গাজায় যে শর্তে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে যেতে চায় ইসরায়েল


ডেস্ক নিউজ | Published: 2025-05-19 20:53:58 BdST | Updated: 2025-06-13 14:02:23 BdST

গাজায় হামাসের হাতে জিম্মিদের মধ্যে জীবিত থাকা অর্ধেক ইসরায়েলিকে ফেরত পাওয়ার শর্তে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে ইসরায়েল। গতকাল রোববার ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচার সংস্থা কান এ খবর জানিয়েছে। সংবাদমাধ্যমটি জানায়, কাতারের দোহায় চলমান আলোচনার সময় এই প্রস্তাব দেওয়া হয়। ইসরায়েল ধারণা করছে, এখনো গাজায় ৫৮ জন জিম্মি রয়েছে, যাদের মধ্যে ২০ জন জীবিত।

প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতির সময় ভবিষ্যতের যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা হবে। আলোচনায় থাকবে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর অস্ত্র পরিত্যাগ এবং তাদের নেতাদের বিতাড়নের বিষয়। এই দুটি শর্ত ইসরায়েল বারবার জোর দিয়ে বলেছে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দপ্তর জানিয়েছে, দোহায় সর্বশেষ আলোচনায় যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি যুদ্ধ বন্ধের বিনিময়ে হামাস যোদ্ধাদের নির্বাসন এবং গাজা উপত্যকার নিরস্ত্রীকরণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর আগে হামাস এই শর্তগুলো প্রত্যাখ্যান করেছিল।

হামাস বলেছে, যতক্ষণ ইসরায়েল ফিলিস্তিনি জমি দখল অব্যাহত রাখবে, ততক্ষণ তারা অস্ত্র ছাড়বে না। হামাসের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, ইসরায়েলের অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে। তারা জিম্মিদের মুক্তি চায়, কিন্তু যুদ্ধ বন্ধের কোনো প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে না।

যুদ্ধ বন্ধ, ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার, গাজার ওপর থেকে অবরোধ তুলে নেওয়া এবং ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তির বিনিময়ে সব ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার প্রস্তাব আবারও দিয়েছে হামাস।

হামাস বলেছে, ‘আমরা আশা করি, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গড়া বোঝাপড়া এবং মধ্যস্থতাকারীদের সম্মতির ভিত্তিতে দ্রুত গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশ শুরু হবে। সেই সঙ্গে চিরস্থায়ী যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হবে এবং নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা অর্জনের লক্ষ্যে বিস্তৃত আলোচনা হবে, যা আমরা প্রত্যাশা করছি।’

দোহায় আলোচনার মধ্যেই গাজায় স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল। এ অভিযানে আজ সোমবার সকাল পর্যন্ত প্রায় দেড় শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন।

গাজা শহরের আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক ড. মোহাম্মদ আবু সিলমিয়েহ পরিস্থিতিকে ‘বিপর্যয়কর’ বলেছেন। তিনি জানান, ইসরায়েলি হামলার কারণে উত্তর গাজার চিকিৎসাব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। আল-শিফা হাসপাতালে চারজনের জায়গায় আটজন রোগী রাখা হচ্ছে। অতিরিক্ত রোগীদের জন্য তাঁবু স্থাপন করা হয়েছে। প্রতি ঘণ্টায় গড়ে ৫০টি মৃতদেহ ও ১৩০ জন আহত রোগী আসছেন। রক্তের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। নিবিড় পরিচর্যা ও অস্ত্রোপচারের সেবা ভেঙে পড়েছে। কর্মীরা ‘অসম্ভব চাপের’ মধ্যে কাজ করছেন।

ড. সিলমিয়েহ আল–জাজিরাকে জানান, উত্তর গাজার শেষ হাসপাতাল ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালেও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।

এদিকে দুই মাস বন্ধ রাখার পর গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে ইসরায়েল। তাদের দাবি, গাজাবাসীর অনাহারে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করতেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দপ্তর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গাজাবাসীর মধ্যে যেন খাদ্যসংকট তৈরি না হয়, সেজন্য মৌলিক কিছু খাদ্যপণ্যের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। উত্তর ও দক্ষিণ গাজায় ইসরায়েলের চলমান ‘অপারেশন গিডিয়ন’কে এই খাদ্যাভাব ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে।

ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচার সংস্থা কান জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ও মার্কিন ঠিকাদারদের তত্ত্বাবধানে এই ত্রাণ বিতরণকেন্দ্র পরিচালিত হবে। তবে তুরস্কের সংবাদমাধ্যম আনাদোলুর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য হলো উত্তর গাজা থেকে মানুষ সরিয়ে দক্ষিণের রাফা শহরকে প্রধান মানবিক সহায়তা কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা এবং সেখানেই সাহায্য নিতে আসা মানুষদের আটকে রাখা।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে প্রায় ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যা এবং প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করার পর জবাবে গাজায় ব্যাপক হামলা শুরু করে ইসরায়েল। তাদের সামরিক অভিযানে গাজা উপত্যকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই অভিযানের ফলে প্রায় সব বাসিন্দা ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন এবং এখন পর্যন্ত ৫৩ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।