শেখ হাসিনা: বাঙালীর মুক্ত পথের আলোক বর্তিকা


Dhaka | Published: 2021-09-28 03:23:43 BdST | Updated: 2024-03-29 20:58:49 BdST

১৯৪৭ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের কোল আলো করে আসে এক কন্যা সন্তান, ডাক নাম হাসু। পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছার পাচ সন্তানের ভিতর তিনি ছিলেন সবার বড়। জন্মস্থান টুঙ্গিপাড়াতেই তার শিক্ষা জীবন শুরু হয়।

১৯৫৪ সাল, ছোট্ট হাসুর বয়স তখন আট। তিনি তার পরিবারের সাথে চলে আসেন ঢাকাতে, বসবাস শুরু করেন মোগলটুলির রজনীবোস লেনের একটি বাড়িতে তার পরিবারের সাথে। পিতা মুজিব ৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের পর মন্ত্রী হলে চলে আসেন মিন্টো রোডের সরকারী বাসভবনে। ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নাম্বারের বাড়িতে বসবাস শুরু করেন ১৯৬১ সালের অক্টোবর থেকে।

টিকাটুলির নারী শিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে তার মাধ্যমিক শিক্ষা জীবনের শুরু। মাধ্যমিক গন্ডি পেরোনো সদ্য তরুনী হাসু ১৯৬৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা জীবন শেষ করেন তৎকালীন সরকারী উচ্চ মাধ্যমিক মহিলা কলেজে (বর্তমানঃ সরকারী বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ)।

হাসু থেকে জননেত্রী শেখ হাসিনা হয়ে ওঠার গল্পটি এতটা সহজ এবং মসৃন ছিলোনা। পথের বাকে বাকে ছড়ানো কাটার আঘাত সহ্য করে জীবন বাজী রেখেই তিনি দেশরত্নে পরিনত হয়েছেন।

১৯৬২ সাল স্বৈরাচার আউব বিরোধী আন্দোলনে উত্তাল পূর্ব পাকিস্তান। সেই স্বৈরাচার আউব বিরোধী আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন সদ্য তরুনী শেখ হাসিনা। তখন তিনি সবেমাত্র স্কুলের ছাত্রী। আউব বিরোধী আন্দোলনের সময় স্কুল ছাত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ছাত্রীরা আজিমপুর গার্লস স্কুল থেকে সরাসরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আউব বিরোধী মিছিলে অংশগ্রহন করেছিলো।

উচ্চ মাধ্যমিক কলেজে অধ্যায়নরত অবস্থায় ১৯৬৬-৬৭ শিক্ষাবর্ষে তিনি কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। এখান থেকেই তিনি রাজনীতির সাথে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত হন, এই কলেজে ছাত্রলীগের অবস্থানকে সুদৃঢ় করতে তাকে সাংগঠনিক নেতৃত্বের দায়িত্ব দেওয়া হয়। উচ্চা মাধ্যমিক শিক্ষা জীবন শেষ করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চা শিক্ষা গ্রহন করেন। অধ্যায়নরত অবস্থায় ১৯৬৭ সালের ১৭ই নভেম্বর তিনি পরমানু বিজ্ঞানী জনাব ওয়াজেদ মিয়ার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

১৯৬৯ সালের ঐতিহাসিক গনঅভ্যুত্থানের অগ্রভাগের সৈনিক ছিলেন শেখ হাসিনা। ১৯৬৯ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সদস্য এবং রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রায় সাত থেকে আট মাস তিনি পরিবারের সাথে গৃহবন্দী অবস্থায় ছিলেন ধানমন্ডির ঐতিহাসিক বাড়িতে।মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে অসামান্য অবদান রাখেন এবং বঙ্গমাতা শেখ ফলিজাতুন্নেসা মুজিবকে অনুপ্রেরণা এবং সাহস যোগাতেন কন্যা শেখ হাসিনা।

গৃহবন্দী থাকা অবস্থায় শেখ হাসিনা প্রথম মাতৃস্বাদ গ্রহন করেন। ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই তার কোল আলো করে জন্মলাভ করে তার প্রথম সন্তান জয়।

১৭ই ডিসেম্বর ১৯৭১,পাকিস্তানী সামরিক জান্তা কতৃক গৃহবন্দী অবস্থা থেকে পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে তিনিও মুক্তি লাভ করে।

১০ই জানুয়ারী ১৯৭২, স্বাধীন বাংলার বুকে মাথা উচু করে ফিরে আসেন বঙ্গবন্ধু। যুদ্ধ বিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশকে নতুন ভাবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার নিয়ে কাজ শুরু করেন। অনেক সীমাবদ্ধতা ভেতর শুরু হয় আরেক যুদ্ধ, সেটা দেশ গঠনের যুদ্ধ। পিতা মুজিবকে এই কাজে অনুপ্রেরণা যোগাতেন কন্যা শেখ হাসিনা।

০৯ই ডিসেম্বর ১৯৭২, তার কোল জুড়ে আসে তার কন্য সন্তান পুতুল। তারপরের বছর অর্থাৎ ১৯৭৩ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন।

পিতা মুজিব যখন একটি ভঙ্গুর রাষ্ট্রকে সাজাতে ব্যস্ত তখন দেশি-বিদেশি দেশবিরোধী ব্যক্তিবর্গ বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে ব্যস্ত। তারা স্বাধীন রাষ্ট্রে একদিনের জন্যও বঙ্গবন্ধুকে শান্তিতে থাকতে দেইনি। অর্থনৈতিক সংকট, মানব সৃষ্ট রাজনৈতিক প্রপাগাণ্ডা প্রাকৃতিক দূর্যোগ নানাবিধ সমস্যার ভেতর দিয়েই এগিয়ে যেতে থাকেন বঙ্গবন্ধু। এভাবেই চলতে থাকে ১৯৭৫ সাল প্রযন্ত।
স্বাধীন বাংলাদেশের সকল ধরনের বিশৃঙ্খলা এবং অরাজকতা দূর করতে বঙ্গবন্ধু বাকশাল গঠনের সিদ্ধান্ত নেন। তখন চারিদিকে গভীর ষড়যন্ত্র এবং চরম অস্থিরতা বিরাজমান সদ্যোজাত বাংলাদেশে।

১২ই মার্চ ১৯৭৫ সাল, স্বামী পরমানু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সাথে দুই সন্তান সহ বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা জার্মানীর উদ্দেশ্যে দেশ ত্যাগ করেন, সাথে ছোট বোন শেখ রেহেনা।। সেখানে পৌছে টুকটাক পরিবারের সাথে যোগাযোগ রেখেছিলেন বঙ্গবন্ধুর কন্যাদ্বয়।

বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের মাত্র পাচ মাসের মাথায় ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট বাংলাদেশে ঘটে গেলো পৃথীবির সবচেয়ে ন্যাক্কারজনক রাজনৈতিক হত্যাকান্ড; বিপদগামী কিছু সেনা সদস্যদের হাতে স্বপরিবারের নিহত হলেন পিতা মুজিব।।

জার্মানীতে অবস্থানরত বঙ্গবন্ধুর কন্যদ্বয় তখনো জানতেন না তার পরিবারের ওপর ঘটে যাওয়া নির্মম ঘটনার কথা। বাংলাদেশের জার্মান রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী সর্বপ্রথম ঘটনাটি জানিয়েছিলেন। সেদিন স্বামী ওয়াজেদ মিয়ার সাথে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার প্যারিস যাওয়ার কথা ছিলো। এমন কিংকর্তব্যবিমূঢ় সংবাদে তাদের প্যারিস যাত্রা বাতিল হয়।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন বাংলাদেশের বুকে নেমে আসে অসীম আধার অন্যদিকে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার জীবনে নেমে আসে অমানিষার অন্ধকার। স্বামী ড.ওয়াজেদ মিয়া এবং এবং ছোট বোন শেখ রেহেনাকে নিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা শুরু করেন অন্যএক কঠিন সংগ্রামী জীবনযুদ্ধ।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর খুব কাছের শুভাকাঙ্ক্ষী মনে করা অনেকেই অচেনা হয়ে গিয়েছিলেন। নিজ নিরাপত্তার স্বার্থে দেশবিদেশে অবস্থানরত অনেকেই এড়িয়ে গেছেন বঙ্গবন্ধুর কন্যাদ্বয়কে। তখন অকৃত্রিম শুভাকাঙ্ক্ষী হয়ে নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও পাশে দাড়িয়েছিলেন তৎকালীন বাংলাদেশের জার্মান রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন রশিদ চৌধুরী। অর্থনৈতিক এবং মানসিক দুই ভাবেই বঙ্গবন্ধুর কন্যদ্বয়ের পাশে থেকে সাহস যুগিয়ে ছিলেন তিনি। কখনো জার্মানী কখনো ভারতে আশ্রয় নিয়ে কোনমতে টিকে ছিলেন বোন রেহেনাকে নিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর অকৃত্রিম রাজনৈতিক সহযোগী ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দ্রাগান্ধী পরম মমতায় চরম স্পর্শকাতর সময়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার পাশে থেকে সাহস যুগিয়ে ছিলেন।

১৪ই ফেব্রুয়ারী ১৯৮১, ভারতে নির্বাসিত জীবন যাপনরত অবস্থায় ইডেন হোটেলে অনুষ্ঠিত আওয়ামীলীগের ঐতিহাসিক কাউন্সিলে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে সর্বসম্মতিক্রমে ঐক্যের প্রতীক হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়।।

১৭ই মে ১৯৮১, বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। দীর্ঘ সাত বছরের নির্বাসিত জীবন যাপন শেষে জননেত্রী শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। লক্ষ লক্ষ মানুষ সেদিন বঙ্গকন্যাকে সাদরে গ্রহণ এবং বরন করেছিলেন তেজগাঁও বিমান বন্দর থেকে। দেশে ফিরে তিনি ত্রানকর্তা হিসেবে হাল ধরেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের।

৩০শে মে ১৯৮১, একদল সেনাবিদ্রোহীদের হাতে চট্টগ্রামে খুন হন মেজর জিয়া। দেশের সাংবিধানিক অধিকার এবং দেশের পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখার ওপর গুরুত্ব আরোপ করার ঘোষনা দেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। বন্দুকের মুখে পুনরায় সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করে ক্ষমতা দখল করে এবার হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ;আবার শুরু হয় সামরিক শাসন।

এর মাঝেই ১৯৮১ সালের জুন মাসের মধ্য সময়ে তৎকালীন সরকার ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারের ঐতিহাসিক বাড়িটি জননেত্রী শেখ হাসিনাকে বুঝিয়ে দেন বঙ্গবন্ধু কন্যার জোর দাবির কারণে।

গনতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনতে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে থাকেন বঙ্গকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা। তিনি জনমত গড়ে তুলতে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলিকে একত্র করে একটি মোর্চা গঠন করেন।

জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলি রাজনৈতিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলো; এর প্রেক্ষিতে ১৯৮১ সালের ১লা এপ্রিল ঘরোয়া পরিবেশে রাজনৈতিক চর্চার অধিকার দেই এরশাদ সরকার। তারপরও থামেননি জননেত্রী শেখ হাসিনা সম্পূর্নরুপে রাজনৈতিক স্বাধীনতা এবং অধিকার পুনঃউদ্ধারের দাবি আদায় না হওয়া প্রযন্ত।

জননেত্রী শেখ হাসিনার জীবনে শুরু হয় নতুন আরেক সংগ্রামী জীবন। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বৈর শাসনের বিপক্ষে ধীরে ধীরে আন্দোলন গড়ে উঠতে থাকে।

১৫ই ফেব্রুয়ারী ১৯৮৩, সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বঙ্গকন্যার গনতন্ত্র পুনঃউদ্ধার সংগ্রামের পথকে রোধ করতে ত্রিশজন নেতাকর্মী সহ শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করে। ১লা মার্চ তিনি মুক্তি লাভ করেন।

১৪ই নভেম্বর ১৯৮৩, রাজনৈতিক পরিবেশ ফিরিয়ে দিতে রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় স্বৈরাচারী এরশাদ সরকার। অতপরঃ শুরু হয় জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সংসদীয় গনতন্ত্র পুনঃউদ্ধারের জন্য সংসদ নির্বাচন দাবির আন্দোলন।।
সংসদ নির্বাচনের দাবিতে সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচীতে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলিবর্ষণ এবং বোমাহামলা করা হয়। সেই রাতে পুনরায় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাজনৈতিক কর্মকান্ডকে স্থগিত ঘোষনা করে, জননেত্রী শেখ হাসিনা হন গৃহবন্দী।
১৪ই ডিসেম্বর তিনি এই বন্দীদশা থেকে মুক্তি লাভ করেন।

০৭ই জানুয়ারী ১৯৮৪, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ পুনরায় ঘরোয়া রাজনীতির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন। একই সাথে উপজেলা নির্বাচনের তারিখ ঘোষনা করেন।
কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনা এই উপজেলা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেন এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পক্ষে জোড়ালো দাবি জানান। এইদিন জননেত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষনা করেন। উত্তাল হতে থাকে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। এই আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ই অক্টোবর নির্বাচনের তারিখ ঘোষনা করেন প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। নির্বাচন আয়োজনে নানা ধরনের অসঙ্গতির অভিযোগে জননেত্রী শেখ হাসিনা এই নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করেন।

১৪ই সেপ্টেম্বর ১৯৮৪, জননেত্রী শেখ হাসিনা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের অয়োজনে এক প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্টের পরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করা সকল সরকারকে অবৈধ্য এবং অসংবিধানিক বলে আখ্যায়িত করেন।
একই বছর তিনি আলজিয়ার্সে অনুষ্ঠিত আফ্রো-এশীয় গনসংহতি পরিষদে যোগদান করেন।

১৯৮৫ সালে ইয়াসির আরাফাতের আমন্ত্রনে মমধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনার বিষয়ে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহন করেন।

অনেক দর কষাকষি এবং রাজনৈতিক প্রতিরোধের কৌশল হিসেবে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে
১৯৮৬ সালের ০৭ই মে'র নির্বাচনে অংশগ্রহন করে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ। সেই নির্বাচনে তিনি প্রধান বিরোধীদলীয় সংসদ নেতা নির্বাচিত হন।

০৩রা জানুয়ারী ১৯৮৭ বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় এবং জননেত্রী শেখ হাসিনা কাউন্সিলের মাধ্যমে পুনরায় বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়।
এই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে NDIFIA বিশ্বের সকল নারীনেত্রীদের নিয়ে একটি কনভেশনের আয়োজন করে। সেখানে তিনি আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে অংশগ্রহন করেন।

১০ই নভেম্বর ১৯৮৭ জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অবরোধ কর্মসূচী পালিত হয়। সেখানে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্য গুলিবর্ষণ করা হলে নূর হোসেন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। সেই ঘটনার কয়েক ঘন্টা পর জননেত্রী শেখ হাসিনা একটি জনসভার আয়োজন করেন। সেই জনসভা জনসমুদ্রে পরিনত হয়েছিলো সেদিন। সেই জনসভা থেকেই জননেত্রী শেখ হাসিনা স্বৈরচার শাসক এরশাদের "একদফা দাবি" পদত্যাগ দাবি করেন। ১১ই নভেম্বর ১৯৮৭ তিনি পুনরায় গৃহবন্দী হন এবং ১০ই ডিসেম্বর তিনি মুক্তি পান।

১৯৮৮ সালের প্রথম দিকে তিনি দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ৭ম কংগ্রেসে যোগদান করেন। এখানে তিনি বিশ্ব শান্তি রক্ষায় নিরস্ত্রীকরন ও উন্নয়ন শীর্ষক প্রবন্ধ পাঠ করেন।
এর কিছুদিনের মধ্যে তিনি বিশ্বশান্তি পরিষদের প্রেসিডিয়াম বৈঠকে অংশগ্রহন করেন।

২৪শে জানুয়ারী ১৯৮৮ চট্টগ্রামের স্বৈরাচার বিরোধী মিছিল এবং জনসভার নেতৃত্ব দেন। এই জনসভাস্থলে পুলিশ বিডিআর যৌথভাবে গুলিবর্ষণ করে এতে নিহত হয় ১১জন; অনেকেই আহত হয়েছিলো সেদিন।
ঘটনার প্রবাহে স্বৈরাচারী সরকার বিরোধী আন্দোলন জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তীব্র থেকে আরও তীব্র আকার ধারন করতে থাকে। স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের পদত্যাগ গনদাবিতে পরিনত হয়।

১০ই আগষ্ট ১৯৮৯ জননেত্রী শেখ হাসিনা সেদিন ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারের ঐতিহাসিক বাড়িতে রাত্রিযাপন করা অবস্থায় ফ্রীডম পার্টির সন্ত্রাসীরা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্য গ্রেনেড হামলা চালায়।

১৯৯০ সালের জানুয়ারিতে স্বৈরাচারী এরশাদকে শান্তিপূর্ণ ভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরে অহবান জানান গনতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনা।
তার নেতৃত্বে এই সময় একটি সফল গনআন্দোলন গনঅভ্যুত্থানে রুপ নেয়। সকল কিছুই নিয়ন্ত্রনের বাহিরে চলে যায় স্বৈরাচার সরকারের, কোনঠাসা হতে থাকে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ১৯৯০ সালের অক্টোবর থেকে রাজনৈতিক ভাবে উত্তাল হয় বাংলাদেশ।

১০শে অক্টোবর ১৯৯০ জননেত্রী শেখ হাসিনার উদৌগে গঠিত হয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। স্বৈরাচার এরশাদের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ছাত্র সমাজ।
এমন এক অরাজক পরিস্থিতিতে ৪ঠা ডিসেম্বর ১৯৯০ স্বৈরাচার এরশাদ পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেয়। পতন ঘটে স্বৈরাচার শাসক এরশাদ সরকারের।

০৫ই ডিসেম্বর ১৯৯০, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ।
বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদের তত্ত্বাবধানে সংসদীয় গনতন্ত্র পুনঃউদ্ধারের নির্বাচন অনুষ্ঠানের সকল ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্য করা হয়।

২৭শে ফেব্রুয়ারী ১৯৯১, বহুকাঙ্খিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বধীন আওয়ামীলীগ সংসদের প্রধান বিরোধীদল নির্বাচিত হয়। সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত হন জননেত্রী শেখ হাসিনা। গনতন্ত্রের মানসকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষন এবং সাহসী রাজনৈতিক নেতৃত্বের কারনেই সংসদীয় গনতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা লাভ করে।।

১৯৯১ সালের সাধারণ নির্বাচনের পরাজয়ের ব্যর্থতার দায়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা ৩রা মার্চ আওয়ামীলীগের সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন এবং সাধারণ সম্পাদকের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন।
এই খবর ছড়িয়ে পড়লে আওয়ামীলীগের হাজার হাজার নেতাকর্মী ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নাম্বারের বাড়িতে সমাবেত হয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ পত্র প্রত্যাহারের দাবি জানাতে থাকে। এমন কি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক থেকে জননেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তকে পরিবর্তনের জন্য আহবান জানানো হয়।
অবশেষে জননেত্রী সেখ হাসিনা নেতাকর্মীদের তীব্র চাপের মুখে ০৫ই মার্চ পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করে নেন।

সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রী থাকা অবস্থায় ১৯৯১ সালে ০৭ই মার্চ উপলক্ষে আয়োজিত জনসভা থেকে জননেত্রী শেখ হাসিনা সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের দাবি জানান সরকারী দল বিএনপির কাছে।

১৪ই এপ্রিল ১৯৯১, বিষয়টি নিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সাধারণ বিল আকারে সংসদে
তোলা হয় বিরোধীদল আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে।
০৬ই আগষ্ট সংবিধান সংশোধনী বিলটি পাশ হয়।

০৭ই মার্চ ১৯৯২ জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একশ জন সংসদ সদস্য শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা গনআদালতে যুদ্ধ অপরাধী গোলাম আযমের ফাসির দাবিতে একাত্মতা ঘোষনা করেন।

১৬ই এপ্রিল ১৯৯২ জননেত্রী শেখ হাসিনা মহান জাতীয় সংসদে ট্রাইব্যুনাল গঠন করে গোলাম আযমকে বিচারের আওতায় আনার প্রস্তাব দেন সরকারী দলের কাছে।

১৯ এবং ২০ শে সেপ্টমম্বর ১৯৯২ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। জননেত্রী শেখ হাসিনা সর্বসম্মতিক্রমে পুনঃরায় বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।
১৯৯২ সালের ডিসেম্বর মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিশ্বশান্তি পরিষদের আন্তর্জাতিক সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শান্তিকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা।

২৪শে জানুয়ারি ১৯৯৩ চট্টগ্রামের একটি জনসভায় বক্তব্য রাখছিলেন সেখানে গুলিবর্ষন করা হয় জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্য। জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রানে বাচলেও সেদিন পঞ্চাশ জন নেতা কর্মী নিহত হয়েছিলো।

০২ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৪ ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফ্যাষ্ট কনফারেন্সে সম্মানীত অতিথি হিসেবে অংশগ্রহন করেন। একই বছর তিনি ইষ্টার্ন ভিষন ফেয়ারের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

২১ শে মার্চ ১৯৯৪ মাগুরা উপনির্বাচনে ব্যপক কারচুপি করে নির্বাচনে বিজয় ছিনিয়ে নেয় বিএনপি। এর প্রতিবাদে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সংসদ বর্জন শুরু করে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ। একই সাথে জননেত্রী শেখ হাসিনা কারচুপির নির্বাচনের প্রতিবাদে আন্দোলন কর্মসূচী ঘোষনা করে। শুরু হয় দেশব্যপী সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন।

০৫ এপ্রিল ১৯৯৪ নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের দাবিতে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ট্রেনমার্চ কর্মসূচী চলাকালে ঈশ্বরদীতে ট্রেনে গুলি বর্ষন করে বিএনপি পালিত সন্ত্রাসীরা।

১৪ই আগষ্ট ১৯৯৪ জননেত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বৃতি বিজড়িত ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নাম্বারের বাড়িটিকে "বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বৃতি জাদুঘর" হিসেবে রুপান্তর করেন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির বিপক্ষে শক্ত অবস্থান নেয় বিএনপি। ০৮ই ডিসেম্বর ১৯৯৪ সংসদ অধিবেশনের একটি বক্তব্যে সরকার দলীয় নেতা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেন শিশু আর পাগল ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয়। তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে বিএনপির অবস্থান সুস্পষ্ট হয় ম্যাডাম জিয়ার এই বক্তব্যের মাধ্যমে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বিরোধী দলের সকল সংসদ সদস্য পদত্যাগপত্র জমা দেন শেখ হাসিনার কাছে।

২৫শে ডিসেম্বর ১৯৯৪ জননেত্রী শেখ হাসিনা মিন্টো রোডে বিরোধী দলীয় নেত্রীর নামে বরাদ্দকৃত বাসভবন ত্যাগ করেন। ২৮ ডিসেম্বর একযোগে সকল বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্য একযোগে পদত্যাগ করে।

শুরু হয় ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি। একদিকে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অধিকাংশ বিরোধীদলগুলি মোর্চা গঠন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি প্রবর্তনের জন্য আন্দোলন করতে থাকে অন্যদিকে একতরফা নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহন করতে থাকে তৎকালীন সরকারীদলে থাকা বিএনপি। গনতন্ত্রের মানসকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা এই একতরফা নির্বাচন প্রস্তুতি প্রত্যাখ্যান করে এবং এই নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষনা দেন। তারপরও ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত হয় ৬ষ্ঠ একতরফা জাতীয় নির্বাচন। বিএনপি এবং ফ্রিডম পার্টি ছাড়া সকল রাজনৈতিকদল জননেত্রী শেখ হাসিনার আহবানে সাড়া দিয়ে এই নীলনকশার নির্বাচন বয়কট করে।
১৯৯৬ সালের ০১লা মার্চ থেকে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয় সরকারী দল বিএনপির বিরুদ্ধে। সকল শ্রেণী পেশার ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে ০৯ ই মার্চ গঠন করা হয় জনতার মঞ্চ। জননেত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ রাজনৈতিক নেতৃত্বে বিরোধী জোটে প্রবল রাজনৈতিক চাপ, গনদাবি এবং তীব্র জনরোষে কারনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুকে মেনে নিতে বাধ্য হয় বিএনপি সরকার।

২৫শে মার্চ ১৯৯৬ মহান জাতীয় সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বিল পাস হয় এবং ৩০শে মার্চ ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়ে সংসদ থেকে পদত্যাগ করে সরকারী দল বিএনপি।

বিচারপতি লতিফুর রহমানকে প্রধান করে তিন মাসের জন্য গঠিত দ্বিতীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
বিচারপতি লতিফুর রহমানের তত্ত্বাবধানে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১২ই জুন।
জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর দীর্ঘ একুশ বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে জনগনের ম্যান্ডেট নিয়ে নির্বাচনে ১৪৬টি আসনে জয়ী হয় বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ।

২৩শে জুন ১৯৯৬ বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের ৪৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষীকিতে জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রথম বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ বাক্যপাঠ করেন। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে আওয়ামীলীগ।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে এক সফল অধ্যায় রচিত হয় জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল প্রযন্ত। বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং অগ্রযাত্রায় অনন্য এবং অসামান্য অবদান রাখে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বধীন আওয়ামীলীগ সরকার।
জনগনের ক্রয়সীমার ভেতর দ্রব্যমূল্যের হার নিয়ন্ত্রন, ভারতের সাথে দীর্ঘদিনের অমিমাংশিত গঙ্গা পানি বন্টন চুক্তি, যুদ্ধঅপরাধের বিচার পরিচালনার জন্য ট্রাইবুনাল গঠন পক্রিয়ার সূচনা, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার পক্রিয়ার সূচনা, বিশ্ব দরবার থেকে ২১শে ফেব্রুয়ারী মহান শহীদ দিবসকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি ও মর্যাদা আদায়। নায্যমূল্যে কৃষি উপকরণ সার বিতরণের ব্যবস্থা, যোগাযোগ যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতিসাধন। খেলাধূলায় প্রভুত্ব উন্নয়ন সাধন, মোবাইল ফোনের বাজার এবং নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি বাজার জনগনের কাছে উম্মুক্তকরন। মুক্ত গনযোগাযোগ এবং সম্প্রচার নীতিমালা প্রনয়ন , স্যাটেলাইট মাল্টিমিডিয়ার আত্মপ্রকাশে সহায়তা এবং সম্প্রসারণের উদৌগ গ্রহন, মুক্তবাজার অর্থনীতি ও মুক্ত বানিজ্যে উৎসাহীতকরন, নারীর ক্ষমতায়ন এবং নারী নিরাপত্তা নিশ্চিত করন, নারী শিক্ষায় উৎসাহীতকরন ছিলো উন্নয়ন যাত্রার অন্যতম রুপকল্প।।

ব্যাপক উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের মধ্যদিয়ে জুলাই ২০০১ সালে মেয়াদ শেষ করে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগ সরকার। শান্তিপূর্ণ ভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা।

২০০০ সালের গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার জনসভায় তিপান্ন কেজি ওজনের মাইন বোমা পুতে রাখে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্য মুফতি হান্নান নামের একজন জঙ্গীনেতা।

০১লা অক্টোবর ২০০১ অনুষ্ঠিত হয় অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বিদেশি প্রভুরাষ্ট্রের সাথে আতাত করে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে পুনঃবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে বিএনপি জামাত চারদলীয় জোট সরকার। প্রধান বিরোধীদল জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ। শুরু হয় গনহত্যা লুটপাট। সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভয়অরন্যে পরিনত হয় বাংলাদেশ। এই সময় বাংলাদেশ পর পর তিনবার দূর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের খেতাব লাভ করে।

শুরু হয় জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিএনপি জামাত জোটের অন্যায় অনিয়ম ও অপশাসনের বিরুদ্ধে দূর্বার আন্দোলন।

২৬শে ডিসেম্বর ২০০২ অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ আওয়ামী ত্রিবার্ষিক সম্মেলন। তিনি পুনঃরায় বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।

তারেক রহমানের ইন্ধনে কমিশন বানিজ্য, সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় জঙ্গী শায়ক আব্দুর রহমান বাংলাভাইয়ের উত্থান ঘটে। চট্রগ্রাম শিল্পজেটির ভেতর থেকে আটক করা হয় দশট্রাক অত্যাধুনিক মানের অস্ত্র গোলাবারুদ এবং আর্জেস গ্রেনেড। ১৭ই আগষ্ট হয় দেশব্যাপী আদালত পাড়ায় একযোগে ঘটে জঙ্গীবোমা হামলা ; দায় স্বীকার করে হিকমাতুল জিহাদ নামের এক জঙ্গী সংগঠন। ঘটে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এসএম কিবরিয়া সংসদ সদস্য আহসানউল্লা মাষ্টার হত্যাকান্ড। বাংলাদেশ জুড়ে সৃষ্টি হয় এক ভীতকর এবং অরাজক পরিস্থিতি। বাংলাদেশ যেনো এক মৃত্যুপুরী!

জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্য ২০০৪ সালের ২১শে আগষ্ট গ্রেনেড হামলা করা হয় বঙ্গবন্ধু এভিনিউর জনসভায়। জননেত্রী শেখ হাসিনা সেদিন মহান আল্লাহতালার অশেষ ইচ্ছেতে প্রানে বেচে এলেও মহিলা আওয়ামীলীগ নেত্রী আইভি রহমান, নিরাপত্তারক্ষী মাহাবুব সহ অনেকেই প্রান হারায়। আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা সহ হাজার হাজার কর্মীরা আহত হয়। বিশ্বব্যাপী বয়ে যায় নিন্দার ঝড়।

২০০৫ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনা গনতন্ত্র মানবাধিকার ও শান্তি রক্ষায় অবদানের জন্য পিপুলস ফ্রেন্ডশীপ ইউনিভার্সিটি অফ রাশিয়ার পক্ষ থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করেন।

এতকিছুর পরও থেমে থাকেননি জননেত্রী শেখ হাসিনা। চালিয়ে গেছেন বিএনপি জামাত জোটের বিরুদ্ধে আন্দোলন। ক্ষমতা কুক্ষিগত করার লক্ষে বিএনপি জামাত জোট তারেক রহমানের নেতৃত্বে নীলনকশার নির্বাচন বাস্তবায়নের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করে এম.এ আজিজকে।
প্রায় সোয়া কোটি ভুয়া ভোটার অন্তর্ভুক্ত করে নির্বাচন কমিশন বিএনপি জামাত জোটের বিজয়কে সুনিশ্চিত করতে।
জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শুরু হয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার আজিজ হটাও আন্দোলন। আন্দোলন কঠিন আকার ধারন করে। তারপরও বিএনপি জামাত জোট নীল নকশার নির্বাচন বাস্তবায়নের পথেই হাটতে থাকে।

দল নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান নিযুক্ত করতে গড়িমসি করতে থাকে বিএনপি জামাত জোট সরকার। তাদের এই চক্রান্তের বিষয়টি আরও সুস্পষ্ট হয় বিচারপতিদের বয়স বৃদ্ধি করাতে।
জননেত্রী শেখ হাসিনা বিচারপতিদের বয়স বৃদ্ধির বিরুদ্ধে ঘোর প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।

বিএনপি জামাত জোট কেএম হাসানকে কেয়ারটেকার সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের চেষ্টা চালালে কেএম হাসান রাজনৈতিক চাপের কারণে বিব্রতবোধ করলে বিএনপি জামাত জোটের বিজয়কে সুনিশ্চিত করতে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে নিজেই নিজেকে নিযুক্ত করেন ২০০৬ সালের ২৯শে আক্টোবর।

জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোটের ঘোরতর আপত্তি সত্বেও নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ নির্ধারিত হয় ২২শে জানুয়ারী ২০০৭।

নির্বাচনের সময় যত এগিয়ে আসতে থাকে ততই জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পাতানো নির্বাচনের বিপক্ষে চাপ এবং নির্বাচন বাতিলের দাবি গনদাবিতে পরিনত হতে থাকে।
এর ভেতরেই প্রধান উপদেষ্টা ইয়াজউদ্দিনের সাথে মতের পার্থক্য তৈরী হলে এবং তাদের মতামত গ্রহন না করার অভিযোগে চারজন উপদেষ্টা পদত্যাগ করেন।
প্রশ্নবিদ্ধ তত্ত্বাবধায়ক সরকার নতুন চারজন উপদেষ্টা নিয়োগ দেন।

অন্যদিকে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিবাদমান রাজনৈতিক দলগুলিকে নির্বাচনে অংশগ্রহন নিশ্চিত করাতে ব্যর্থ হলে সংকট আরও ঘনীভূত হয়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিরোধী আন্দোলন সময়ের অগ্নিগর্ভে আরও উতপ্ত হয়ে ওঠে। প্রধান উপদেষ্টা সহ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের পদত্যাগ "একদফা" দাবিতে পরিনত করেন জননেত্রী শেখ হাসিনা।

ওয়ান ইলেভেনের দিন সকাল থেকে বঙ্গভবন ঘেরাও করে রাখে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা। বঙ্গভবনের সাথে সকল ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
এই সময় উপদেষ্টা পরিষদের সকল সদস্য পদত্যাগ করে। সেদিন রাতেই দেশে জরুরী অবস্থা জাড়ি করে প্রধান উপদেষ্টা ইয়াজউদ্দিন আহমেদ নিজেও পদত্যাগ করেন। শুরু হয় দেশে ওয়ান ইলেভেন প্রেক্ষাপট।

একই দিনে বাংলাদেশ ব্যংকের সাবেক গর্ভনর ফখরুদ্দিন আহমেদকে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করে দশ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করে এবং ২২শে জানুয়ারীর নির্বাচন বাতিল করে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাবলে ইয়াজউদ্দিন আহমেদ। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট ফখরুদ্দিন সরকারকে স্বাগত জানান।

২৬শে জানুয়ারি ২০০৭ রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদ একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে রাজনৈতিক কর্মকান্ড স্থগিত করেন। ০৭ই মার্চ ২০০৭ কোন ধরনের সার্চ ওয়ারেন্ট ছাড়াই দুইদফা জননেত্রী শেখ হাসিনার সুধা সদনে তল্লাসি চালায় যৌথ বাহিনী।

১৬ই জুলাই ২০০৭ গ্রেফতার হন জননেত্রী শেখ হাসিনা। ২০০৮ সালের ০৭জুন থেকে ৩০শে জুন প্রযন্ত জননেত্রী শেখ হাসিনার মুক্তির দাবিতে গনসাক্ষর অভিযান পরিচালনার ঘোষনা দেওয়া হয়।
প্রবল জনদাবির মুখে জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রায় এক বছর রাজনৈতিক সাজানো মিথ্যা মামলায় কারভোগ শেষে মুক্তি লাভ করেন সংসদ ভবনে থাকা সাবজেল থেকে। ধীরে ধীরে রাজনৈতিক পরিবেশ ফিরতে থাকে বাংলাদেশে। বাতিল হওয়া নবম জাতীয় নির্বাচনের তারিখ নির্ধারিত হয় ২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর।

১২ই ডিসেম্বর ২০০৮ শেরাটনের উইন্টার গার্ডেনে জননেত্রী শেখ হাসিনা একটি যুগ উপযোগী বাস্তবসম্মত নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষনা করেন।

২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট নিরঙ্কুস বিজয় অর্জন করে সরকার গঠন করে।।
২০০৯ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয় লাভের পর থেকে আধুনিক বাংলাদেশের রুপকার জনেনেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশে যে উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে তা এগিয়ে যাবে বহুদূর প্রযন্ত। বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে থেকে উন্নত রাষ্ট্রগুলির কাতারে পৌছে যাবে আপনার দক্ষ ও সুনিপুণ নেতৃত্বে, এই স্বপ্নই আমরা বুনি আপনাতে। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশকে ক্ষুধামুক্ত দরিদ্র্যমুক্ত আত্মনির্ভরশীল স্বপ্নের সোনার বাঙলা বির্নিমানের পথকে মসৃণ করবেন।

স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মানের আলো হয়ে বেচে থাকুন আরও বহুকাল বাঙালীর আশার বাতিঘর বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া আমানত আমাদের আপা দেশরত্ন শেখ হাসিনা।

৭৫ তম জন্মবার্ষিকীর শুভেচ্ছা; হে বিশ্বনেত্রী।
শতয়ু হউনঃ প্রার্থনা একটাই।

লেখকঃ ফুয়াদ হাসান,  আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ- সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ 

//