
দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে ভ্যাটিকানের সিস্টিন চ্যাপেলের চিমনি দিয়ে বেরিয়েছে সাদা ধোঁয়া। এর মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা কোটি কোটি ক্যাথলিক বিশ্বাসীর জন্য ঘোষণা এসেছে—নতুন পোপ নির্বাচিত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৭ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা ৭ মিনিট) এই ঐতিহাসিক ঘোষণা নিশ্চিত হয়।
ভ্যাটিকানে অবস্থিত সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকার সামনে হাজার হাজার মানুষ জমায়েত হয়েছিলেন এই ঘোষণার জন্য। চিমনি থেকে সাদা ধোঁয়া বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গোটা স্কয়ারে উচ্ছ্বাসের জোয়ার বইতে শুরু করে। কেউ আনন্দে কেঁদে ফেলেন, কেউ হাত উঁচিয়ে প্রার্থনায় মগ্ন হন। চারপাশে ধ্বনিত হতে থাকে “ভিভা ইল পাপা!”—অর্থাৎ “পোপ দীর্ঘজীবী হোন!”
এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় গোপন কনক্লেভের মাধ্যমে, যেখানে ১৩৩ জন কার্ডিনাল অংশ নেন। নির্বাচিত পোপ পেতে প্রয়োজন ছিল অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের, অর্থাৎ ৮৯টি। জানা গেছে, নতুন পোপ সেই সংখ্যক ভোট পেয়েই নির্বাচিত হয়েছেন।
সাধারণত কনক্লেভে ভোটদানের পর ভোটগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হয়, এবং সেই আগুনে বিশেষ রাসায়নিক মিশিয়ে কালো বা সাদা ধোঁয়া তৈরি করা হয়। কালো ধোঁয়া মানে নতুন পোপ নির্বাচন হয়নি, আর সাদা ধোঁয়া মানেই পোপ নির্বাচনের সুখবর।
চিমনি থেকে সাদা ধোঁয়া বের হওয়ার পরপরই ব্যাসিলিকার ঘণ্টা বাজতে শুরু করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঐতিহ্যবাহী লাতিন ভাষায় ঘোষণা আসে—“হাবেমুস পাপাম!” অর্থাৎ “আমরা একজন পোপ পেয়েছি!” এক জ্যেষ্ঠ কার্ডিনাল ব্যাসিলিকার ব্যালকনি থেকে এই ঘোষণা পাঠ করবেন এবং নবনির্বাচিত পোপের প্রকৃত নাম ও তাঁর নির্বাচিত পোপীয় নাম জানাবেন।
ধারণা করা হচ্ছে, ঘোষণা দেওয়ার পর নবনির্বাচিত পোপ ব্যালকনিতে এসে প্রথমবারের মতো জনসমক্ষে উপস্থিত হবেন এবং সমগ্র বিশ্ববাসীর উদ্দেশে আশীর্বাদ প্রদান করবেন।
উল্লেখ্য, এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে পোপ ফ্রান্সিসের উত্তরসূরি নির্ধারণের জন্য। সারা বিশ্বের ক্যাথলিকদের জন্য এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আবেগঘন মুহূর্ত। অনেকেই আগেভাগেই প্রস্তুতি নিয়ে চেয়ার, কম্বল, খাবার ও প্রার্থনার সামগ্রী নিয়ে স্কয়ারে হাজির হয়েছিলেন, কারণ তাঁরা জানতেন—এই মুহূর্ত হতে পারে যুগান্তকারী।
বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি বিশ্বাসী এই ঘোষণার জন্য চোখ রাখছিলেন ভ্যাটিকানের দিকে। নতুন পোপ কী বার্তা দেবেন, কোন পথে তিনি চার্চকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন—এই প্রশ্নগুলো এখন ঘুরপাক খাচ্ছে বিশ্বাসীদের মনে।
নতুন পোপের পরিচয় ও তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানার অপেক্ষায় এখন গোটা বিশ্ব।