মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি নতুন করে সাজানো হবে: প্রতিশ্রুতি বাইডেনের


ঢাকা | Published: 2021-01-24 17:07:38 BdST | Updated: 2024-05-02 13:25:17 BdST


যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি নতুন করে সাজানো হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে আপাতত মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে কোনো নাটকীয় পরিবর্তন আসছে না। বাইডেন প্রশাসনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অন্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যমে এমনটাই বলা হচ্ছে।

সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চার বছরের নীতি থেকে বেরিয়ে আসবেন বলে বাইডেন তাঁর নির্বাচনী প্রচারে বারবার বলেছেন। শপথ গ্রহণের পর দেওয়া বক্তৃতাতেও বাইডেন বলেছেন, শক্তি নয়, বরং উদাহরণ প্রদর্শন করে বিশ্বে আমেরিকাকে নেতৃত্ব দেবে তাঁর প্রশাসন।

কিন্তু বাইডেন প্রশাসনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অন্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এখন বলছে, ট্রাম্পের সময়ের পররাষ্ট্রনীতি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দ্রুত সরে আসার সম্ভাবনা নেই।

ক্ষমতাগ্রহণের তিন দিনের মধ্যেই নতুন প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কথাবার্তায় এমন পরিস্থিতি স্পষ্ট হয়ে হয়ে উঠেছে। ভেনেজুয়েলা থেকে ইউক্রেন, ইসরায়েলের থেকে চীনের ব্যাপারে ট্রাম্প প্রশাসনের গৃহীত নীতি থেকে যুক্তরাষ্ট্র এখনই সরে আসছে না।

বিশেষ করে নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেনের সিনেট শুনানিতে বাইডেন প্রশাসনের পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে অনেক কিছুই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

ব্লিংকেন বলেছেন, ভেনেজুয়েলার সমাজতান্ত্রিক শাসক নিকোলা মাদুরোর ব্যাপারে ট্রাম্প প্রশাসনের গৃহীত দৃষ্টিভঙ্গির কোনো পরিবর্তন হবে না। মাদুরো সরকারের ওপর মার্কিন অবরোধ আরও কঠোরভাবে বলবৎ করা হবে।

অ্যান্থনি ব্লিংকেন বলেছেন, বাইডেন প্রশাসন রাশিয়াকে মোকাবিলা করার জন্য ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ করে যাবে।

সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২০১৭ সালে ট্যাংকবিধ্বংসী অস্ত্র ইউক্রেনের কাছে বিক্রির অনুমোদন দেন। এর আগে ওবামা প্রশাসন এমন প্রস্তাব বাতিল করেছিল।

নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বাইডেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে জার্মানি ও রাশিয়ার মধ্যে পাইপলাইন নির্মাণকাজের বিরোধিতা করা হবে।

মার্কিন প্রশাসন মনে করে, এমন পাইপলাইন স্থাপিত হলে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের জন্য পুরো ইউরোপ রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠবে।

বাইডেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে দ্রুত কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।

জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া স্বীকৃতি থেকে বাইডেন প্রশাসন সরে আসছে না। ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রথমবারের মতো এমন স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। আর জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থাপন করা হয়।

ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘ অবস্থান থেকে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সরে আসেন। মধ্যপ্রাচ্যনীতিতে ট্রাম্প প্রশাসনের পদক্ষেপ ওই অঞ্চলে সহিংসতা আরও বাড়িয়ে দেবে বলে আশঙ্কা করা হয়। বাইডেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো পরিবর্তন আনার প্রতিশ্রুতি বা উদ্যোগ নেই বলে জানা যাচ্ছে।

চীনের উইঘুর ও অন্যান্য অঞ্চলে মুসলমানদের প্রতি দমন-পীড়ন নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের গৃহীত সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল বলে উল্লেখ করেছেন নতুন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেন। চীনের প্রতি বাইডেন প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গিতে কিছু পরিবর্তন এলেও মূল অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হবে না বলেই ব্লিংকেন বলেছেন।

বাইডেন নির্বাচনী প্রচারের সময় বলেছিলেন, ইরানের সঙ্গে পরমাণু আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র আবার ফিরে যাবে। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি এখন বলছেন, ইরানের সঙ্গে এমন সমঝোতায় যেতে হলে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হবে।

দৃশ্যমান পরিবর্তনের মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্ত পাল্টে যুক্তরাষ্ট্রের প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে আবার যোগদানের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে আমেরিকার সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন ট্রাম্প। ক্ষমতায় এসেই প্রেসিডেন্ট বাইডেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় পুনরায় যোগদানের নির্দেশ জারি করেছেন।

মুসলমান দেশগুলো থেকে আমেরিকায় প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন ট্রাম্প। ক্ষমতাগ্রহণের প্রথম দিনই নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে ট্রাম্পের এ-সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা বাতিল করেছেন বাইডেন।

এগুলো ছাড়া এখন পর্যন্ত মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হলো সৌদি আরবের নেতৃত্বে ইয়েমেনের সঙ্গে যুদ্ধকে সমর্থন জানানো।

যদিও বাইডেন পরিবর্তনের কথা বলছেন, কিন্তু বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় তাঁর প্রশাসনের পক্ষে ট্রাম্পের গৃহীত বৈদেশিকনীতি থেকে একদম ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বাইডেন প্রশাসনের সময় আমেরিকার স্বার্থ রক্ষা করে বৈদেশিক নীতিতে ঠিক কতটা পরিবর্তন আসবে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত নন।

আমেরিকান ইউনিভার্সিটির বৈদেশিক নীতিবিষয়ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক জর্ডান টামা বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের গৃহীত প্রতিটি বৈদেশিক নীতি ভুল ছিল, এমনটা বলা যাবে না। ফলে, বাইডেন প্রশাসনের খুব দ্রুত বিদ্যমান মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি থেকে একদম ঘুরে দাঁড়ানোর কোনো তাড়না নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন।