মামুনুল হকের গ্রেফতারের দাবিতে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের ৭২ ঘন্টার আলটিমেটাম


Dhaka | Published: 2020-11-16 23:57:18 BdST | Updated: 2024-04-19 20:55:33 BdST

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মামুনুল হক কর্তৃক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ভাস্কর্য নির্মাণ বন্ধের হুমকির প্রতিবাদে আজ সোমবার বিকাল সাড়ে তিনটায় ঢাবির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। মানববন্ধনের শুরুতে প্রয়াত সাবেক ডেপুটি স্পীকার, বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অব:) শওকত আলীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করে সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো: আল মামুনের সঞ্চালনায় উক্ত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। আরোও বক্তব্য রাখেন আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনালের সাবেক প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, ভাস্কর শিল্পী রাশা, গৌরব৭১ এর সাধারণ সম্পাদক এফএম শাহীন, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদ, ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার সভাপতি মিলন ঢালীসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, "বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতাকারীরা কখনোই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী এহেন বক্তব্যের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সংবিধান লঙ্ঘন করে জাতির পিতাকে অবমাননা করা হয়েছে। এদেরকে অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।"

ভাস্কর শিল্পী রাশা বলেন, "সৌদিআরব, ইরানসহ বিশ্বের সব মুসলিম দেশে ভাস্কর্য রয়েছে। জাতির পিতার ভাস্কর্য অপসারণের দাবি যারা তুলেছে, সেই মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত পদক্ষেপ না নিলে আমরা দেশ ও জাতির ‘সমূহ বিপর্যয়ের’ আশঙ্কা প্রকাশ করছি। আমরা গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে মুজিববর্ষ উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপনে বাধা প্রদান এবং স্থাপিত ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলার ভয়ঙ্কর হুমকি দিয়েছে চিহ্নিত স্বাধীনতাবিরোধী, মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তি।"

মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো: আল মামুন বলেন, "গত ১৩ নভেম্বর করোনাকালীন যাবতীয় বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করে তারা যেভাবে গেণ্ডারিয়ার ধূপখোলার মাঠে সমাবেশ করেছে এবং যে ভাষায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি বিষেদগার করেছে, তা রাষ্ট্রদ্রোহিতাতূল্য অপরাধ হলেও এখন পর্যন্ত এর বিরুদ্ধে সরকারি ব্যবস্থা কিংবা সরকারদলীয় কোনো প্রতিবাদ আমাদের নজরে পড়েনি। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা করা হয়েছে। আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে ধর্ম ব্যবসায়ী মামুনুল হককে গ্রেফতার না করলে সমগ্র দেশে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ আরোও কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করবে। একাত্তরের পরাজিত অপশক্তির দোসররাই তৌহিদী জনতার ব্যানারে প্রতিনিয়ত রাষ্ট্র বিরোধী ষড়যন্ত্র চলমান রেখেছে"।

"লালমনিরহাট, কুমিল্লার মুরাদনগরের ঘটনা ও সম্প্রতি ধর্ম ব্যবসায়ী মামুনুল হকের বক্তব্য একই সূত্রে গাঁথা। ইসলাম শান্তির ধর্ম। কেউ অপরাধ করলে দেশের প্রচলিত আইনে তার বিচার হবে। দেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। লালমনিরহাটে সহিদুন্নবী জুয়েল নামে এক মুসলিমকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে যা সম্পূর্ণ ইসলাম বিরোধী। কোন ধর্মই সহিংসতা ও মানুষ হত্যা সমর্থন করে না। ধর্মের নাম ব্যবহার করে এই উগ্রবাদী গোষ্ঠী দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এদের মূল উদ্দেশ্যে হচ্ছে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা।"

আল মামুন আরোও বলেন, "সকল ধর্মের মানুষদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করা প্রত্যেকটি মানুষের সাংবিধানিক অধিকার। কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী দণ্ডপ্রাপ্ত দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে চাঁদে দেখা যাচ্ছে বলে গুজব ছড়িয়ে যারা নাশকতা করে মানুষ হত্যা করেছিলো সেই মৌলবাদী অপশক্তিই সম্প্রতি ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। এরা ইসলামের শত্রু। এরা কখনোই ইসলাম ধর্মের আদর্শ ধারণ করে না। ধর্মীয় লেবাশে রাষ্ট্র বিরোধী ষড়যন্ত্র করাই এদের মূল উদ্দেশ্য। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে এরা জঙ্গিবাদ রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপন করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। এরা দেশ ও জাতির শত্রু।"

"একাত্তরের পরাজিত অপশক্তি পাকিস্তানের দোসররা এহেন ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড দ্বারা বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা থামিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। ধর্মের নামে এরা অপরাজনীতি শুরু করছে। ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের আবেগকে পুঁজি করে নিজেদের অসৎ উদ্দেশ্যে হাসিলের চেষ্টা করছে। জাতির পিতা কে অবমাননা করার অপরাধে মামুনুল হককে আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতার করতে হবে। অন্যথায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ সমগ্র দেশে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।"

মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ এর (৭) সাত দফা দাবি:

১। জাতির পিতাকে অবমাননা করার অপরাধে আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে ধর্ম ব্যবসায়ী মামুনুল হককে গ্রেফতার করতে হবে।

২। দেশের প্রতিটি উপজেলায় বঙ্গবন্ধুর ভার্স্কয নির্মাণ করতে হবে।

৩। বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।

৪। বিভিন্ন ধর্মীয় সভা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় উস্কানিমূলক গুজব ছড়ানো ও অপপ্রচারকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

৫। ধর্ষণের ন্যায় বলাৎকারের অপরাধে অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

৬। মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে এবং মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের যৌন নিপীড়ন বন্ধে মনিটরিং সেল গঠন করে নজরদারি বাড়াতে হবে।

৭। মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত জাতীয় সংগীত বাজানো, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, শহীদ মিনার নির্মাণ ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করতে হবে।