প্রাথমিকের পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ মূল্যায়নের ভিত্তিতে


এম এ লতিফ | Published: 2020-08-27 01:52:03 BdST | Updated: 2024-05-06 02:39:32 BdST

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শেকে পঞ্চম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা আনুষ্ঠানিকভাবে না নেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। পরিকল্পনা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা হবে মূল্যায়নের ভিত্তিতে। কোভিড-১৯ ভাইরাসের কারণে সিলেবাস শেষ না হওয়া, সেশন জট সৃষ্টি না করা এবং শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এ পরিকল্পনা নেওয়া হয়।

কেন্দ্রীয়ভাবে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষা না নিয়ে বার্ষিক পরীক্ষা স্ব স্ব বিদ্যালয়ে নেওয়ার প্রস্তাবনা তৈরি করে গত ১৮ আগস্ট পাঠানো হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) তা মন্ত্রণালয়ে পৌঁছে। প্রস্তাবনা অনুযায়ী পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা মূল্যায়নের ভিত্তিতে নেওয়ার কথা বলা হয়। একইভাবে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়ারও কথা বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন বলেন, ‘প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি পরীক্ষা কেন্দ্রীয়ভাবে হবে না। প্রাথমিকের সব শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষাও একই রকম হবে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে যে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছিলাম তা অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে পরীক্ষা কীভাবে নেওয়া হবে সে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রধান শিক্ষকদের ওপর। তারা যেভাবে প্রশ্ন করবেন, সেভাবেই হবে। স্ব স্ব বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ সিদ্ধান্ত দেবেন।’ প্রধান শিক্ষকদের গাইডলাইন দেওয়া হবে বলেও জানান সিনিয়র সচিব।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কোভিড-১৯ ভাইরাসের প্রভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে। বন্ধ থাকবে আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে। গত ১৭ মার্চ পর্যন্ত ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ পাঠদান সম্পন্ন হয়েছে শিক্ষার্থীদের। এই পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রাথমিক ও ইবতেদায়ির শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না। পাশাপাশি প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মূল্যায়নের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের পরবর্তী শ্রেণি উত্তীর্ণ করা হবে। তবে পুরো বিষয়টি কিভাবে অনুষ্ঠিত হবে তা নির্ভর করছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও করোনা পরিস্থিতি অনুযায়ী।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, যদিও বাংলাদেশ টেলিভিশন চলমান ‘ঘরে বসে শিখি’ অনুষ্ঠান চলমান রয়েছে। কিন্তু সব শিক্ষার্থীর বাসায় টেলিভিশন না থাকায় এবং টেলিভিশন থাকলেও অধিকাংশ শিক্ষার্থীর বাসায় ক্যাবল সংযোগ না থাকায় সব শিক্ষার্থীরা সম্প্রচার দেখতে পারেনি।

মন্ত্রণালয়ের জরিপ অনুযায়ী পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ৫৬ শতাংশ টেলিভিশনে শ্রেণি কার্যক্রমের সম্প্রচার দেখার সুযোগ ছিল। সেই বিবেচনায় গত ১২ আগস্ট থেকে বাংলাদেশ বেতারে ‘ঘরে বসে শিখি’ শ্রেণি কার্যক্রম সম্প্রচারের মাধ্যমে পঞ্চম শ্রেণির ৯৭ শতাংশ শিক্ষার্থীকে শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় আনার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এছাড়া মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ৬৭ শতাংশ শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া এবং কোভিড-১৯ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কথা বলেছেন।

শিক্ষার্থীরা পরবর্তী শ্রেণিতে গিয়ে দক্ষতা অর্জন করতে যাতে পারে সে ব্যবস্থার পরিকল্পনাও করা হয়েছে। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে অবশিষ্ট শ্রেণি কার্যক্রম শেষ করা হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী পরবর্তী শ্রেণিতে সমস্যা না হয় সে কারণে বর্তমান শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের যেসব অংশ পরবর্তী শ্রেণির জন্য গুরুত্বপূর্ণ সেদিক বিবেচনায় রেখে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে সিনিয়র সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন বলেন, ‘জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমিকে (নেপ) তিনটি বিকল্প পাঠ পরিকল্পনা করতে বলা হয়েছে। সেপ্টেম্বর, অক্টোবর এবং নভেম্বর মাসের জন্য তিনটি পরিকল্পনা করতে বলা হয়েছিল। যেহেতু সেপ্টেম্বরে এখনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার মতো পরিবেশ তৈরি হয়নি, তাই সেপ্টেম্বরকে বাদ দিয়ে অক্টোবর এবং নভেম্বরকে সামনে রেখে যে পাঠ পরিকল্পনা করেছি। সেটাকে সামনে রেখে, সেটার ভিত্তিতে প্রত্যেকটা স্কুল ওয়ান থেকে ফাইভ পর্যন্ত প্রশ্নপত্র করে পরীক্ষা নেবে। কীভাবে নেবে তা প্রধান শিক্ষকের উপর নির্ভর করবে।’ একটি গাইডলাইন তৈরি করে প্রধান শিক্ষকদের দেওয়া হবে বলে জানান সচিব।

এদিকে, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) শিক্ষার্থীদের শ্রেণিভিত্তিক দক্ষতা অর্জনের জন্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষাবর্ষ বাড়ানোর প্রস্তাবনা দিয়েছে। এসব বিষয় মাথায় রেখেই কাজ করছে নেপ।

এর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন জানিয়েছিলেন, ১ জানুয়ারিতে পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের দেওয়া হবে। তবে শিক্ষার্থীদের পরবর্তী শ্রেণির জন্য দক্ষ করে তুলতে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস শেষ করতে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শ্রেণি কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হবে। ষষ্ট শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের। প্রাথমিকের ক্ষেত্রেও একই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন