11199

ঘ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষার ১০০টি প্রশ্নের মধ্যে ৭২টি ফাঁস, নিশ্চিত ডুজা সভাপতি

ঘ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষার ১০০টি প্রশ্নের মধ্যে ৭২টি ফাঁস, নিশ্চিত ডুজা সভাপতি

2018-10-14 04:57:50

বিভিন্ন গণমাধ্যমে আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগের খবর প্রকাশিত হয়েছে। অনেকে ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে জানতে চেয়েছেন এর সত্যতা কতটুকু। এর ফলশ্রুতিতে এই স্ট্যাটাস। পোস্টটি দীর্ঘ মনে হলে আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।

গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘ ইউনিটের প্রশ্নপত্র পরীক্ষা শুরুর প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা আগে ফাঁস হয়েছে-এর চেয়ে নির্মম সত্য আর নেই। আমি এটা দ্ব্যর্থহীনভাবে মনে করি। এই লেখা সম্পূর্ণই আমার ব্যক্তিগত। এই লেখার জন্য যদি ডিজিটাল আইনের খড়্গ বা অন্য কোনো প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হই তবে তার দায়ও একান্তই আমার।

আমার কাছে যে তথ্য-প্রমাণ রয়েছে, তাতে আমি নিশ্চিত যে, এবারের ভর্তি পরীক্ষার ১০০টি প্রশ্নের মধ্যে ৭২টি উত্তর-সম্বলিত প্রশ্ন অন্তত পক্ষে একজন হলেও পরীক্ষা শুরুর পৌনে এক ঘণ্টা আগে হাতে পেয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে কতজনের হাতে সে প্রশ্ন পৌঁছেছে তা আমার কাছে অবান্তর। একজন পরীক্ষার্থীও যদি প্রশ্ন পেয়ে পরীক্ষা দিয়ে থাকে, তবে তা অন্যায় বলেই মনে করি।

একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরুতেই যদি কিছু অসাধু শিক্ষার্থীকে ভর্তির সুযোগ করে দেওয়া হয়, তবে সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থী কী ধরণের ডিগ্রি নিয়ে বের হবে সে কথা অনুভব করে নিজেকে আর কষ্ট দিতে চাচ্ছি না। বর্তমান বা সাবেক প্রশাসন, সবার বক্তব্যগুলো স্মরণ করলে মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ ছাড়া কিছু দেখতে পাই না।

আমার গতকালের প্রশ্ন ফাঁসের বা ভর্তি পরীক্ষার সংবাদ কাভার করার কথা ছিল না। কিন্তু যখন শুনি এমন একটি ঘটনা ঘটেছে তখন আর থাকতে পারিনি। বৃষ্টির মধ্যেই ছুটে যাই তথ্যদাতার সঙ্গে দেখা করার জন্য। এ তথ্য যিনি দিয়েছেন, তিনি নিজের নাম প্রকাশ করতে চান না, কার কাছ থেকে প্রশ্ন পেয়েছেন সেটাও বলেননি। কিন্তু তথ্য প্রযুক্তির কিছু বিষয় কখনো মুছে ফেলা যায় না। কিছু তথ্যের ক্ষতিসাধন করা যায়, কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা ও কমনসেন্স বলছে এই তথ্যটি কোনো ধরনের ক্ষতিসাধন ছাড়াই আমাদের হাতে এসেছে। জিমেইলের টাইম, ফেসবুক ইনবক্সের টাইম আপনি চেঞ্জ করে দেখান তো।

এ বিষয়গুলো যখন প্রশাসন বিশ্বাস করতে চায় না তখন আপনি কার কাছে বিচার চাইবেন? ফাঁস হওয়া প্রশ্ন ও উত্তরগুলো হাতে লেখা। এতে সর্বমোট ৭২টি প্রশ্ন ছিল। পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর মূল প্রশ্ন সংগ্রহ করে তার সঙ্গে মিলিয়ে সবগুলো প্রশ্নের হুবহু মিল পাওয়া গেছে। বাংলা অংশের ১৯টি, ইংরেজিতে ১৭টি, সাধারণ জ্ঞানের বাংলাদেশ অংশে ১৬টি ও আন্তর্জাতিক অংশের ২০টি প্রশ্ন ও উত্তর ফাঁস হওয়া কাগজগুলোতে ছিল।

প্রশ্নটি যার মাধ্যমে সাংবাদিকদের কাছে এসেছে তিনিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী। তিনি কেন জানালেন এই প্রশ্নের জবাবে আমাকে বলেছেন, তাঁর কাছে গ্রাম থেকে পরীক্ষার দিন সকালে এক ভর্তি পরীক্ষার্থীর বাবা এসেছেন। এই সময় তাঁর মুঠোফোনের চার্জ শেষ হয়ে গিয়েছিল। তিনি ওই শিক্ষার্থীর মোবাইল ধার করে প্রশ্নগুলো আদানপ্রদান করেছেন। আর শিক্ষার্থীটি কৌশলে সেগুলো নিজের কাছে রেখে দেন। তাঁর দেওয়া স্ক্রিনশট আমাদের নিশ্চিত করেছে যে ৯টা ১৭ মিনিটে প্রশ্নটি এই মুঠোফোনে এসেছে।

প্রশাসনের কেউ কেউ বলার চেষ্টা করেন, এসব স্ক্রিনশট এডিট করা যায়। তাঁদের কাছে আমার খুব জানতে ইচ্ছা করে, আপনারা এতটুকু পর্যন্ত বুঝে ফেলতে পারেন, এটা ‍বুঝেন না যে, স্ক্রিনশট এডিট করার সময়ের চেয়ে দ্রুতগতিতে প্রশ্নপত্র ছড়িয়ে পড়তে পারে? স্বীকার করলে সমস্যা কি যে, আমরা চেষ্টা করেছি কিন্তু এর মধ্যেও ঘটনা ঘটতে পারে, তদন্ত করে দেখছি। তা না করে সাংবাদিকদের প্রতি এমন ভাষা ব্যবহার করা হয় যেন খবরটি জানাতে গিয়ে আমরাই পাপ করে ফেলেছি।

আমি ব্যক্তিগতভাবে একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে এই ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত চাই। পূর্ব অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাউকে দিয়ে এ তদন্ত আমি সমমর্থন করি না। নৈতিক জোর থাকলে যেন স্বাধীন তদন্ত শেষ হওয়ার আগে ঘ ইউনিটের পরীক্ষার ফল স্থগিত রাখে এবং প্রশ্ন ফাঁস প্রমাণিত হলে তাদের ব্যর্থতার দায় মাথা পেতে নিয়ে পদত্যাগের আগাম ঘোষণা দেয়।

২০১৭ সালের ঘ ইউনিটের যে পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের যে অংশটুকু ফাঁস হয়েছিল, তা আমার মেইলে সংরক্ষিত আছে। সেখানে স্পষ্ট টাইম উল্লেখ করা আছে রাত ২টা বেজে ৩৫মিনিট। প্রশাসনের তদন্ত কমিটিতে সে প্রমাণ আমি জমা দিয়েছি। কিন্তু আজ একটা বছর হতে চললো, স্বীকারই করা হচ্ছে না পরীক্ষার আগের রাতেই প্রশ্ন ফাঁস হয়েছিল। আজব এক বিশ্ববিদ্যালয়, অদ্ভুত প্রশাসনের কিছু মানুষ। গতকালের প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রশাসনের অদ্ভুতদের একজন, আগের বছরের প্রসঙ্গ তুলে উল্টো সাংবাদিকদের প্রায় ঝাড়ি দিচ্ছেন।

যা-ই হোক। যেহেতু তদন্তে প্রমাণিত হয়নি, আমরা মেনে নিয়েছি। আগের বার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ তুললে সব দোষ সাংবাদিকদের ঘাড়ে চাপিয়ে বলা হয়েছিল, আমরা পরীক্ষার আগে কিংবা পরীক্ষা চলাকালীন প্রশাসনকে জানাইনি। তাই প্রশ্ন ফাঁস হয়নি। এর দায়ভারও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নেবে না। আর এবার? এবার একজন সাংবাদিক প্রশ্ন পেয়েছেন পরীক্ষা চলাকালে। সকাল সাড়ে ১০টা বাজে তখন। ওই সময় তিনি দুর্ভাগ্য বা সৌভাগ্যক্রমে প্রক্টরের কক্ষেই অবস্থান করছিলেন। তিনি সাথে সাথে সেখানে উপস্থিত সহকারী প্রক্টরদের সেটা অবহিত করেন। কিন্তু তারপরও প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় এক ব্যক্তি বলে ওঠলেন, আমি তো জানি না। প্রক্টর তো আমাকে কিছু বলেননি।

তার মানে কি প্রশ্ন ফাঁস হয়নি? প্রক্টর যদি না জানিয়ে থাকেন সে দায় তাঁর। আমার পক্ষে কি প্রত্যেককে কানে কানে বলে আসা সম্ভব যে স্যার প্রশ্ন ফাঁস হইসে, ম্যাডাম প্রশ্ন পাওয়া গেছে, লাগবে না কি? একটু চেক করে দেন যে আসল না নকল।

মামলা হামলার ভয় নিয়ে সাংবাদিকতা করতে আসি নাই। আমি বলব এবং বলেই যাব, গত বছরও প্রশ্নের একটি অংশ ফাঁস হয়েছে, এবারও ফাঁস হয়েছে। এর চেয়ে চিরন্তন সত্য আর নেই। অন্ধ হয়ে বসে থাকতে চাইলেই প্রলয় বন্ধ থাকে না।

বি.দ্র. প্রথমটা ২০১৭ সালের। আমার একটা মেইল থেকে আরেকটা মেইলে রাখা ছিল। আরেকটা ছবি সূত্রের নাম না করার স্বার্থে ব্লার করে দিলাম। উত্তরসহ প্রশ্নগুলো চাইলে গতকালের প্রশ্নটা নিজ দায়িত্বে সংগ্রহ করে মিলিয়ে দেখতে পারেন।

সম্পাদক: ইসমাঈল হোসাইন রাসেল
যোগাযোগ: ক্যাম্পাস টাইমস
৪৩ শহীদ নজরুল ইসলাম সড়ক, হাটখোলা রোড, চৌধুরী মল, টিকাটুলি, ঢাকা-১২০৩
মোবাইল: ০১৬২৫ ১৫৬৪৫৫
ইমেইল:[email protected]