১৫ বছর বয়সেই বিজ্ঞানী


Dhaka//Prothomalo | Published: 2020-12-28 02:47:22 BdST | Updated: 2024-04-20 18:01:50 BdST

বয়স সবে ১৫। অথচ এরই মধ্যে পানিদূষণ থেকে শুরু করে সাইবার বুলিং ও আফিম আসক্তির মতো বিষয় নিয়ে কাজ করছে ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন উদ্ভাবক ও বিজ্ঞানী গীতাঞ্জলি রাও। তরুণদের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত অর্থাৎ সংক্ষেপে ‘স্টেম’ বিষয়ে আগ্রহী করতে চায় সে। আর এসব মিলিয়ে তাকে ২০২০ সালের ‘বর্ষসেরা শিশু’ নির্বাচিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের টাইম সাময়িকী।

কীভাবে ঠিক করো, কোন সমস্যা নিয়ে কাজ করবে? আর সমাধানে পৌঁছাও কীভাবে?

আমার নিজের তৈরি একটি পদ্ধতি আছে। এতে পর্যবেক্ষণ, মাথা খাটানো (ব্রেইনস্টর্মিং), গবেষণা, তৈরি এবং যোগাযোগের মতো পাঁচটি ধাপে এগোতে হয়। সমস্যা খুঁজে বের করা থেকে সমাধানে পৌঁছানোর বেলায় সব সময় এ পদ্ধতি আমার কাজে দিয়েছে। ব্যাপারটা এমন—হয়তো আমার আশপাশেই কোনো সমস্যা খুঁজে পেলাম। এবার সম্ভাব্য সমাধান বের করার জন্য ব্রেইনস্টর্ম করার পালা। এরপর খুঁজে দেখার চেষ্টা করি প্রযুক্তিগত কোন কোন সমাধান এখানে কাজ করবে। সে ক্ষেত্রে সংবাদপত্র ও সাময়িকী থেকে তথ্য সংগ্রহ করি। উদ্ভাবন হয়ে গেলে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিই।

নতুন নতুন কাজ করার অনুপ্রেরণা কোথায় পাও?

নিজের সঙ্গে যায় এমন সবকিছু নিয়ে আমি কাজ করতে আগ্রহী। প্রায়ই সংবাদ প্রতিবেদন ও নিবন্ধ থেকে আমার আগ্রহের বিষয়গুলো নিয়ে সমস্যা খুঁজে বের করার চেষ্টা করি। একটা উদাহরণ দিই। যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ফ্লিন্ট শহরের পানির সমস্যার কথা আমি জেনেছিলাম। আমার বয়সী আরও কত শিশু-কিশোর সেখানে প্রতিদিন সেই বিষাক্ত পানি পান করছে! এটা আমি নিতে পারিনি। এরপর লেগে গেলাম সমাধান খুঁজতে।

এখন তুমি পানিতে বায়ো-কনটামিন্যান্ট (জৈব দূষণের জন্য দায়ী জীবাণু) শনাক্তের সহজ পদ্ধতি উদ্ভাবনে কাজ করছ বলে খবরে দেখলাম। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে এই উদ্ভাবন কীভাবে সাহায্য করবে?

পানিতে প্যারাসাইট বা পরজীবী জীবাণুর অস্তিত্ব একটি বৈশ্বিক সমস্যা। পানযোগ্য পানির অভাবে কেবল যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর ৪৮ হাজার মানুষ ক্রিপ্টোসপরিডায়োসিসে (প্যারাসাইটের প্রভাবে সৃষ্ট রোগ) আক্রান্ত হয়। বর্তমানে পিসিআর পরীক্ষার মতো পদ্ধতিতে প্যারাসাইট শনাক্ত করা হয়। তবে এতে সময় যেমন লাগে, তেমনি বেশ ব্যয়বহুলও। আমি দ্রুত শনাক্তের জন্য সহজে ব্যবহারযোগ্য এবং নির্ভুল পদ্ধতি উদ্ভাবনে কাজ করছি।

অন্য তরুণ উদ্ভাবকদের প্রশিক্ষক হিসেবে গীতাঞ্জলি রাও কেমন করছে?

বিশ্বের সব প্রান্তের শিক্ষার্থীদের জন্য আমি উদ্ভাবনবিষয়ক কর্মশালা পরিচালনা করেছি। আমার লক্ষ্য মূলত শিক্ষাক্রমের শুরুর দিকেই উদ্ভাবনের কলাকৌশলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। সেটা গোটা বিশ্বেই। এতে যে কেউ বিজ্ঞানের সাহায্যে সমাজে পরিবর্তন আনতে পারবে। এখন পর্যন্ত আমি ৩৩ হাজার ৮০০ শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছাতে পেরেছি। যদিও অভিভাবক, এমনকি শিক্ষকেরাও অনেক সময় অংশ নিয়েছেন, তবে আমার কর্মশালাগুলো থেকে শিক্ষার্থীরাই সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়। এ পর্যন্ত প্রায় ৮০টি স্কুলের হাজার পাঁচেক শিক্ষক আমার কর্মশালাগুলোর সঙ্গে ছিলেন।

সারা বিশ্বের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেই আমি প্রতিনিয়ত নানা বিষয়ে প্রশ্ন পাই। তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সাহায্য করতে আমিও সব সময় কাজ করে যাচ্ছি। শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের কাছে থেকে পাওয়া প্রশ্ন এবং মতামতের ভিত্তিতে আমি ভিডিও লগ (ভ্লগ) তৈরি শুরু করেছি। পাশাপাশি সে বিষয়ে রেফারেন্স বইও লিখছি। আর এ জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও সফটওয়্যার কিনেছি আমার পুরস্কারের অর্থ দিয়ে।