'শেখ হাসিনা: নবজাগরণের প্রমিথিউস'


Dhaka | Published: 2021-09-28 03:19:08 BdST | Updated: 2024-04-25 02:44:56 BdST

আশির দশকের কথা তখন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সামরিক স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনের বিরোধীদলীয় নেত্রী। একদিন খ্যাতনামা কবি হাসান হাফিজুর রহমানের সাথে আলাপের সময় শেখ হাসিনাকে তিনি ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করছিলেন। শেখ হাসিনা কবিকে প্রশ্ন করলেন, ‘আমি আপনার অনেক ছোট , আপনি আপনি করছেন কেন?’ তখন কবি বঙ্গবন্ধুকন্যাকে জবাব দিলেন, ‘শেখ হাসিনা, আপনিই তো বাংলাদেশ।’

স্বাধীনতার মহান স্থপতি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর দীর্ঘ ২৩ বছরের সংগ্রামী জীবনের আত্মত্যাগের মধ্য বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে ৩০ লক্ষাধিক শহীদ ও লাখো মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে ভীনদেশী পাকিস্তানী শোষণ থেকে মুক্ত করে বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি চিরকাল একটি অসাম্প্রদায়িক, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন সে স্বপ্নকে আজ বাস্তবে পরিণত করেছেন তাঁরই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা। 

বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা কালজয়ী ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি দেশের পরনির্ভরশীলতার তীব্র সমালোচনা করে তাঁর এক বক্তব্যে বলেন, 'ভিক্ষুক জাতির ইজ্জত থাকেনা। বিদেশ থেকে পয়সা এনে দেশকে গড়া যাবে না। দেশের মধ্যেই পয়সা করতে হবে।'

বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতার সুবিবেচিত নির্দেশনাকে উপলব্ধী করে অর্থনৈতিকভাবে বৈশ্বিক সাহায্যের প্রতি বাংলাদেশের অতিনির্ভরশীলতার চিরায়ত ধারাকে পরিবর্তন করার দুঃসাহসী স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণর করেছেন । বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে একটি স্বাবলম্বী দেশে প্রতিষ্ঠিত করার প্রায় অসম্ভব স্বপ্ন দেখানোর পাশাপাশি নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর ন্যায় অগণিত বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে ও বিশ্বের একাধিক দরিদ্র দেশকে ঋণপ্রদান করে বাঙালির চিরআরাধ্য সে অসম্ভব স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করে বাঙালির আত্মসম্মান অর্জনের বিপ্লবকে সফল ও স্বার্থকভাবে সম্পন্ন করেছেন। যা কার্যত বাংলাদেশের জন্য একটি সফল বিপ্লব হিসেবে বিবেচিত হয়।

এছাড়াও, রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রসারণ ঘটিয়েই ক্ষান্ত হননি। তিনি প্রতিবেশি দেশ ভারত ও মায়ানমারের কাছ থেকে বাংলাদেশের হিস্যা অনুযায়ী প্রায় আরেকটি বাংলাদেশের সমপরিমাণ জলসীমা বিজয় করেন, ভারতের সাথে ছিটমহল সমস্যার সমাধান করে বাংলাদেশের আরেকটি অকল্পনীয় বিপ্লবকে বাস্তবতায় পরিণত করেছেন বাংলার ইতিহাসের সফলতম রাষ্ট্রনায়ক দেশরত্ন শেখ হাসিনা। বাংলার কোটি মানুষের জন্য যা ছিলো সুদূরপরাহত অকল্পনীয় বিষয়, যে দুঃসাহস পূর্বের কোন রাষ্ট্রপ্রধান দেখাতে পারেনি তাই সফলভাবে সম্পন্ন এবং বাস্তবতায় পরিণত করেছেন বাঙালির আশা ভরসা ও স্বপ্নজয়ের প্রমিথিউস বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ।


বাংলাদেশের আবহমান সমাজব্যবস্থার পুরুষতান্ত্রিক চিন্তা-ভাবনা দ্বারা সুদীর্ঘকাল ধরে নিষ্পেষিত হয়ে আসা বাঙালি নারীসত্তাকে পুনরুজ্জ্বীবিত করে বাংলার নারীসমাজকে রাজনৈতিক,সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির সাহসী আলোর মিছিলে নেতৃত্বদানের সুযোগ করে দিয়েছেন শেখ হাসিনা। আজ বাংলায় নারী-পুরুষের শিক্ষাগত বৈষম্য নেই বললেই চলে। দেশের প্রথম নারী স্পিকার, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, মন্ত্রীসহ সামরিক ও বেসামরিক প্রতিটি অঙ্গনে নারী জাগরণের অনন্য দিকপাল হিসেবে যে অনবদ্য বিপ্লব ঘটিয়েছেন শেখ হাসিনা তা ইতিহাসে অমলিন হয়ে থাকবে। যে সাহসের প্রমাণ কেউ রাখেনি আগে বছরের প্রথমদিন কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে নতুন পাঠ্যবই শিক্ষা সরঞ্জাম তুলে দেওয়া, বিনামূল্যে দ্বাদশ শ্রেনি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার বৃত্তি প্রদানের মত বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত হয়েছে বঙ্গবন্ধুকন্যার হাত ধরে। কোনরূপ দলীয়করণকে প্রশ্রয় না দিয়ে প্রতি বছর নির্ধারিত স্বল্পসময়ের মধ্যে স্বচ্ছতার সাথে বিসিএস পরীক্ষা সহ সকল সরকারি চাকরির পরীক্ষাসমূহ আয়োজন করে দেশের অগণিত মেধাবী গ্রাজুয়েটকে যোগ্যতার ভিত্তিতে মূল্যায়নের মাধ্যমে সম্মানজনক চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ করে দেওয়ার মত স্বদেশপ্রেমের অনন্য দৃষ্টান্ত শেখ হাসিনার পূর্বে কোন রাষ্ট্রপ্রধান দেখাতে সক্ষম হয়নি।

পিতামাতা,আদরের ভাই বীরমুক্তিযোদ্ধা শহীদ শেখ কামাল ও তাঁর নবপরিণীতা স্ত্রী জাতীয় এথলেট সুলতানা কামাল ,বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ শেখ জামাল ও তাঁর স্ত্রী রোজী জামাল এবং প্রাণপ্রাচুর্যের অমিত সম্ভাবনার দেবশিশু শহীদ শেখ রাসেল সহ নিকট আত্মীয় পরিজন সবাইকে হারিয়ে সর্বহারা শেখ হাসিনা একমাত্র সহোদরা শেখ রেহানাকে নিয়ে তাঁর সংগ্রামী জীবনে অজস্র প্রতিকূলতার শ্বাপদসঙ্কুল পথ অতিক্রম করে পিতার স্বপ্নকে আজ বাস্তবে পরিণত করে চলেছেন । স্বপ্নজয়ের এ অদম্য যাত্রায় এক অবিনাশী ধ্রুবতারা হিসেবে তিনি আলোকিত করে চলেছেন বাংলার প্রতিটি ঘরকে।  জাতির পিতাকে স্বপরিবারে হত্যাকারী একাত্তরের পরাজিত স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ও সামরিক স্বৈরাচারের দীর্ঘ দুর্বৃত্তায়িত দুঃশাসনে আপাদমস্তক দুর্নীতিতে নিমজ্জিত কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য থেকে অনেকটা পিছিয়ে পড়া দুর্ভাগা পিতৃহীন জাতিকে তিনি ঘুরে দাড়াতে নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন। 'শেখ হাসিনার উদ্যোগ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ' স্লোগানকে প্রতিপাদ্য করে দেশ আজ শতভাগ বিদ্যুৎসুবিধার আওতায় এসেছে। গহীন পাহাড়ি আরণ্যক জনপদ থেকে শুরু করে সুদূরের বালুকাময় দ্বীপেও বিদ্যুতের আলো পৌছে দেয়ার নেপথ্য কারিগর শেখ হাসিনা। দেশের জাতীয় সক্ষমতার এ বৈপ্লবিক অর্জনের সুফল ভোগ করবে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। 

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে মূল্যায়ন করে উল্লেখ করেন, "বর্তমানে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক উন্নতি, দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে উন্নতির মতো বিষয়গুলো এ দেশের মানুষের সামনে নতুন নতুন সম্ভাবনা এনে দিয়েছে।"

বাংলাদেশের শিক্ষিত তরুণ সমাজ সচেতনভাবে এ রাষ্ট্রের সামগ্রিক ইতিহাস পর্যালোচনার মাধ্যমে বিচারবুদ্ধি দিয়ে চিন্তা করলেই বুঝতে পারবেন যে, সত্যিকার অর্থেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের প্রত্যেকটি সেক্টরে ইতিবাচক পরিবর্তন ও অর্জনের অভাবনীয় বিপ্লব ঘটে গেছে। মহাকাশে লালসবুজের পতাকা, পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল,গভীর সমুদ্রবন্দর,বাংলাদেশে প্রাইভেটকার উৎপাদন, দেশব্যাপী ইপিজেড স্থাপন, প্রতিটি বিভাগে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ বহুমুখী উন্নয়নযজ্ঞ সবই বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় একেকটি বিপ্লবের সমান।

শেখ হাসিনা পরিবারের সবাইকে হারানোর মর্মবেদনার পাথরবিদ্ধ হৃদয় নিয়ে বাংলার মাটিতে ফিরে এসেছিলেন। বাংলা মায়ের অদম্য সাহসী সন্তান শেখ হাসিনা সামরিক স্বৈরাচারের বন্দুকের নলকে পদদলিত করে মা, মাটি ও কোটি মানুষের মলিনমুখে হাসি ফোটানোর স্বপ্ন নিয়ে, পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার দৃঢ় শপথ নিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে তারিখে মাতৃভূমিতে প্রত্যাবর্তন করেন বাংলার কোটি মানুষ অকৃত্রিম অনুরাগে আবাহন করে নেয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকারকে । 

বাংলার আপামর মানুষ যখন সার্বিকভাবে তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত, তখন গণমানুষের অধিকার আদায়ের মুখপাত্র হিসেবে রাজপথে দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলার মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হন শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেই শেখ হাসিনা যে অভূতপূর্ব অর্জনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে সম্মানিত করেছে নিঃসন্দেহে তা দেশ ও জাতির জন্য গৌরবের।  বাংলাদেশকে একসময় 'তলাবিহীন ঝুড়ি' বলে কটাক্ষ করা বিশ্বমোড়লরাষ্ট্রগুলোও বাংলার অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক অর্জনের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। এমনকি বাঙালির জন্মশত্রু পাকিস্তানের সাংসদরাও তাদের সংসদে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের প্রতি মিনতি করে বলেন, '(আল্লাহর ওয়াস্তে আগামী ১০ বছরের মধ্যে আমাদের বাংলাদেশের মতো বানিয়ে দাও)।'


সম্প্রতি জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন সংক্রান্ত নবম বার্ষিক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের পূর্ণ অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে 'Crown Jewel (মুকুট মনি)' উপাধিতে ভূষিত করা হয়। এই অধিবেশনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশিষ্ট উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ জেফ্রি স্যাক্স বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার সঙ্গে একসাথে হতে পেরে আমরা আনন্দে উদ্বেলিত। আমরা আপনার কথা শুনতে চাই, বিশেষ করে এই জন্য যে, আমরা যখন পৃথিবীর দেশগুলোর টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের অগ্রগতি বিশ্লেষণ করি যা প্রতিবছর জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন সমাধান নেটওয়ার্ক করে থাকে, ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অগ্রগতিতে বিশ্বে প্রথম হয়েছে। তাই আমরা সেই অর্জনের জন্য আপনাকে অভিনন্দন জানাতে চাই।” 

আজ ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন। প্রাণের নেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা আপার জন্মদিনের এই শুভলগ্নে তাঁর সার্বিক সুস্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। আপার প্রতি নিবেদন করছি কালজয়ী সব্যসাচী কবি সৈয়দ শামসুল হকের কালোত্তীর্ণ শিল্পীত অনুরাগ , 

''আহা, আজ কী আনন্দ অপার
শুভ শুভ জন্মদিন দেশরত্ন শেখ হাসিনার

জয় জয় জয় জয় বাংলার
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু স্বপ্নবাহু তাঁর
শুভ শুভ জন্মদিন দেশরত্ন শেখ হাসিনার

পঁচাত্তরের কলঙ্কিত সেই রাত্রির পর
নৌকা ডোবে নদীর জলে
সবাই বলে নৌকা তুলে ধর
কেইবা তোলে কে আসে আর
স্বপ্নবাহু তাঁর
বঙ্গবন্ধুকন্যার
শুভ শুভ জন্মদিন দেশরত্ন শেখ হাসিনার।''

লেখক:
ইয়াসির আরাফাত(তূর্য),
সাংগঠনিক সম্পাদক,
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।