নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে হল ডাইনিং পরিচালক পরিবর্তন হলেও নিরসন হয়নি ভোগান্তি


মুতাসিম বিল্লাহ | Published: 2025-01-12 21:27:17 BdST | Updated: 2025-02-10 19:16:24 BdST

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের খাবারের মান বৃদ্ধি এবং আবাসিক শিক্ষার্থীদের দূর্ভোগ কমাতে পরিবর্তন করা হয় ডাইনিং পরিচালক। কিন্তু খাবারের বেশি মূল্য এবং অপর্যাপ্ত খাবারের আইটেম সহ নানা অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।

পঁচা-বাসি খাবার পরিবেশন, নোংরা পরিবেশে খাবার সংরক্ষণ, খাবারের ঝোল ঘন করতে চিড়া মেশানো সহ নানা অভিযোগের ভিত্তিতে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর হল ডাইনিং পরিচালক পরিবর্তন করা হয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ সপ্তাহখানেক খাবারের মান কিছুটা ভাল করা হলেও সময়ের পরিক্রমায় তা নাগালের বাহিরে চলে যাচ্ছে। খাবারের দাম অনুযায়ী সেই অনুপাতে খাবারের মান পাচ্ছেন না।

সর জমিনে দেখা যায় সাধারণ আইটেমের মধ্যে ভাত ১০ টাকা প্লেট, মাছ এবং ব্রয়লার মুরগির মাংসের প্রতি পিছ ৩৫ টাকা থেকে ৬০ টাকা, গরুর মাংস ফুল বাটি ১৬০ টাকা, মশুরের পাতলা ডাল ফ্রি রাখা হলেও আলু ভর্তা ১০ টাকা এবং শাক-ভাজি ২০ টাকা পর্যন্ত রাখা হচ্ছে। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন কিছু খাবার হোটেলে মাছ এবং ব্রয়লার মুরগির মাংসের প্রতি পিছ ৩৫ থেকে ৫০ টাকা এবং গরুর মাংস ফুল বাটি ১২০ টাকা রাখা হয়, যেখানে আইটেমের ভিন্নতা এবং পরিমাণে কিছু বেশি পাওয়া যায়। এছাড়া ভাত ১০ টাকা, মশুরের ঘন ডাল ১০ টাকা, ভর্তা ১০ টাকা এবং শাক-ভাজি ১৫ টাকা থেকে ২০ টাকা রাখা হয়। শিক্ষার্থীরা নায্য মূল্যে খাবার খেতেই মূলত হলের ডাইনিংয়ে আসেন।

হলের একজন আবাসিক শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ মো. ইদ্রিস ইরাম বলেন, হলের খাবারের অব্যবস্হাপনা সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য ফাইন্যানসিয়ালি এবং মানসিকভাবে খুবই বিবৃতকর। হলের ডাইনিংয়ে আগে যেখানে মুরগির দাম ৩০ টাকা ছিলো এখন ৬০ টাকা। খাবার আইটেমে কোন ভ্যারাইটি নেই, মাত্র দুইটা তিনটা আইটেম তারা মেন্যুতে রাখছে। ১৬০ টাকা গরুর মাংস ভাবা যায়, যেখানে আমরা বাহিরেই খেতে পারি ১২০ টাকা দিয়ে। এমনকি তারা ভাতের দাম ১০ টাকা করেছে। তাহলে হোটেল আর হলের ডাইনিংয়ের খাবারের মধ্যে পার্থক্য কি হলো, শিক্ষার্থীদের সুবিধা দেওয়ার পরিবর্তে তারা আমাদের জন্য আর্থিকভাবে আরো অসুবিধা তৈরি করছে।

ডাইনিং পরিচালক বলেন, আমরা যদি খাবার মান ধরে রাখতে চাই তাহলে এর কমে আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। আমার শিক্ষার্থীদের প্রতি একটা দ্বায়বদ্ধতা আছে। আমার খাবার খেয়ে একজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হলে এই দ্বায় আমাকেই নিতে হবে। আমি বাজারের ভালো তেলটা দিতেছি। আমি সবসময় গরম খাবারটা পরিবেশন করেতেছি। বেশি করে রান্না করলে, ভালো তেলের বদলে পাম ওয়েল বা ডালডা মিক্স করে আগের দিনের বাসি খাবার দিলে আমার খরচ কমে আসবে, কিন্তু আমি সেটা করতেছি না। আগের ডাইনিংয়ের চেয়ে যদি দেখেন, আমার খাবারের মান বেড়েছে কিন্তু।
তিনি আরও বলেন, এখানে আমি কোন ভর্তুকি পাই না। আমি লাভ না করতে পারলে চালাবো কিভাবে? কয়েকদিন আগেও মুরগী কেজি ছিলো ১৪৫ টাকা আর এখন ১৮৫ টাকা কিনে আনতে হয়। সব্জির দাম কিছুটা কম এখন তবে কয়েকদিন পর যখন বাড়বে তখন এই দামে দেওয়াও কষ্ট হয়ে যাবে আমার জন্য। ডাইনিংয়ে পুরোপুরি বসতে হলে আমাকে আড়াই লাখ টাকার জামানত আর প্রতি মাসে সাত হাজার টাকা ভাড়া দিতে হবে। প্র‍তি মাসে ভাড়া দিয়ে এর চেয়ে কম দামে মান ঠিক রেখে আমার পক্ষে ব্যবসা করা সম্ভব হবে না।

বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, মাছ-মাংস তো মূল খাবার, আগের যারা ছিল তারা ঝোল ঘন করতে চিড়া মেশাতো। এরা ভাল করার চেষ্টা করছে। ছাত্ররাই আমাদের কাছে এসে বলেছে যে স্যার খাবারের মান ভালো হলে পাঁচ দশ টাকা বেশি নিলেও সমস্যা নাই।
তিনি আরও বলেন, আরেকটু ধৈর্য্য ধরো মেস সিস্টেম চালু করে দিচ্ছি খুব শীঘ্রই। যাদের কাছে মনে হচ্ছে খাবাদের দাম বেশি, মান ভালো নেই তারা মেস সিস্টেমে খেতে পারবে। প্রশাসন থেকে অনুমতিও দিয়ে দেওয়া হয়েছে, প্রোসেসিংয়ে আছে শুধু জিনিসপত্র কেনা বাকি।
আবাসিক শিক্ষার্থীদের হলের রুমে রান্না করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যারা রুমে রান্না করে তারাই মূলত এসব কথা বলে। আমরা রুমে রান্না বন্ধ করতে শক্ত পদক্ষেপ নিবো। কোন রুমে রাইস কুকার, ইন্ডাকশন কুকার, হিটার পাওয়া গেলে তাকে কোন কোনসিডার করা হবে না।
ডাইনিংয়ে ভর্তুকির বিষয়ে তিনি বলেন, ডাইনিংয়ে আর্থিক কোন ভর্তুকি দেওয়া হয়না। শুধু রান্নার তৈজসপত্র এবং বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি ফ্রী করে দেওয়া হয়েছে।