ফুড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে কেন পড়বেন, চাকরিতে কী সুবিধা


তরিকুল ইসলাম, গোবিপ্রবি প্রতিনিধি | Published: 2025-05-23 11:16:50 BdST | Updated: 2025-06-13 12:32:36 BdST

ফুড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে যেমন আছে একটি সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ার তেমনি ভাবে রয়েছে দেশ ও মানবজাতির সেবার অপার সুযোগ। সাফল্যমন্ডিত ক্যারিয়ার এবং দেশ ও মানুষের সেবায় আত্মনিয়োগ করতে চাইলে ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং হতে পারে পছন্দের তালিকার উপরের দিকে থাকা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

এ নিয়ে গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (গোবিপ্রবি) ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সভাপতি ড. মো. আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বর্তমানে খুবই সম্ভাবনাময় বিষয়। দিন দিন এর গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে গবেষণার ক্ষেত্র। এটি খাদ্য উৎপাদন, খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি, শিল্প ও গবেষণার সঙ্গে সরাসরি জড়িত একটি গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর, যা আমাদের জীবনযাত্রাকে উন্নত করতে সহায়ক এবং উন্নত ক্যারিয়ারের নিশ্চয়তাও রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তা ও গুণগত মান নিশ্চিত করা,খাদ্য পণ্যের শেলফ লাইফ বৃদ্ধি করা,উদ্ভাবন ও নতুন খাদ্য পণ্য তৈরি, শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি, জনস্বাস্থ্য রক্ষা ইত্যাদি সেক্টরে নিজের অবদান রাখার জন্য, সর্বোপরি নিজের একটা উন্নত ক্যারিয়ার গড়ার জন্য একজন শিক্ষার্থীকে ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করা উচিত।’

সরকারি চাকরিতে কেমন সুযোগ-সুবিধা আছে, জানতে চাইলে প্রভাষক মো. মোস্তফা কামাল বলেন,‘বাংলাদেশে ফুড ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য সরকারি খাতে চাকরির সুযোগ ধীরে ধীরে বাড়ছে। বর্তমানে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (BFSA), বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (BCSIR), বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন (BSTI), খাদ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয় অধীনস্থ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউ , শিল্প মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে ফুড ইঞ্জিনিয়ারদের প্রয়োজনীয়তা দেখা যায়।’

তিনি বলেন, ‘এসব প্রতিষ্ঠানে সাধারণত নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা, খাদ্য পরিদর্শক, সায়েন্টিফিক অফিসার, টেকনিক্যাল অফিসার, রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট, পুষ্টিবিদ কিংবা কনসালটেন্ট পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। পাশাপাশি, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে প্রভাষক, সহকারী অধ্যাপক বা গবেষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়, যা শিক্ষকতার পাশাপাশি গবেষণার সুযোগও এনে দেয়। যদিও সরকারি চাকরির সুযোগ এখনো তুলনামূলকভাবে সীমিত। তবে খাদ্য নিরাপত্তা, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত গুরুত্ব বৃদ্ধির ফলে ভবিষ্যতে এই খাতে চাকরির সুযোগ আরও বাড়বে বলে ধারণা করা যায়। ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রাজুয়েটদের উচিত সরকারি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিগুলোর দিকে নজর রাখা এবং যথাযথ প্রস্তুতি নেওয়া।’

বেসরকারি খাতে ক্যারিয়ার গড়ার কেমন সুযোগ সুবিধা আছে, এ বিষয়ে বিভাগের প্রভাষক মো. এন্তাদুজ্জামান জনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ফুড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে গ্রাজুয়েটদের জন্য প্রধান কর্মক্ষেত্র হলো দেশজুড়ে বিভিন্ন স্বনামধন্য ফুড প্রসেসিং ও ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি। নিউজিল্যান্ড ডেইরি, ড্যান ফুডসসহ বেশ কিছু বহুজাতিক কোম্পানিতে খাদ্য প্রকৌশলের গ্রাজুয়েটরা সফলভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। দেশের উল্লেখযোগ্য খাদ্য প্রক্রিয়াজাত প্রতিষ্ঠান যেমন প্রাণ, আকিজ, স্কয়ার, নেসলে, নাবিস্কো, ইগলু, পোলার, কাজী ফার্মস, আড়ং ও সিপি ফুডসে নিয়মিতভাবে ফুড ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়োগ দেওয়া হয়।’

তিনি আরও জানান, পাশাপাশি, নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনাল, গেইন-এর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোতেও উচ্চ বেতনে কাজ করার সুযোগ রয়েছে এই পেশার গ্রাজুয়েটদের জন্য। নিজ দেশের মধ্যে এতো সুযোগ থাকায় ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং দিন দিন শিক্ষার্থীদের পছন্দের সাবজেক্ট হয়ে উঠছে।’