ডিআইইউতে নেই পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা


Rakibul Islam | Published: 2024-03-06 22:56:44 BdST | Updated: 2024-04-28 20:11:43 BdST

সম্প্রতি বেইলি রোড, ঢাকার ওয়ারী এবং সর্বশেষ নিউমার্কেটের গাউছুল আজম মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের পর আগুনের ঝুঁকি নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। নেওয়া হচ্ছে নানা পদক্ষেপ। কিন্তু দেশের অন্যতম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে (ডিআইইউ) কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে উদাসীন।

সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, ডিআইইউর অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা খুবই ভঙ্গুর। যেকোনো জরুরি অবস্থার জন্য নেই পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। কিছু জায়গায় অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা থাকলেও সেগুলো কতটা কার্যকর তা নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা। এদিকে নতুন ভবনের ক্যাফেটেরিয়ার পাশে রাখা হয়েছে গ্যাস সিলিন্ডার। যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যদিকে আবাসিক হলগুলোতে অগ্নি নির্বাপণের জন্য নেই কোনো উন্নত সরঞ্জাম। শুধু তাই নয়, অগ্নিনির্বাপক গ্যাস, পাউডার সিলিন্ডার, হিটার ও ওয়ার্নিং অ্যালার্মের মতো প্রাথমিক ব্যবস্থাও এখানে নেই। নেই কোনো জরুরি বহির্গমন আধুনিক সিঁড়িও।

ঝুঁকিতে ডিআইইউর ৮ হাজার শিক্ষার্থী-

ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা বর্তমানে ৮ হাজার ১৭৪ জন। এবং শিক্ষক রয়েছেন ২৮৩ জন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভবন রয়েছে তিনটি। এই তিনটি ভবনের মধ্যে দুটি পুরাতন এবং একটি নতুন। পুরাতন মূল ভবনে অগ্নি নির্বাপন যন্ত্র থাকলেও বাকি দুটি ভবনের কোথাও নেই ফায়ার এক্সটিঙ্গুইশার। এদিকে সবগুলো যন্ত্র কেনার দিন ও মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ ছিলো না লেখা। এ ছাড়া অনেক যন্ত্রে নেই মেয়াদকাল নির্দেশক স্টিকারও। তাই যন্ত্রগুলোর ব্যবহার উপযোগিতা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়।

হলগুলোতেও অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা নাজুক-

ডিআইইউতে রয়েছে আবাসিক হলের সুবিধা। শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনায় বেশ কিছু হল রয়েছে এখানে। কিন্তু হলগুলোও যেনো একেকটা মৃত্যুকূপ। বিশেষ করে অগ্নিকাণ্ডের মতো ঘটনার জন্য মোটেও প্রস্তুত না হলগুলো। বিশ্বববিদ্যালয়ে মোট হলের সংখ্যা ৮টি। কিন্তু একটিতেও নেই অগ্নি নির্বাপন যন্ত্র। এতে শঙ্কার মধ্যেই থাকতে হচ্ছে তাদের।

আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা-

ইউনিভার্সিটির অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থার এই নাজুক অবস্থায় আতংকের কথা জানিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা৷ মাহফুজ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, এখন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বেড়েছে৷ কখন দূর্ঘটনা ঘটবে তার নিশ্চয়তা নেই। আমরা একটা আতঙ্কের মধ্যে থাকি। তাই পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ও কারিগরি প্রশিক্ষণ দেয়া দরকার সংশ্লিষ্ট সবাইকে।

বিশ্ববিদ্যালয়টির আরেক শিক্ষার্থী শান্তা বলেন, আমাদের বিভাগ নতুন ভবনে। কিছুদিন আগেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আমরা শঙ্কিত। এরমাঝে অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা পর্যাপ্ত না থাকায় আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয় আমাদের। জীবন হাতে নিয়েই একরকম ক্লাস করতে হচ্ছে।

অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ ছাত্রলীগেরও-

ইউনিভার্সিটির অগ্নিনির্বাপক এই নাজুক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে ছাত্রলীগও৷ ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এম. এম যায়েদ হোসেন বলেন, প্রতি ফ্লোরে শুধু অগ্নি নির্বাপন যন্ত্র প্রয়োজন বিষয়টি এমন না, আমাদের আসলে সঠিক যন্ত্র প্রয়োজন। যেন মেয়াদোত্তীর্ণ না হয়। কতৃপক্ষকে জানানো হবে অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্রগুলো যেন সঠিকভাবে থাকে। আমাদের অবশ্যই সতর্ক অবস্থানে থাকতে হবে। ক্যান্টিনের পাশে যে ফাঁকা জায়গা সেখানে সিলিন্ডার রাখা আবার সামনে গরম আসতেছে এজন্য আমরা সেফটি সিকিউরিটি বাড়ানোর জন্য কতৃপক্ষকে অনুরোধ করতে পারি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সেফটি সিকিউরিটির বিষয়টি অতি জরুরি।

তিনি আরও জানান, অগ্নি নির্বাপন যন্ত্র কিভাবে ব্যবহার করা উচিত এ বিষয়ে সেমিনার করার জন্য আমি কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করব এবং এটি অতীব প্রয়োজন। ছাত্রলীগ সবসময় শিক্ষার্থীদের পাশে কাজ করে। আমি ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ছাত্রলীগের একজন প্রতিনিধি হয়ে আশা করব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যেন বিষয়টি নিয়ে কাজ করে এবং দ্রুত সমাধান করে।

কি বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা জোরদার করা প্রয়োজন। যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি নিয়মিত পরিদর্শন ও মনিটরিং করা জরুরি। বিল্ডিংয়ে ফায়ার অ্যালার্ম সিস্টেম রাখা এবং সেগুলো সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। সেগুলো ঠিকমতো কাজ করে কি না এবিষয়টিও দেখতে হবে। আবার ফায়ার সার্ভিস, পরিদর্শন বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনের নিয়মিত বিল্ডিংগুলোর ভেতরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর নজরদারি করা প্রয়োজন। কোথাও এগুলোর গড়মিল পেলে তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

এ বিষয়ে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. গণেশ চন্দ্র সাহাকে ফোন করলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ব্যস্ততা দেখিয়ে ফোন কেটে দেন। এরপর যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি আবারও মিটিংয়ের ব্যস্ততা দেখিয়ে ফোন কেটে দেন।