‘ফিশ পাউডার’ উদ্ভাবন নোবিপ্রবি গবেষকদের


ঢাকা | Published: 2021-02-20 01:30:16 BdST | Updated: 2024-04-26 19:16:32 BdST

মাছ ভাজা, মাছের মুড়িঘণ্ট, ছোট মাছের চচ্চরি—এসবই বাঙালির নিত্য আহার। ভোজনরসিক বাঙালির পাতে এবার যোগ হলো পুষ্টিমান-সমৃদ্ধ মাছের পাউডার। সম্প্রতি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) একদল গবেষক তৈরি করেছেন উচ্চ পুষ্টিমান-সমৃদ্ধ এই মাছের পাউডার।

খাদ্য নিরাপত্তার সব ধরনের মানদণ্ড বজায় রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স বিভাগের ল্যাবে এই পাউডার তৈরি করা হয়েছে। বহুল ব্যবহৃত তরকারি যেমন-ডাল, আলু, কচু শাক, লাল শাক, বেগুন, শিম, লাউ, চালকুমড়া, ফুলকপি, মুলা, কচুরমুখী, শিচের বিচি ও ভর্তা হিসেবে ফিশ পাউডার জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) লক্ষ্মীপুরের চরআলেকজান্ডারে দিনব্যাপী মাঠ দিবস ও প্রযুক্তি প্রদর্শনী সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সুবিধাভোগী ৪০টি পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়রা অংশ নেন। সভায় বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. হানিফের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. দিদার-উল- আলম।

বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো.ফারুক উদ্দীন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের পরিচালক (পুষ্টি) ড. মো. মনিরুল ইসলাম, ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) ড. মফিজুর রহমান, ফার্মেসি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. সেলিম উদ্দীন, রামগতি পৌরসভার মেয়র মেজবাহ উদ্দীন, নোয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাছুমা আক্তার প্রমুখ।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য ড. মো. দিদার-উল আলম বলেন, নবীন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সাফল্য অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তিনি এ গবেষণা কার্যক্রমকে আরও বেগবান ও জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

ড. মনিরুল ইসলাম বলেন, ফিশ পাউডার ব্যবহারের যে জনপ্রিয়তা আজকে আমরা লক্ষ্য করলাম তা আমাকে আশাবাদী করে তুলেছে। আগামী দিনে প্রজম্মের পুষ্টি চাহিদা রোধ ও উন্নত জাতি গঠনে মাছের তৈরি পুষ্টি পাউডার অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে বিশ্বাস করি।
সুবিধাভোগীদের মধ্য থেকে কিশোরী সোনিয়া আকতার বলে, ‘আগে মাছের মাথা ও লেজ কে খাবে তা নিয়ে মনকষাকষি হতো। তবে পাউডারের খাবার অন্য খাবার থেকে সুস্বাদু ও সবাই সমান ভাগ পায়।’

এক কিশোরীর মা রিনা বেগম বলেন, ‘মাছের পুষ্টি পাউডার দিয়ে রান্না খাবার আমাদের নতুন নতুন আইটেম যুক্ত করার সুযোগ করে দিয়েছে। আশপাশের পাড়া-প্রতিবেশীদেরও এই পাউডারের প্রতি অনেক আগ্রহ রয়েছে।’

মাছ পাউডার প্রকল্পের প্রধান গবেষক হিসবে দায়িত্ব পালন করেন ড. আবদুল্লাহ-আল মামুন। গবেষক দলের সদস্য ছিলেন ড. শহীদ সরোয়ার, শুভ ভৌমিক। প্রকল্পের গবেষণা সহযোগী ছিলেন আবদুল আজিজ ও সাইদুজ্জামান সাব্বির।

দেশের তিন অঞ্চলে লক্ষ্মীপুরের চর আলেকজান্ডার, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি ও খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় ১২০টি পরিবারের প্রায় ৬ শতাধিক সদস্যদের মধ্যে সাপ্তাহিক জনপ্রতি ৪০ গ্রাম হারে গত ১৬ সপ্তাহ ধরে এই পাউডার বিতরণ করা হয়। নারীর ক্ষমতায়নের অংশ হিসেবে অংশগ্রহণকারী গৃহের নারীরা বিশেষ প্রণোদনা পেয়েছেন।

গবেষণার প্রয়োজনে ২৪০ পরিবারের কিশোরী মেয়েদের রক্তের নমুনায় আয়রন, জিংক, ভিটামিন এ, ক্যালসিয়ামের উপস্থিতি নির্ণয় করা হয়। ১৮ সপ্তাহ পর আগামী মার্চে আবার নমুনা যাচাই করা হবে বলে গবেষকরা জানিয়েছেন।