বুক রিভিউ: আর্গুমেন্টস অব আরজু


টাইমস অনলাইনঃ | Published: 2018-02-20 01:38:39 BdST | Updated: 2024-05-06 07:03:09 BdST

বইয়ের নাম নামঃ- আর্গুমেন্টস অব আরজু
লেখকঃ- আরিফুল ইসলাম
প্রচ্ছদঃ- আদনান আহমদ রিজন
প্রকাশকঃ- বইপোকা প্রকাশনী
মূল্যঃ- ২০০ টাক মাত্র
পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ- ১২৮
...................................................................................

:- প্রচ্ছদ নিয়ে কিছু কথা,
প্রথমেই বলছি ভালার লাগার মধ্যে অন্যতম ভাল লাগার হল বইটির (বইয়ের কাবার) প্রচ্ছদ।

:- প্রচ্ছদের দিকে একটু তাকান আর একটু মনযোগ দিয়ে ভাবুন। প্রচ্ছদেই এর উত্তর পেয়ে যাবেন।
প্রচ্ছদের উপরাংশ ও নিম্নাংশ নিয়ে আমি দুইটি তাহকীক, ব্যাখ্যা করে শেয়ার করলাম।

---(১)
:- প্রচ্ছদের উপরাংশে বহু বাতি,
তাঁর মধ্যে সামনেরটি জ্বালানো।
একটু খেয়াল করে দেখুন তো.......
এই পৃথিবীতে হাজার হাজার ধর্ম রয়েছে। ইসলাম ধর্মের সাথে অন্য ধর্মের সাথে কোন মিল নেই।
তাঁরা প্রভু এ ভূবনের সৃষ্টিককর্তা ব্যতীত অন্যদের পূজু করে, যা নিতান্তই বোকামি।
আর এখানেই
লেখক প্রচ্ছদের মধ্যে বিভিন্ন বাতির মধ্যে একটি বাতিকে প্রজ্বলিত করে একমাত্র প্রভুর দিকে ইঙ্গিত করেছেন।
আমি কি ভুল বললাম....????

---(২)
:- প্রচ্ছদের নিছের অংশে লক্ষ করুন।
দু হাতে জিঞ্জির পরিয়ে বাঁধার চিত্র প্রচ্ছদের সাথে সংযুক্ত করেছেন।
এর দ্বারা লেখক কি বুঝাতে চেয়েছেন। জানেন.??
আমার মন বলছে এই পৃথিবীতে একমাত্র ইসলাম ধর্ম হল নির্যাতিত নিপীড়িত। মুসলমানদের উপর বর্বরতা চলছে, ভবিষ্যতেও চলবে......

:- আর এই বর্বরতার মধ্যে মুসলমানরা আল্লাহ কে ভুলে থাকতে পারে না। জেল জুলুম যতই বাধা আসুক আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে যাবেই।
ইতিহাস খুঁজলে এর বাস্তবতায় প্রমাণ পাওয়া যায়।

:- প্রচ্ছদের ব্যাখ্যা #লেখকের সাথে মিলেছে কি জানিনা।
তবে আমি ১০০% শিয়র এটাই লেখকের লক্ষ্য উদ্দেশ্য হবে।
...................................................................................

এবার আসা যাক
বইয়ের রিভিউ সম্পর্কে ....!!!

:- লেখক বইটির মধ্যে নাস্তিকতার জটিল প্রশ্নের আলোকে সুন্দর করে এর উত্তরগুলো সাজিয়েছেন।
বইটি পড়ে আমি মুগ্ধ হলাম, এককথায় অসাধারণ।

:- লেখক বইটিতে নাস্তিকদের বিভ্রান্তিকর প্রশ্নের জবাব এত সহজ সরল সাবলীল ভাষায় উপস্থাপনা করেছেন। যার প্রশংসা না করে উপায় নেই।
নাস্তিকদের বিভ্রান্তিকর প্রশ্ন যে কোন মানুষকেই বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলে দিবে এটাই সাভাবিক।
লেখক তাতে তাঁদের বিভ্রান্তিকর প্রশ্নের দাঁত ভাঙ্গা জবাব দিয়েছেন।

প্রত্যেকটি অধ্যায় পড়েছি আর মুগ্ধ হয়েছি।
তন্মধ্যে ভাল লাগার মধ্যে যে অধ্যায় গুলো আমাকে বেশ মুগ্ধ করেছে সে অধ্যায়গুলো সম্পর্কে আংশিক কিছু আলোচনা করবো।
...................................................................................

তা হলে শুরু করা যাক,
:- লেখক বইয়ে ২৬ টি প্রশ্নের উত্তর দিতে ২৬ টি অধ্যায় তৈরী করেছেন, আর সে সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।

:- আমি তিনটি অধ্যায়ের আংশিক কিছু আলোচনা করে বই সম্পর্কে কিছু ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করছি।
-- (১)
২৬ টি অধ্যায়ের মধ্যে লেখক #মিথ্যা_তুমি_দশ_পিঁপড়া" অধ্যায় দিয়ে বই শুরু করেছেন।

:- এই অধ্যায়ে নাস্তিক অভিজিৎদা আরজুকে ধর্মীয় ব্যাপারে প্রশ্ন করলেন আচ্ছা আমি শুনলাম তোমাদের কুরানে নাকি সামান্য পিঁপড়ার কাহিনি উল্লেখ আছে। ওরা একেকজন আরেকজনের সাথে কথা বলছে সেই কাহিনীও আছে।

আরজু উত্তরে বললো হ্যাঁ, এরকম কাহিনী আছে। এমনকি শুধু পিঁপড়ার নামে পবিত্র "কোরআনে" একটি সূরাও আছে। সূরাটির নাম "আন-নামল" বা পিঁপড়া।

এই কথা শুনে অভিজিৎদা পাগলের মত হাসতে হাসতে বললেন বড়ই হাস্যকর তোমাদের কুরান। পশু পাখির নামে একেকটা অধ্যায়। কোথাও গরুর নামে সূরা, কোথাও মৌমাছির নামে আবার কোথাও পিঁপড়ার নামে।

:- আরজু এই হাস্যকর প্রশ্নের জবাব খুব সুন্দর করে দাঁত ভাঙ্গা জবাব দিলেন।

:- আরজু অভিজিৎদাকে বলল বাংলাদেশের প্রথম সার্চ ইঞ্জিন কোনটি।

:- অভিজিৎদা হেসে হেসে জবাব দিলেন প্রথম সার্চ ইঞ্জিনের নাম পিপীলিকা ; সাস্টের শিক্ষার্থীরা বানিয়েছে।

:- এবার আরজু বললো, এই আধুনিক যুগে এসে কেউ আধুনিক প্রযুক্তির নামকরণ করেছে 'পিপীলিকা' আর তাদেরকে আপনি বিজ্ঞানমনা বলেছেন,আর ১৪০০ বছর আগে কেউ পিপীলিকার কথা বললে আপনি তাঁকে আদিম যুগের বর্বর মানুষের সাথে তুলনা করেছেন। বাহ! এটাই হলো আপনাদের ডাবল স্ট্যান্ডার্ড।
.............. বিস্তারিত লেখা সম্ভব না।

-- (২)
লেখককের আরেকটি অধ্যায়,
:- "কাফেরদের অন্তরে আল্লাহ সীলমোহর মেরে দিলে তাদের দোষ কোথায়?"

:- অন্যান্য অধ্যায়র তুলনায় এই প্রশ্নের জবাব পড়ে অনেক মুগ্ধ হলাম।
এত জটিল প্রশ্নের জবাব লেখক নাস্তিক স্যারকে তাঁরই সিগারেটের বাক্স দিয়ে এত চমৎকার ভাবে জবাব দিলেন। যা আমি অধমের কল্পনার বাহিরে।

:- স্যারের প্রশ্নের জবাব আরজু বিভিন্ন পদ্যতিতে বুঝাতে লাগলো কিন্তু স্যারের মুখের দিকে তাকালে মনে হয় তিনি সঠিক জবাব পাননি।

:- এর পর আরজু সঠিক পন্থায় জবাব দিতে লাগলো।
আরজু
স্যারকে বললো আচ্ছা স্যার আপনি যে সিগারেট খেয়েছেন তাঁর প্যাকেটটা দিন।

:- স্যার সিগারেটের প্যাকেট দিলে আরজু বললো, স্যার এই দেখুন এখানে কী লেখা।
স্যার
প্যাকেটের দিকে তাকিয়ে দেখলেন সেখানে লেখা "Smoking is injurious to health." অর্থাৎ ধূমপান স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর।
আরজু একটু হাসলো।

:- তারপর বললো "স্যার" আপনি একজন শিক্ষত মানুষ। এই লেখাটা পড়েও আপনি সিগারেট খাচ্ছেন। এমনকি পৃথিবীর কোন ধূমপায়ী এই লেখাটা পড়ে ধূমপান করা বাদ দিয়েছে এরকম ঘটনা নাই।
তাহলে দেখুন,
এখানে ধূমপান করার ক্ষতিকর দিকগুলোর কথা বলা হয়েছে, তবুও কি মানুষ ধূমপান করা বাদ দিয়েছে?

অতঃপর স্যারের মুখ থেকে আর কোন জবাব এলনা।
ব্যাস
আরজুর দাঁত ভাঙ্গা জবাবে স্যারের মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো।

---(৩)
আরেকটা অধ্যায়
"গডের সাথে গণিতের কোনো সম্পর্ক আছে?

এই অধ্যায়টিও আমাকে বেশ মুগ্ধ করেছে।

:- আল্লাহ তাঁর নাজিল করা কোরআনে এমন কিছু গাণিতিক রয়েছে যা জানলে আপনিও আশ্চর্যর সাথে ঈমানও পাকাপোক্ত হবে।

:-- সেখান থেকে কিছু গাণিতিক হিসাব আপনাদের শিয়ার করছি.....
মৌমাছির দেহে
ক্রোমোজমের সংখ্যা পুরুষের ক্ষেত্রে ১৬ টি আর স্ত্রী মৌমাছির ১৬ জোড়া।
আর কোরআনে মৌমাছি নিয়ে একটি সূরাও আছে সূরাটির নাম হলো 'সূরা আন-নাহল'। আশ্চর্যজনকভাবে
এই সূরাটি কোরআনের ১৬ নাম্বার সূরা আর মৌমাছির দেহে ক্রোমোজমের সংখ্যাও ১৬ টি।

:- পৃথিবীতে স্থলভাগ ও জলভাগের পরিমাণ কত?
এর উত্তরও গাণিতিক ভাবে আল্লাহ তা'আলার কোরআনে বলে দিয়েছেন যা বিজ্ঞানের দেয়া তথ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

:- আরজু সেই গডের গাণিতিক মিলের প্রশ্নের জবাবে আর বিস্ময়কর তথ্য দিয়ে তাঁদের অবাক করে দেয়......

:- কোরআনে একবচনে "দিন" শব্দটি এসেছে ৩৬৫ বার (এক বছর) , বহুবচনে এসেছে ৩০ বার (এক মাস) , মাস শব্দটি এসেছে ১২ বার ( ১২ মাস)।

:- জান্নাত শব্দটি এসেছে ৭৭ বার আর জাহান্নাম শব্দটিও এসেছে ৭৭ বার।

:- বিশ্বাস শব্দটি এসেছে ১৭ বার আর অবিশ্বাস বা কুফরি শব্দটিও এসেছে ১৭ বার।
ভালো ও খারাপের কথা ১৬৭ বার করে। শয়তান ৮৮ ফেরেশতা শব্দটিও ৮৮ বার এসেছে।

কোরআনে আল্লাহ পুরুষের কথা উল্লেখ করেছেন ২৩ বার আর নারীর কথাও ২৩ বার।

:- এই অধ্যায়ে পবিত্র কোরআন গাণিতিক সম্পর্কে আরো কিছু তত্ত্ব রয়েছে। যা পড়লে আপনি আরো বেশ আশ্চর্য হবেন।

:- একটা বইয়ে এরকম সাদৃশ্য তো তখনই থাকতে পারে যখন এটা এমন একজন মহাবিজ্ঞানী লিখবেন যার প্রশংসা আমরা কোন ভাবেই করে শেষ করতে পারবো না। আর সেই মহাবিজ্ঞানীকে আমরা "আল্লাহ" নামি ডাকি।

লেখক এরকম ভাবে নাস্তিকদের বিভ্রান্তিকর ২৬ টি প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। যা প্রত্যেকটা জবাব আপনাকে মুগ্ধ করবে।

...................................................................................

:- "আর্গুমেন্টস অব আরজু"
বইটি পড়ে আমাদের অনেক বিভ্রান্তিকর প্রশ্নের জবাব জানার এবং বুঝার আছে। যা ভবিষ্যতে কারো সাথে তর্কে জরালে বিভ্রান্তির মধ্যে পরতে হবে না।
পড়ে অনেক কিছু জানলাম, বুঝলাম, মুগ্ধ হলাম। বিশেষ করে লেখকের উপস্থাপনা চমৎকার।

:- বই সম্পর্কে কি লিখবো? বইয়ের তাৎপর্য কি তুলে ধরবো? তাঁর অভিজ্ঞতা আমার নেই বললেই চলে।
আমার অল্প জ্ঞানের আলোকে তিনটি অধ্যায়ের আংশিক কিছু আলোচনা করে তুলে ধরেছি, আশা করি বই সম্পর্কে কিছুটা না হয় আপনাদের বুঝাতে পেরেছি।
অল্পতেই বুঝতেছেন তো বইটা কেমন হবে.?

:- মিথ্যাকে ধূলিসাৎ করে সত্যের ঝাণ্ডা উড্ডীন করা হোক সকল লেখকের লক্ষ্য উদ্দেশ্য।
আল্লাহ তা'আলার দরবারে একটাই ফরিয়াদ যে লেখকের এই কষ্টের প্রতিদান উত্তম জাযায়ে খায়ের দান করুন।
বেশ বেশ করে আমাদের আরো চমৎকার বই উপহার দিন। এই কামনায় প্রভুর দরবারে থাকবে সবসময়।
আল্লাহ সবাইকে কবুল করুন । আমিন।

:- সবার তরে একটা অনুরোধ
বই মেলা চলতেছে, পুরো মাস চলবে।
আপনার কেনা বইয়ের তালিকা থেকে উল্লেখিত বইটি কিনতে যেন কারো মিস না হয়। মন থেকে বলছি আপনার টাকা বিফলে যাবে না।

লেখকঃ রিভিউ লেখক মুজাহিদ 

বিডিবিএস