সেটেল্ড ম্যারিজ ভার্সেস লাভ ম্যারিজ


টাইমস অনলাইনঃ | Published: 2018-12-21 19:56:04 BdST | Updated: 2024-06-26 12:50:00 BdST

বেল্লাল হোসাইন: সাধারণত পরিবারের প্রতি একান্ত বাধ্যগত ও যারা সমালোচনা থেকে বাচঁতে চায় তারা প্রেম করে না। প্রেম করে বিপ্লবী,উদ্দ্যমী আর উৎসাহীরা। প্রেমহীন থাকে অনন্যসাধারণ ব্যাক্তিত্ত্ববানেরা। নিজের ইচ্ছা-স্বপ্ন-সাধনা অন্য কারো কাছে স্বমর্পণ করা সহজ কাজ না। নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকা কঠিন সাধনা।
প্রেমহীন যুবক যুবতীদের ব্যক্তিগত সুখের চেয়ে পরিবারের সামষ্টিক সুখকে গুরুত্ব দিতে দেখা যায়। আবার সবার মতকে গুরুত্ব দিতে যেয়ে অনেকের বিয়েই হয় না!
কিছু প্রেমিক প্রেমিকার মূল দর্শন," প্রেম করবো যাকে তাকে বিয়ে করবো বাবার মতে!'
বাবা যখন পাত্র/পাত্রী এনে দেয় না,প্রেমিক প্রেমিকারা তখন হারানো প্রেম খুঁজেও পায় না।
প্রেম হয় আবেগে, বিয়ে হয় বিবেকে। তাইতো সব প্রেমের বিয়ে হয় না!
কেউ ক্যারিয়ার গড়তে প্রেম ভাংগে,কেউ ভাংগা প্রেম জোড়া দিতে ক্যারিয়ার গড়ে!
কিন্তু দিনশেষে সেটেল্ড ম্যারিজটাই কঠিন হয়ে রয় সেই পরিবার অন্তঃপ্রাণ ছেলে মেয়েটির ক্ষেত্রে। কিন্তু কেন এমন হয়?

বিয়ে করতে মূলত দেরি হয় দুই শ্রেণীর লোকের; যারা নিজেদের অবস্থানের ব্যাপারে শতভাগ আত্মবিশ্বাসী এবং তারা সেই মানের পার্টনার খুঁজতেই থাকে, অন্যদল হলো যারা চূড়ান্ত কনফিউজড! বিয়ে যেহেতু একবারই করার ইচ্ছা তো দেখে শুনেই কায়দা মত করতে হবে। তাদের ধ্যানধারণা প্রতিনিয়ত পাল্টাতে থাকে। আজ ডাক্তার ভালো লাগে তো কাল ইঞ্জিনিয়ার। কখনও বা সুপারগার্ল ফ্রম চায়না আবার কখনো হিজাবি হাবিবি! ক্রমাগত সিদ্ধান্তহীনতায় আর হয়ে ওঠে না।
দেশে প্রচলিত বিয়ের বয়স ধরা হয় চাকুরী পাবার পর। যেহেতু চাকুরী পেতে ২৫-২৮ বছর অনেকের লেগে যায় এর পর আসে ঘর গুছানোর চিন্তা,স্ত্রীর জন্য গয়না জোগাড়, স্বামীর জন্য নকশী কাঁথা সেলাই ইত্যাদির ঝামেলা।
পাত্র পাত্রী যেহেতু কাঁচা বাজারে যেয়ে বসে থাকে না,তাই প্রতি দিন দেখাও যায় না। বিয়ের জন্য সিরিয়াস হওয়ার পর মাসে একটা পাত্র পাত্রী দেখলেও ৩৬ জন দেখতে তিন বছর কেটে যায়! ততদিনে বয়স একত্রিশ! অনেকের পঞ্চাশের বেশি পাত্রী দেখার রেকর্ড আমার জানা আছে।
এদেশে বিয়ের বাজারে ত্রিশ কিন্তু মার্জিনাল এইজ। এর পরে ক্রমহ্রাসমান হারে পাত্র পাত্রীর দাম কমতে থাকে!
সেটেল্ড ম্যারিজে মহাজন বেশি থাকে। পাত্র পাত্রীর পছন্দ হইছে তো দুলাভাই মানা করে দিলো,প্রভাবশালী খালু বলে এর চেয়ে ভালো এনে দেবো। বাল্যকালের শিক্ষক বলে তোর বিয়ে আমি দেবো। এভাবেই বেচারা বেচারিদের বয়স হুরহুর করে বেড়ে যায়,দিনে দিনে চিন্তার ভাজে নিজের মাঝেই কুকড়ে যায়।
প্রেমের বিয়েতে পাত্র পাত্রী মূখ্য হয়। এলাকা,পরিচয়, সম্পদ গৌণ হয়ে যায়।
আর সেটেল্ড ম্যারিজে পাত্র পাত্রী অদৃশ্য হয়ে আশপাশ জরুরী হয়। তাইতো ক্যারিয়ার সেটেল্ড হয়ে গেলেও জীবন সেটেল্ড হয় না।
সেজন্য সেটেল্ড ম্যারিজে অন্তরিক ঘটক বেটে খাওয়ালেও ম্যাচিং রেশিও কম হয়। যদিও সব লাভ ম্যারেজ সেটেল্ড করেই করতে হয়, তবে লাভ ম্যারিজে পাত্র/পাত্রীর আন্তরিক ভূমিকা মূখ্য হয়।

তাহলে সমাধান কী?
লোকে অন্ধ প্রেমে চোখ বন্ধ করে বিয়ে করে নেয়। সব ঘরে যে আলো জ্বলে এমনও নয়। তবে সেটেল্ড ম্যারিজে এতো ওয়ারেন্টি গ্যারান্টি খুজলে তো পাওয়া দুষ্কর। সেটেল্ড ম্যারিজওয়ালাদেরকে আমৃত্যু ত্যাগী মানসিকতার হতে হয়।
বাহ্যিকতার দিকে যতটুকু নজর দিবেন তার অর্ধেক হলেও সুপ্ত গুনের দিকে দিতে হবে। দাম্পত্য সুখকে যারা গুরুত্ব না দিবেন,তাদের জন্য বিয়ের পর ৯-৫ অফিস আওয়ারের চেয়ে সকাল ৫ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত অফিস ভালো লাগবে। তা না হলে বাসায় একটা রুম বেশি রাখতে হবে রেসলিং আর বক্সিং খেলার জন্য।

লেখকঃ শিক্ষানবিস আইনজীবী ও সমাজকর্মী
প্রাক্তন শিক্ষার্থীঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
ইমেইলঃ [email protected]