শেখ হাসিনা উন্নয়নের পথ জানেন, পথে চলেন


Dhaka | Published: 2021-09-28 21:32:46 BdST | Updated: 2024-04-19 16:00:56 BdST

শুভ জন্মদিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গঠনে অদম্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের অপূর্ণ স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি দেশবাসীর জন্য ভ্যাকসিন সংগ্রহ করে কূটনৈতিক চমক দেখিয়েছেন,বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠিকে আশ্রয় দিয়ে হয়েছেন মাদার অব হিউমিনিটি। নারীর ক্ষমতায়নে রেখেছেন উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় ভূমিকা রেখেছেন , রেখেছেন বলিষ্ঠ কণ্ঠ । তিনি বিশ্বের অন্যতম সৎ ও পরিশ্রমী প্রধানমন্ত্রী , গণতন্ত্রের মানসকন্যা । তার সঠিক নেতৃত্বে বাংলাদেশকে বিশ্ব এখন “ডেভিল্পমেন্ট মডেল” হিসেবে গণ্য করছে।

শিশু বয়স থেকেই শেখ হাসিনা বাবাকে খুব খেয়াল করতেন, বাবার কাজে আগ্রহ দেখাতেন, অনুকরণ অনুসরণ করার চেষ্টা করতেন। বাবার নেতৃত্বের গুণ ছাত্র জীবন থেকেই শেখ হাসিনার ধমনীতে প্রবাহিত ছিল, তাই ছাত্র জীবনেই তিনি রাজনীতিতে নাম লিখালেন, ইডেন কলেজে নির্বাচিত ভিপি ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যয়নকালেও তিনি রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন।

১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। শৈশব কেটেছে সবুজে বিস্তৃত গ্রামে, আর সেকারণেই হয়তো তিনি প্রকৃতির মতই উদার ও সরল। বাবা ভক্ত মেয়ে শেখ হাসিনা, ১৯৫৪ সালে পরিবারের সাথে ঢাকায় চলে আসলেন। হয়তো শিশু মনে স্বাদ ছিল বাবার সাথে সাথে থাকবেন, কিন্তু বিধি বাম, তার বাবা শেখ মুজিবুর রহমান তখন কারাগারের স্থায়ী বাসিন্দা, কেননা বঙ্গবন্ধুর জীবনের প্রায় ১৮ বছর তার কেটেছে জেলখানায়। মাঝে মধ্যে সন্তান পরিবারের সাথে থাকার সুযোগ পেতেন। জাতির জন্য ব্যক্তি জীবনের এতো বড় ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন বলেই একটি পরিবারের পিতা থেকে তিনি হয়ে উঠেছিলেন পুরো জাতির পিতা।

শিশু বয়স থেকেই শেখ হাসিনা বাবাকে খুব খেয়াল করতেন, বাবার কাজে আগ্রহ দেখাতেন, অনুকরণ অনুসরণ করার চেষ্টা করতেন। বাবার নেতৃত্বের গুণ ছাত্র জীবন থেকেই শেখ হাসিনার ধমনীতে প্রবাহিত ছিল, তাই ছাত্র জীবনেই তিনি রাজনীতিতে নাম লিখালেন, ইডেন কলেজে নির্বাচিত ভিপি ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যয়নকালেও তিনি রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। রোকেয়া হল ছাত্র লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

১৯৭১ সালে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতার ঘোষণা দেবার পর মুহূর্তে গ্রেফতার হবার আগে বঙ্গবন্ধু তার মেয়ে শেখ হাসিনাকে বলে যান, স্বাধীন দেশে তোর একটি ছেলে সন্তান হবে তার নাম রাখবি জয়, সেটাই হল। শেখ হাসিনার প্রথম সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয়( মাননীয় উপদেষ্টা) এবং দ্বিতীয় কন্যা সন্তান সায়মা ওয়াজেদ পুতুল (বিশিষ্ট অটিজম এক্সপার্ট) ।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে জিয়া- মোশতাকের নীল নকশায় আমরা বঙ্গবন্ধু পরিবারকে হারালাম ,তবে বেলজিয়াম থাকার সুবাদে অলৌকিকভাবে ছোট বোন রেহানাকে নিয়ে প্রাণে বেঁচে গেলেন শেখ হাসিনা। বেলজিয়ামের রাষ্ট্রদূত সানাউল হক এক রাতের ব্যবধানেই তার রাষ্ট্রীয় অতিথিকে রাস্তায় বের করে দিলেন। অবশ্য জার্মানির রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী সেসময় সাহায্য করেন, বেলজিয়াম সীমান্তে গাড়ি পাঠিয়ে জার্মানিতে নিয়ে আসেন। কিন্তু নিরাপত্তা শংকায় শেখ হাসিনা, ছোট বোন শেখ রেহানা আর দুবাচ্চাসহ ভারতের প্রাধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর প্রাস্তাবে দিল্লীতে চলে আসেন।

শুরু হল নেত্রীর শরণার্থী জীবন। খুনিদের নিশানায় থাকায় নিজের নাম পাল্টে একটি ঘরে দিন কাটাতে থাকেন। শেখ রেহানাসহ ও পরিবর্তিতে দুসন্তান পড়ালেখা করতে যুক্তরাজ্যে চলে গেলে তিনি একা হয়ে পড়েন। Pain made her a believer বাবার রাজনীতির উত্তরাধিকার, বাবার অসম্পূর্ণ স্বপ্নপূরণ আর বাবার হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনতে তিনি দৃপ্ত শপথ নিলেন।

এদিকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তখন ভাঙনের খেলা, সামরিকজান্তারা পাকিস্তানি কায়দায় দেশ চালাচ্ছে। They made politics difficult for the politicians. ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতেই তাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি মনোনীত করা হয়। ১৭ মে ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ফিরলেন। শুরু হল নতুন সংগ্রাম। শোক কে শক্তিতে রূপান্তর করে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামলেন। “ স্বৈরাচার নিপাক যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক”। ৯ বছরের আন্দোলন সংগ্রামের ফলে ১৯৯০ এর গণঅভ্যুত্থানে এরশাদ সরকারের পতন হল । ১৯৯১ সালের নির্বাচনে সূক্ষ্ণ কারচুপির মাধ্যমে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে, শেখ হাসিনা গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখার জন্য বিরোধীদলীয় নেত্রীর ভূমিকা পালন করলেন।

১৯৯৬ সালের ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে সভানেত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হলেন। এ সময়ে উল্লেখযোগ্য প্রাপ্তির মধ্যে ছিল গঙ্গা পানি চুক্তি, পার্বত্য শান্তি চুক্তি, যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মানণ, বিধবা, দুঃস্থ, অসহায় মহিলাদের জন্য আর্থিক অনুদান চালু, গৃহহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রজেক্ট চালু ইত্যাদি।

২০০১ সালের ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জামায়াত জোট সরকার গঠন করলে, শেখ হাসিনা তথা বাংলাদেশের অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন হয়, চলে দেশ ব্যাপী গুম-খুন, বোমা হামলা, গ্রেনেড হামলার ঘটনা। তারেক রহমানের পরিকল্পনায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা কিন্তু হারাতে হয় অনেক কাছের নেতা-কর্মীদের। এরশাদ-খালেদার শাসন আমলে মোট ১৯ বার হত্যাচেষ্টা চলে শেখ হাসিনার উপর। কিন্তু “রাখে আল্লাহ, মারে কে ?”

২০০৬-০৮ তত্ত্বাবধায়কের নাম করে উড়ে এসে জুড়ে বসে আরেক অরাজনৈতিক সরকার। তাদের কাছে নির্বাচন দাবি করলে অন্যায়ভাবে জেলে যেতে হয় শেখ হাসিনাকে। জেল থেকে আইনি প্রক্রিয়ায় তিনি বের হলেন এবং ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয় লাভের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ আবার সরকার গঠন করল। এসময়ে উল্লেখযোগ্য সাফল্য ছিল মায়ানমারের সাথে জলসীমা মীমাংসা, জি ডি পি ৬% উন্নীত, দারিদ্র্যতার হার ৩৮% থেকে ২৪% ,জাতিসংঘ এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন। তবে চ্যালেঞ্জও ছিল অনেক, পিলখান হত্যাকাণ্ড বিচার সম্পাদন, নারী নীতি বিরোধী আন্দোলন, যুদ্ধাপরাধী বিচার ও ফাঁসি কার্যকর।

২০১৪ সালে ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির আগুন সন্ত্রাসের জবাবে জনগণ আবার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনলে শুরু হয় উন্নয়নের মহাকাব্য। এসময়কার সাফল্যগুলি ছিল, ডিজিটাল বাংলাদেশ, মাথা পিছু আয় ১৬০২ মার্কিন ডলারে উন্নীত, দারিদ্র্যতার হার ২৪% থেকে ২২%, ফরেন রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, নিজ অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুভ সূচনা, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র ,রূপপুর বিদ্যুত কেন্দ্রের কাজ শুভ উদ্বোধন, সাবমেরিন ও স্যাটেলাইট যুগে প্রবেশ ইত্যাদি। এসময় বড় চ্যালেঞ্জ ছিল হলি আর্টিসানসহ সারাদেশে জঙ্গি দমন, ১০ লক্ষ্যাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয় দান, মানবতার জননী শেখ হাসিনা শক্ত হাতে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছেন , She is a great leader, who is visionary, honest and also humble.

২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবার ক্ষমতায় আসলে আওয়ামী লীগ এর উন্নয়নের যাত্রা পূর্ণ গতি পেল। কিন্তু হানা দিল করোনা ভাইরাস, এখানেও রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা চমক দেখালেন। বিশ্বের বড় বড় রাষ্ট্র যখন হিমশিম খাচ্ছে, বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে বিশ্ব অর্থনীতি এমন সংকটময় পরিস্থিতিতেও ৭৫ বছর বয়সের এই মহামানবী করোনা মহামারি মোকাবিলায় “ভ্যাকসিন ডিপ্লোমেসিতে” সাফল্য দেখিয়ে যাচ্ছেন “She is a leader who leads by setting example” ।

বারবার দেশের মানুষকে অ্যাড্রেস করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার মাধ্যমে নিজেকে এবং অন্যকে করোনা থেকে সুরক্ষার নির্দেশনা দিচ্ছেন। নিয়মিত তৃণমূল প্রশাসনকে দিকনির্দেশনা দিয়ে তদারকি করছেন। বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন করে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছেন।

এসময়ে দারিদ্র্যের হার ২০ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে, মাথাপিছু আয় ২,২২৭ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ সর্বকালের সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে। শিশু মৃত্যুহার প্রতি হাজারে ২৩ দশমিক ৬৭-এ কমে এসেছে। মানুষের গড় আয়ু বেড়ে হয়েছে ৭৩ বছর। সুদান ও শ্রীলংকাকে অর্থ ঋণ সহায়তা দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের সক্ষমতার জানান দিয়েছে। Sheikh Hasin’s leadership has the capacity to translate vision into reality এরই মধ্যে ২০২১-২২ অর্থ বৎসরে ৩ হাজার ৬ লাখ ৬৮১ কোটি টাকার রেকর্ড গড়ার বাজেট দিয়েছে শেখ হাসিনার সরকার। ঢাকা-মাওয়া হাইওয়ে সম্পন্ন হয়েছে। পদ্মা সেতু রেল লিঙ্ক, মেট্রোরেল, দুহাজারী-কক্সবাজার রেল, পায়রা বন্দরসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের আওতায় ২৬টি বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন চলমান আছে, এলেঙ্গা-রংপুর মহাসড়ক, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ এগিয়ে চলছে। মেট্রোরেল ট্রায়াল রান শুরু হয়েছে। দুহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের কাজ চলছে। ঢাকা এলিভেটেডে এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলছে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ চলছে। পায়রা বন্দর এবং গভীর সমুদ্র বন্দরের কাজ চলছে। শাহজালাল বিমানবন্দরের ৩য় পর্যায়ের কাজ চলছে। মুজিববর্ষের উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর, দেশব্যাপী মডেল মসজিদ এসবই শেখ হাসিনার দক্ষ দিকনির্দেশনায় উন্নয়নের মহাসড়কে বদলে যাওয়া এক বাংলাদেশের চিত্র।

শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত রাষ্ট্রনায়ক। তিনি একাধিক সম্মাননায় ভূষিত, মাদার তেরেসা অ্যাওয়ার্ড, ইন্দিরা গান্ধী পিস এ্যাওয়ার্ড, ইউনেস্কো পিস ট্রি অ্যাওয়ার্ড, চ্যাম্পিয়ন অব আর্থ , ইস্টার অব ইস্ট ইত্যাদি। শেখ হাসিনা মানেই উন্নয়ন, শেখ হাসিনা মানেই বাংলার আধুনিক রুপ। Sheikh Hasina knows the way, shows the way and goes the way.

প্রিয় নেতৃর জন্মদিনে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।

লেখক : স্কোয়াড্রন লিডার অব. এম সাদরুল আহমেদ খান, সাবেক ডেপুটি সার্জেন্ট-এট-আর্মস, সদস্য অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক উপকমিটি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।