হাটহাজারীতে আহমদ শফীর মাদ্রাসায় বিদ্রোহ, থমথমে ক্যাম্পাস


চট্টগ্রাম | Published: 2020-09-17 02:25:45 BdST | Updated: 2024-04-25 09:44:38 BdST

চট্টগ্রামের হাটহাজারী দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদরাসা থেকে হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানীকে বহিষ্কারের দাবিতে বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থীরা।

আজ বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) জোহরের নামাজের পর মাদ্রাসার মাঠে ছাত্ররা এ বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় তারা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আল্লামা শফী বর্তমানে বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। তার এই অসুস্থতার সুযোগে কোনো নিয়মনীতি না মেনেই হাটহাজারী মাদরাসা থেকে শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করছেন আনাস মাদানী। এছাড়া হাটহাজারী মাদরাসা, হেফাজতে ইসলাম ও কওমি মাদরাসা বোর্ডের (বেফাক) ওপর প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ উঠেছে আনাস মাদানীর বিরুদ্ধে।

সাঈদ বিন নাসের নামে বিক্ষোভকারী এক শিক্ষার্থী জানান, আল্লামা শফী পুত্র আনাস মাদানীকে মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কারের দাবিতে মাদ্রাসার শত শত ছাত্র এখন মাঠে নেমেছে। সাধারণ ছাত্রদের হয়রানি, মাদ্রাসাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে এই আন্দোলন চলবে।

জানা গেছে, হাটহাজারী মাদ্রাসা, হেফাজতে ইসলাম ও কওমি মাদরাসা বোর্ড নিয়ে (বেফাক) দীর্ঘদিন ধরেই অভ্যন্তরীণ সমস্যা চলছিল। এ নিয়ে হেফাজত আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী ও সংগঠনটির মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীর মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি হয়।

.

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ছবি ও ভিডিওতে দেখা গেছে, মাদ্রাসার সব গেট তালাবদ্ধ করে রাখার পাশাপাশি শিক্ষকদেরও অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া আনাস মাদানীর রুমে ভাঙচুর চালিয়েছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এছাড়া প্রশাসন যাতে মাদ্রাসার ভেতরে ঢুকে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ না করে সেজন্য ছাত্ররা মসজিদের মাইকে বারবার মাইকিং করছেন।

বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের পক্ষ থেকে মাদরাসার মাইকে বেশকিছু দাবি ঘোষণা করা হয়।

দাবিগুলো হলো,

এক. মাওলানা আনাস মাদানীকে অনতিবিলম্বে মাদরাসা থেকে বহিষ্কার করতে হবে।
দুই. ছাত্রদের প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ সুবিধা প্রদান ও সকল প্রকার হয়রানি বন্ধ করতে হবে।
তিন. শায়খুল হাদিস আল্লামা আহমদ শফী অক্ষম হওয়ায় মহাপরিচালকের পদ থেকে সম্মানজনকভাবে অব্যাহতি দিয়ে উপদেষ্টা বানাতে হবে।
চার. উস্তাদদের পূর্ণ অধিকার ও নিয়োগ-বিয়োগকে শুরার নিকট পূর্ণ ন্যস্ত করতে হবে।
পাঁচ. বিগত শুরার হক্কানী আলেমদেরকে পুনর্বহাল ও বিতর্কিত সদস্যদের পদচ্যুত করতে হবে।

.

এ সময় ছাত্ররা প্রশাসনের উদ্দেশে বলেছে, আমাদের আন্দোলন মাদরাসার অভ্যন্তরীণ বিষয়। তাই এ বিষয়ে আপনারা হস্তক্ষেপ করবেন না। মাদরাসার শুরা সদস্যগণ এসে দাবী না মানা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলতে থাকবে বলে তারা জোর দাবী জানান।

এদিকে মাওলানা আহমদ শফি তার ছেলের ব্যাপারে সমস্ত অভিযোগ জানতে চেয়েছেন। পাশাপাশি তিনি ছাত্র জনতার কাছে কিছু সময় চেয়েছেন। এ সময় ছাত্ররা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, ‘সময়ে সময়ে বহু সময় চলে গেছে, আবারও সময়ের কথা বলে আমাদেরকে আপনার কথা অমান্য করতে বাধ্য করবেন না।’

ছাত্ররা এ সময় সাময়িকের জন্য পাঁচ দফা থেকে এক দফা দাবিতে চলে আসে। তাদের একটাই দাবি, আজকেই শূরার বৈঠক ডাকতে হবে। যাদের দ্বারা সম্ভব তারা উপস্থিত হবেন। তাদের নিয়ে ছাত্রদের সমস্ত দাবি নিঃশর্তে মেনে নিতে হবে।

এদিকে প্রশাসনের দিকে হুশিয়ারী উচ্চারণ করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রশাসন যদি প্রতিষ্ঠানের ভিতরে ঢুকে আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে ব্যাঘাত ঘটায় তবে আমাদেরও ভিন্ন পথে হাঁটতে হবে।

জানা গেছে, ছাত্ররা আন্দোলনের ফাঁকে নামাজের সময় হলে মাদরাসার মাঠেই নামাজ আদায় করে নেয়।