয়াত ও আব্দুল্লাহ আল মামুন

নেপথ্যে যারা ছিলেন ছিলেন :

গ্রাফিক্সঃ উমর ইবনে শহীদ ।

বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানানো হউ আফসানা খুশবু ও রোকনুর জামান রোকন কে।

সম্পাদনা ও পরিচালনাঃ মারুফ হাসান আবির ।
শিল্প পরিচালকঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন
কলমেঃ সহস্র সুমন
কন্ঠেঃ সংগ্রামীকা মুজুমদার

এ বিষয়ে কবি সহস্র সুমনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কাজটি আমি দেখেছি। অসাধারণ হয়েছে। কবিতা থেকে এরকম সুন্দর সুন্দর ভিডিও করার কাজটি আগে থেকেই হতো। কিন্তু নতুন মাত্রা দিয়েছে আমাদের বড় পর্দার শিল্পি টনি ডায়েস। ওনার দেখাদেখি এখন দেশে অনেকেই এরকম দারুণ কাব্যচিত্র নির্মাণ করছে। এটি আমাদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।
ইতিমধ্যে ভিডিওটি পাঠক ও দর্শকদের মাঝে দারুণ সাড়া ফেলেছে। পাঠকদের স্বার্থে পুরো কবিতাটি নিচে দেয়া হলো।


নারী : বিক্ষত পরিচয়
সহস্র সুমন

নিজেকে আজকাল পণ্য মনে হয়, পণ্য,
অবিক্রিত, অধির অপেক্ষায় বিক্রি হবার জন্য ।
প্রতি নিয়ত আমি প্রচন্ড অনিচ্ছায় নিজেকে উপস্থাপন করি,
প্রতি বারই ভিন্ন চুলে, ভিন্ন ভালে, রূপবান রূপে গড়ি ;
ভেতরে ভেতরে গুটিয়ে যাই, মুখোশ পড়ে আসল ঢেকে নকল মেলে ধরি।

অন্য এক পুরুষের পছন্দের মতো হতে চাইতে হয় আমাকে,
আমি চেষ্টাও করি তাকে বোঝাতে হয়তো আমি তারই মনের মত,
কিন্তু নিজেকে পারি না বোঝাতে, কঠিন সাজা উন্নত শির নত।

কেন আমাকে নতুন শাড়ি মুড়ে গিয়ে দাঁড়াতে হবে?
কেন চা দিতে গিয়ে কুশলাদি করতে হবে বিনিময়?
কেন আমি একের পর এক ব্যাপারীর সাথে সাক্ষাত করতে যাবো?
আর কত ক্রেতার সাথে হবে মোর বিক্ষত পরিচয়?

কেন প্রায় একই রকম প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে ভিন্ন পুরুষ দলকে?
আর কত বার হাসিতে রূপান্তরিত করব উত্তাল চোখের জলকে?

কেন, আমি আমাকে অন্যের দায়িত্বে দিতে গেলে আমাকেই দিতে হবে পরীক্ষা?
পাত্রস্থ হবার জন্য নয়, আত্মস্থ হবার জন্য আর কত করতে হবে প্রতিক্ষা?
আমি আমার জন্য নয়, আমি নারী,
এটাই যেন মোর বিক্ষত পরিচয়।

আজ-কাল ভীষণ বোঝা মনে হয় নিজেকে,
মনে হয় আমার কাঁধে আমিই চড়েছি বসে বস্তা বোঝাই পণ্যে,
আমিই যেন চষছি হাল, আমারই শরীর আমারই মন
কোন এক লর্ড ক্লাইভের জন্যে।

এইতো সেদিনও কত আনন্দ, কত উল্লাস, কত বন্ধু ঘেরা সময়,
কেউ কেউ তো ভালোও বাসতো, কেউ চাইতো একান্ত আপন করে পেতে, দখল নিতে হৃদয়।
কিন্তু কেন যেন আমার রূপ, আমার আচরণ, আমার খরচের হাত এসবই আলাপে হয়ে ওঠে মূখ্য,
যিনি কেনাল, যিনি চালাবেন হাল, তার আলোচনা অতি সুক্ষ্ম, অপ্রয়োজনীয় ও পরোক্ষ।

মেয়েরা ক বোন?
এইতো তিন,
ভাই নাই?
নাই।
হুম, এ বাড়িতে শুধু জামাই, বংশের বাতি নাই,
পারিবারিক ঝামেলা হলে ঠেকানোর লাঠি নাই,
বিপদে আপদে গতি নাই।
জানেন? কথা গুলো তীরের মতো বেঁধে, এ ফোঁড় ও ফোঁড় করে দেয় আমাকে,
আর এখন তো বাবা নাই, করোনায় মরেছে, এইতো গত জুলাই।
আমি জানি প্রতিবার একই কথা হবে, তবুও আমাকে যেতে হয়, আমি ব্যাপারীদের সাথে দেখা করতে যাই।
মায়ের মুখটা দেখে আমার বুকের ভেতরটা হু হু করে ওঠে,
মনে হয় আমার বিয়েটা হলে, তার বুকে চেপে থাকা একটা বড় পাথর যাবে গলে।
কিন্তু অবাক লাগে কি জানেন?
একটা ছোট্ট চাকরিও করি, মা-মেয়ের সংসার চলার মত পয়সা কড়ি,
দুজনের নাও, ভেসেই যাবে এ তরী।
কিন্তু না, চাকরি কিছু নয়, স্বাবলম্বীতা কিছু নয়, কোন মূল্য নাই এসবের অনেকের কাছে, কি হবে এসব দিয়ে?
যদি কন্যা তোমার না হয় বিয়ে, অর্থাৎ কেউ করে নি তোমায় বিয়ে!

অবাক না?
জানেন, ছোট বেলা দৌড়ে ফার্স্ট হতাম, ফার্স্ট হতাম ক্লাসেও,
তখন সবাই এমন ভাবে প্রশংসা করত যেন ভেবেই নিয়েছিলাম দিনে যা সত্য, সত্য তা রাতেও।

কিন্তু না, জীবনের আলো আর আধারের উষায় দাঁড়িয়ে ভাবি,
এত গুণ, এতো রূপ, অন্যের পছন্দের মতো হওয়ার চাবি তুই কোথায় পাবি?

আমি তো নিজের জন্য গড়েছি নিজেকে, নিজের মতো করে গড়েছি নিজেকে,
আজ হঠাৎ অপরের মত হতে পারি কিনা এটা এতো গুরুত্বপূর্ণ?
আচ্ছা, আমিতো মানুষ, আমাকে কি ভাবো তোমরা? অসামাজিক, বন্য?

কেন তোমার পছন্দের রঙটি হতে হবে আমার প্রিয়?
কেন প্রিয় পর্যটন স্থানে হতে হবে মানসিক মিলন?
কেন যৌনতায় ভাবতে হবে তোমার মতো করেই?
কেন সব কিছুরই তুলনা হবে কেবল গায়ের জোরেই?

আমি দেখতে কদাকার? খাটো? নইকো গ্রহণযোগ্য?
বেশ ভালোতো, নিজের মত চলব, আয় রোজগার করব,
আমার জীবন আমার কাছে দারুণ উপভোগ্য।

কেমন আচার? কেমন বিচার?
কেমন করে নারীর সাথে সৌন্দর্যের এক সুক্ষ্ম প্রচার?
আর এই যে নারীর প্রচলিত সংসার,
এই যে উপমা ডানা কাটা পরী,
আকাশ ছেড়ে বেছে নিয়েছে জীবন পাখির খাঁচার?

এসব বললে তো আবার বলবেন, হয় নি বিয়ে শাদি,
প্রেমেও তেমন সুবিধে করতে পারিনি -
তাই হয়েছি পুরুষ বিদ্বেষী নারীবাদি।
আমাদের কি আর কথা বলেও শান্তি আছে,
কে কি বলে পাছে!
ধর্ষিত হই, বর্শা মুখে বর্শিত হই, খুন হই বারে বারে,
প্রজন্মের তরে কর্ষিত হই ; তবুও ক্ষমা হয় নাকো, নারী হওয়ার অপরাধে।

যে পুরুষ সুন্দর নয়, সুশ্রী নয়, সে অন্তত মানুষ,
কিন্তু নারী যেন সুশ্রী হতেই বাধ্য,
নয়তো তাহার সমাজ ভেদে নানা রকম শ্রাদ্ধ।

বড্ড খারাপ লাগে জানেন তো? হয়তো জানেন, কিন্ত বুঝবেন কিনা জানি না,
মফস্বলে কেউ একলা মেয়েকে বাসাটাও ভাড়া দেয় না,
অফিস শেষে কোথায় তবে ফিরবো?
একটা ছোট চাকরি করি, এদিকে বিয়েটাও হচ্ছে না,
তাহলে ভাবুন তো কি করব?
সন্ধ্যে বেলা যখন কাজ থেকে ফিরি,
কি মনোরম তারার আকাশ, কোমল বাতাস বইছে ঝিরিঝিরি।

কয়েকটা ছেলে, নখের ডগায় লালচে ধোঁয়ার আগুন জ্বলে,
আমি ভাবি এইতো বুঝি মানুষ ভেবে কেউবা প্রথম আমার প্রেমে পড়ল,
কিন্তু হঠাৎ করেই কি হলো জানেন!
কে যেন এসে পেছন থেকে জাপটে আমায় ধরল।
আমি দেখলাম, কিসের আকাশ, কিসের বাতাশ, কিসের সন্ধ্যে, কিসের প্রভাত!
চারিদিকে শুধু হায়নার দল, মাছের ভিড়ে কুমিরের খল,
তারা নিভে গিয়ে জ্বলে উঠেছে হাজার হাজার দাঁত।

আমিতো কাউকে চাই নি, কাউকে বলি নি আমার হও,
আমি বলি নি আমাকে তোমার মত করে নাও,
থাকতে চেয়েছি নিজের মত, লুকিয়ে সব দুঃখ ক্ষত।
কিন্তু আজ বুঝি, একলা পুরুষ- পুরুষ ও মানুষ,
কিন্তু একলা নারী এই সমাজে ঊণমানুষ, প্রায় মানুষ।
তাকে নিয়ে সব বলা যায়, ইচ্ছে মতো খেল খেলা যায়,
গল্প ফেঁদে, মিথ সাজিয়ে ভোগ করা যায় সবার ইচ্ছে মত।

অনেক কথাই হলো, আমার মতো অনেকেই ভাবেন-
অগোচরে আত্ম হনন করে নেবেন,
সেটা ভিন্ন বিষয়,
আমি অবশ্য তেমনটা ভাবি নি তা নয়।
তবে -
দেখি না কি হয়।
কত কাল ধরে করলামই তো আহাজারি, আমি নারী,
আরো সুস্পষ্ট করে -
প্রচলিত অর্থে পুরুষদের কাছে অগ্রহণযোগ্য ও কদাকার এক নারী,
বিদ্রোহ নয়, নারীই যদি হয় মোর বিক্ষত পরিচয়,
শুধু এটাই বলতে চাই, আমিও একলা চলতে পারি।