অনশনের ৫ম দিন: বাড়ছে মাদ্রসা শিক্ষকদের অসুস্থতার সংখ্যা!


টাইমস অনলাইনঃ | Published: 2018-01-14 00:23:23 BdST | Updated: 2024-05-05 02:02:35 BdST

ইবতেদায়ী মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবিতে সারাদেশ থেকে আগত মাদ্রাসা শিক্ষকদের আমরণ অনশনের ৫ দিন অতিবাহিত হলেও উপর মহল থেকে আজও মেলেনি কোন আশ্বাস। অনশন পালন করতে গিয়ে অসুস্থতার সংখ্যা দিন দিনই বাড়ছে। প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষক অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তীব্র শীতের মধ্যেও দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অনশন পালনের সিদ্ধান্তে অনড় শিক্ষক নেতারা।

সরেজমিনে জাতীয় প্রেসক্লাবে গিয়ে দেখা যায় যে, শতশত শিক্ষক বসে শুয়ে দাঁড়িয়ে যে যার মতো করে অনশন পালন করছেন। বেশিরভাগ শিক্ষকই অনশন পালন করতে গিয়ে দুর্বল হয়ে স্যালাইন পুশ করেছেন শরীরে। এদের প্রত্যেকের চেহারা মলিন ও অভুক্ত। প্রত্যেকে অপেক্ষা করছেন একটি শুভ সংবাদের জন্যে। রাত শেষ হয়, দিন শেষ হয়, অনশনের দিন বাড়ে আর বাড়ে আক্ষেপ। প্রশ্ন তাদের একটাই আমাদের কি কেউ দেখার নাই?

বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রিয় কমিটির সহ-সভাপতি ও লক্ষ্মীপুর জেলা স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির সভাপতি মাওলানা আবদুর রহিম আক্ষেপ করে বলেন, দাবি আমাদের মানতেই হবে। এটা আমাদের নৈতিক দাবি। ‍

তিনি আরো বলেন, আপনারা দেখেন, ২০১৭ সালে সারাদেশে মাত্র ৩টি উপজেলায় প্রাথমিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শতভাগ পাশ করেছে আর সারাদেশে ৬১টি উপজেলায় শতভাগ পাশ করেছে ইবতেদায়ী স্বতন্ত্র মাদ্রাসাগুলোতে। অথচ আমরা ২০১৪ সালে থেকেই জাতীয়করণের দাবিতে বিভিন্ন ভাবে আন্দোলন করেও সরকারের সুদৃষ্টি পাইনি।

আগের আন্দোলনগুলোতে সরকারের দৃষ্টি কতটুকু পেয়েছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আগেও অনেক আন্দোলন করেছি, কিন্তু এই প্রথম আমরণ অনশনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। দাবি আদায় করতে গিয়ে আমাদের প্রায় দেড়শতাধিক শিক্ষক অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত জীবন দিয়ে হলেও আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো।

মাওলানা আবদুর রহিম লক্ষ্মীপুর জেলার ১৮ নং কুশাখালি ইউনিয়নের পশ্চিম নলডগি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক। লক্ষ্মীপুর থেকে তার সাথে বিভিন্ন মাদ্রাসার প্রায় ২০০ শতাধিক শিক্ষক আন্দোলনের প্রথম দিন থেকেই অংশগ্রহণ করছেন। লক্ষ্মীপুরে রেকর্ডকৃত মাদ্রাসার সংখ্যা ১২৮টি।

লক্ষ্মীপুরের ফরাশগঞ্জ মোহাম্মদিয়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষক খোরশেদ আলম মিল্লাত, আমরণ অনশনে অংশগ্রহণ করে এ পর্যন্ত দুবার অসুস্থ হয়েছেন। স্যালাইন দিয়ে একটু সুস্থ হওয়ার পর আবারো তিনি আমরণ অনশনে যোগ দিয়েছেন।

অন্দোলন নিয়ে কথা বলেছিলাম তার সাথে। তিনি জানান, আজ জাতীয়করণের দাবিতে শিক্ষকদের জীবন মৃত্যুর সাথে লড়াই করতে হচ্ছে। না খেয়ে মরার চেয়ে দাবি আদায়ের লড়াইয়ে মরতে রাজি আমরা। তবুও এবার দাবি পূরণ করে বাড়ি ফিরবো।

এরই মধ্যে গুরুতর অসুস্থ হওয়া কয়েকজন শিক্ষককে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার জন্যে। নীলফামারী থেকে আগত কয়েকজন শিক্ষককে অসুস্থ দেখে সহকর্মী মোজাম্মল হক কেঁদে কেঁদে বললেন আমরা কার কাছে এসেছি? শ্রেণি কক্ষে ফিরলেও না খেয়ে মরবো রাস্তায় থাকলেও মরবো। ৫দিন আমরণ অনশন অতিবাহিত হলেও আমাদের কোন আশ্বাস কেউ দিচ্ছেন না।

আন্দোলনে অংশ নেওয়া বেশির ভাগ শিক্ষকেরই আক্ষেপ, আমরা কার দিকে তাকিয়ে ৫দিন আমরণ অনশনে আছি। সরকার দেখুক, যে শিক্ষকরা জাতি গঠন করে, আজ সেই শিক্ষকরাই অভুক্ত আমরণ অনশনে ৫দিন প্রেসক্লাবে রাত কাটাচ্ছে। কবে দয়া হবে প্রধানমন্ত্রীর? কবে আসবে সুসংবাদ?

উল্লেখ্য যে, সারাদেশে ইবতেদায়ী স্বতন্ত্র মাদ্রাসার সংখ্যা প্রায় ১৮১৯৪টি। ১ জানুয়ারি থেকে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত অবস্থান ধর্মঘট পালন করছে তারা। ৯ জানুয়ারি থেকে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরণ অনশন পালন করছে ইবতেদায়ী স্বতন্ত্র মাদ্রাসার শিক্ষকরা।

বিডিবিএস