২০ বছর বয়সে বিনিয়োগ করে ৩০-এর মধ্যে কীভাবে ধনী হতে পারবেন জেনে নিন


Dhaka | Published: 2021-08-31 01:42:12 BdST | Updated: 2024-04-26 09:56:20 BdST

২৫ বছর থেকে বিনিয়োগ শুরু করে ৫৫ বছর বয়স পর্যন্ত চালিয়ে গেলে যে পরিমাণ লাভ পাবেন, তার চেয়ে অনেক বেশি লাভ পাবেন ২০ বছর বয়সে বিনিয়োগ শুরু করলে। শুরুর দিকে লাভের ব্যাপারটা তেমন একটা চোখে পড়বে না। কিন্তু আগেভাগে বিনিয়োগ শুরু করলে পরবর্তীতে দারুণ ফল পাবেন।

সংগৃহীত প্রতীকী ছবি
বয়স বিশের কোঠায় পড়লেই মোটামুটি আমরা সবাই প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে উঠি। এ সময়ই আমরা অনেকে চাকরির বাজারে প্রবেশ করি।

বয়স যখন বিশের কোঠায়, তখন কিছু স্মার্ট পদক্ষেপ নিলে ত্রিশে পৌঁছতে পৌঁছতেই মোটামুটি ধনী হয়ে যাওয়া সম্ভব। উপার্জিত টাকা বুদ্ধি খাটিয়ে, সুশৃঙ্খলভাবে বিনিয়োগ করতে পারলে সম্ভব ভালো লাভ পাওয়া।

২৫ বছর থেকে বিনিয়োগ শুরু করে ৫৫ বছর বয়স পর্যন্ত চালিয়ে গেলে যে পরিমাণ লাভ পাবেন, তার চেয়ে অনেক বেশি লাভ পাবেন ২০ বছর বয়সে বিনিয়োগ শুরু করলে। শুরুর দিকে লাভের ব্যাপারটা তেমন একটা চোখে পড়বে না। কিন্তু আগেভাগে বিনিয়োগ শুরু করলে পরবর্তীতে দারুণ ফল পাবেন।

জেনে অবাক হবেন, ওয়ারেন বাফেটও ১১ বছর বয়সে বিনিয়োগ শুরু করেছিলেন। বর্তমানে তার মোট সম্পদের পরিমাণ ১০৩ বিলিয়ন ডলার। মজার ব্যাপার হলো, এই ১০৩ বিলিয়ন ডলারের ১০০ বিলিয়ন ডলারই এসেছে ওয়ারেন বাফেটের ৬৫তম জন্মদিনের পর!

হয়তো ভাবছেন, কীভাবে বিনিয়োগ শুরু করবেন, কত টাকা বিনিয়োগ করবেন, কোথায় বিনিয়োগ করবেন।

কিছু অ্যাপের কল্যাণে বিনিয়োগ করা আজকাল স্মার্টফোনে গেম খেলার মতোই সহজ কাজ। কিন্তু কতটা বিনিয়োগ করা উচিত—এই প্রশ্নের জবাব হলো, যত বেশি সম্ভব। যত বেশি বিনিয়োগ করবেন, ততই ভালো।

কত টাকা বিনিয়োগ করবেন

প্রথমেই আপনাকে যা করতে হবে তা হলো, বিনিয়োগের জন্য যতটা সম্ভব সঞ্চয় করা। এর জন্য আপনার আয়কে তিন ভাগে ভাগ করতে পারেন—প্রয়োজন, শখ এবং সঞ্চয়।

আপনার আয়ের একটা নির্দিষ্ট অংশ সঞ্চয়ের জন্য বাঁচিয়ে রাখুন। মোটামুটি সর্বজনীন একটা অনুপাত হচ্ছে ৫০:৩০:২০। অর্থাৎ মোট বেতনের ৫০ শতাংশ দিয়ে আপনার প্রয়োজন মেটাবেন, ৩০ শতাংশ দিয়ে শখ পূরণ করবেন, আর বাকি ২০ শতাংশ সঞ্চয় করবেন। কিন্তু এখন যেহেতু অনেকেই বাড়িতে বসে 'ওয়ার্ক ফ্রম হোম' করছেন, কাজেই উপার্জনের বড় একটা অংশ সঞ্চয়ের জন্য বরাদ্দ রাখতে পারেন।

একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা সঞ্চয়ের জন্য বরাদ্দ রাখলে আপনার জীবন একটা নিয়মের মধ্যে চলে আসবে। আর পরবর্তী জীবনে ভালো ফল পাওয়ার জন্য বিশ বছর বয়স থেকেই আপনাকে সুশৃঙ্খল জীবনযাপন করতে হবে। প্রতি মাসে আপনি যে পরিমাণ টাকা সঞ্চয় করতে চান, তা বাস্তবসম্মত হতে হবে। সবকিছু হিসেব করে টাকা বরাদ্দ করুন। খরচ করুন, কিন্তু খোলামকুচির মতো টাকা ওড়াবেন না।

বিনিয়োগের আগে

প্রথমত, তাড়াহুড়া করে বিনিয়োগ করা শুরু করবেন না। প্রথমে আপনার দেনা (ক্রেডিট কার্ডের বকেয়া, ঋণ ইত্যাদি) পরিশোধ করুন। এসব দেনা আপনার কাছ থেকে চড়া সুদ নিয়ে নেয়।
দ্বিতীয়ত, জীবন ও স্বাস্থ্য বীমা করে ফেলুন। অপ্রত্যাশিত জরুরি অবস্থা মোকাবিলার জন্য বীমা খুব কাজে লাগে।
তৃতীয়ত, একটা জরুরি তহবিল করুন। ৩–৬ মাসের বেতনের সমান টাকা নিয়ে এই তহবিল করতে পারেন। বিনিয়োগের পাশাপাশি একটা জরুরি তহবিলও তৈরি করা যেতে পারে।
চতুর্থত, নিজের ওপর বিনিয়োগ করুন। নতুন নতুন দক্ষতা শিখুন বা নতুন সরঞ্জাম কিনুন, যা আপনাকে আরও উপার্জন করতে সাহায্য করতে পারে।
কোথায় বিনিয়োগ করবেন

বিনিয়োগের তিনটি অপশন আছে: ইকুইটি, ডেবট এবং বিকল্প বিনিয়োগ

ইকুইটি বিনিয়োগ সরাসরি পুঁজিবাজার বা মিউচুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে করা যায়। সরাসরি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা খুব কষ্টকর ও ঝুঁকিপূর্ণ। নতুনদের জন্য ইকুইটিতে বিনিয়োগের জন্য ইকুইটি মিউচুয়াল ফান্ড সহজ সমাধান।

দুই ধরনের মিউচুয়াল ফান্ড আছে:

১. প্যাসিভ ফান্ড (ইনডেক্স ফান্ড)
২. অ্যাক্টিভ ফান্ড

প্যাসিভ ফান্ডে বিনিয়োগ মানে মিউচুয়াল ফান্ড ম্যানেজারকে মাথা খাটাতে হবে না। এখানে ম্যানেজার দেদারসে সবগুলো ইনডেক্স কপি করবে এবং আপনি বাজারের আয়ের সমান রিটার্ন পেতে পারেন।

ইনডেক্স ফান্ডে এসআইপি শুরু করা প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে খুব ভালো হতে পারে। কারণ এতে বাজারের সমতুল্য রিটার্ন আসে। নতুনদের জন্য এটি বেশ ভালো। আরও ভালো জানাশোনা হওয়ার পর অন্যান্য ফান্ডেও বিনিয়োগ শুরু করতে পারেন। তবে ইনডেক্স ফান্ড নির্বাচনের বেলায় খুব একটা ভুল করা চলবে না। কাজেই সব টাকা ইনডেক্স ফান্ডে বিনিয়োগ না করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

অ্যাক্টিভ বিনিয়োগে মিউচুয়াল ফান্ড ম্যানেজারকে মাথা খাটাতে হয়। তবে বিনিয়োগের জন্য সেরা ফান্ড খুঁজে বের করার জন্য একটু গবেষণা করতে হবে।

যেভাবে বাছাই করবেন ভালো মিউচুয়াল ফান্ড

তথ্যপত্র ঘেঁটে নিচের ব্যাপারগুলো জেনে নিন:

অতীত ইতিহাস
ব্যয়ের অনুপাত (১.৩–১.৫ শতাংশ, এর বেশি হওয়া উচিত নয়)
অ্যাসেট আন্ডার ম্যানেজমেন্ট (এইউএম যত বড় হবে ফান্ডকে তত নিরাপদ ধরে নেওয়া যেতে পারে)
ফান্ড ম্যানেজারের প্রোফাইল—তার মতাদর্শ, ট্র্যাক রেকর্ড খতিয়ে দেখুন।
মিউচুয়াল ফান্ডের কোম্পানিগুলো—যেসব কোম্পানি ও শিল্পে ফান্ড বিনিয়োগ করা হচ্ছে, সেগুলোর ব্যাপারে খোঁজ নিন।
ডেবট

ডেবট বিনিয়োগ সরাসরি করা যায়। কিন্তু খুচরা বিনিয়োগকারীদের জন্য সরাসরি বিনিয়োগ করা সমীচীন নয়। ডেবট মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা ভালো। আপনি যদি পাঁচ বছরের কম সময় ধরে বিনিয়োগ করেন, সেক্ষেত্রেও এটি ভালো।

ডেবট মিউচুয়াল ফান্ডে সবসময় ৫ বছরের কম মেয়াদে বিনিয়োগের সুযোগ খুঁজবেন।

ডেবট ফান্ডের প্রকারভেদ:
–অতি স্বল্পমেয়াদী/লিকুইড ফান্ড: ১ বছরেরও কম
–স্বল্পমেয়াদী: ১-৩ বছর
–মাধ্যমমেয়াদী: ৩-৫ বছর
–দীর্ঘমেয়াদী: ৫ বছরের বেশি

ডেবট মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করার সময় আপনার সময়কাল এবং ডেবট ফান্ডের সময়কাল যেন একই হয়, তা নিশ্চিত করা জরুরি।

যেভাবে বাছাই করবেন ডেবট মিউচুয়াল ফান্ড

মাত্রাতিরিক্ত রিটার্নের আশা করবেন না
ফান্ড ম্যানেজারের ১০ বছরের ইতিহাস চেক করুন
মান পরীক্ষা করুন—কমপক্ষে ৭০ শতাংশ ('এ' রেটেড) মানসম্পন্ন যেন হয়
পিএসইউ, কর্পোরেট, কোথায় টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে, তা পরীক্ষা করুন।
ব্র্যান্ডের নাম খতিয়ে দেখুন
ম্যানেজমেন্টের অধীনে অ্যাসেট পরীক্ষা করে দেখুন

ডেবট বিনিয়োগের মোটামুটি সর্বজনগ্রাহ্য নিয়ম হলো, এটি আপনার বয়সের সমান হওয়া উচিত। তবে সেটা নির্ভর করবে আপনার ঝুঁকি নেওয়ার ইচ্ছার ওপর। ঝুঁকি নেওয়ার ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়াবেন-কমাবেন।

প্রথমে ১-২টি ভালো মিউচুয়াল ফান্ড এবং ১টি ভালো ডেবট মিউচুয়াল বাছাই করে বিনিয়োগ শুরু করুন। আপনার বিনিয়োগকে যথাসম্ভব সহজ ও সুশৃঙ্খল রাখুন, যাতে সুদের চক্রবৃদ্ধি থেকে প্রকৃত উপকার পেতে পারেন।

বিকল্প বিনিয়োগ

বিকল্প বিনিয়োগে হলো সোনা, ক্রিপ্টোকারেন্সি, আরইআইটি, বিদেশি পুঁজিবাজার ইত্যাদি। এই সবগুলোরই নানা ধরনের ঝুঁকি ও লাভ রয়েছে। বিনিয়োগ করার আগে এই ব্যাপারগুলো ভালোমতো জেনে নিন।

বিকল্প বিনিয়োগে আপনার পোর্টফোলিও প্রায় ১০-২০ শতাংশ হবে।

কর সাশ্রয়

কর সাশ্রয়ের জন্য পিপিএফ, এনএসএস, ইএলএসএস, ৫ বছর মেয়াদী ফিক্সড ডিপোজিট ইত্যাদি বিকল্পে বিনিয়োগ করতে পারেন।

সূত্র: ফাইনানসিয়ালএক্সপ্রেস ডটকম