ফ্যাসিবাদ: যার দোসরদের কবল থেকে পাগলও বাদ যায় না


Mymensingh | Published: 2024-09-20 21:29:49 BdST | Updated: 2024-09-21 07:12:35 BdST

ফ্যাসিবাদ তার পতন ঘটলেও নানা রূপে, নানা নামে বারবার ফিরে আসছে। শান্তিপ্রিয় ও নিরীহ মানুষের ওপর প্রতিশোধ নিতে থাবা বসাচ্ছে। আজ যখন লিখছি, তখন আমার হাত কাঁপছে শোক ও ক্ষোভে। হাত কাঁপছে বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার কাঁঠালতলীর পিতা-মাতাহীন পাগল তোফাজ্জলের জন্য। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে তোফাজ্জলকে চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের নেতৃত্ব দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল ছাত্রলীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক জালাল আহমেদ। একই দিনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে একই কায়দায় পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে একই দিনে, একই কায়দায় 'মব জাস্টিস' এর মাধ্যমে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়া নিছক বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটা ফ্যাসিবাদের আচরণগত বৈশিষ্ট্য। এসব ঘটনায় শিক্ষার্থীদের জড়িত থাকার বিষয়টি ভয়ংকর এবং আরও উদ্বেগজনক হলো, উভয় হত্যাকাণ্ডে সমন্বয়কের সংশ্লিষ্টতার কথা শোনা যাচ্ছে। যদিও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আহসান লাবিবকে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

এসব ঘটনা ফ্যাসিবাদীদের দীর্ঘদিনের অভ্যাসেরই ধারাবাহিকতা। নিজেদের কৃত অপকর্ম অন্যের নামে চালিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার ফ্যাসিবাদের পুরনো কৌশল। ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে গোপালগঞ্জে ফ্যাসিস্ট লীগের নেতা-কর্মীরা জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে কেন্দ্রীয় ক্রীড়া সম্পাদক শওকত আলীকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় আরও অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাংবাদিকরাও রয়েছেন। শান্তিকামী মানুষ হিসেবে আমি এসব হামলা ও হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই।

ফ্যাসিবাদের শিকার এ মানুষগুলো এদেশের কোটি কোটি নিরীহ মানুষের প্রতীক, আর এর বিপরীতে জালাল-লাবিব ও ফ্যাসিস্ট লীগের নেতা-কর্মীরা হাসিনার ফ্যাসিবাদী উত্তরসূরী। ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সাড়ে চৌদ্দ বছরের শাসনে এই ফ্যাসিবাদ সমাজে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে। তাদের অত্যাচারে ব্যক্তি, সমাজ এবং রাষ্ট্র ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে। ৫ আগস্ট ২০২৪-এ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের মাস্টারমাইন্ডের পতন হলেও, তার দোসররা থেমে নেই। তারা এখন প্রতিশোধের সুযোগ খুঁজছে।

অতীত ইতিহাস বলে, ফ্যাসিবাদীরা এত সহজে থামে না। ফ্যাসিস্ট খুনী হাসিনার দোসররা নানান রূপে ফিরে আসছে, নিরীহ মানুষের ওপর প্রতিশোধের থাবা বসাচ্ছে। এর সর্বশেষ উদাহরণ তোফাজ্জলের নৃশংস হত্যা। লোকমুখে শোনা যাচ্ছে যে জালাল এখন ফজলুল হক হলের সমন্বয়ক! ফ্যাসিস্টদের নাম বদলায়, কিন্তু চরিত্র বদলায় না।

তাই, ফ্যাসিস্টদের কবল থেকে দেশ ও দেশের মানুষকে বাঁচাতে হলে সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সফল করতে হলে, ফ্যাসিবাদের দোসররা যেন কোনোভাবে ফিরে এসে প্রতিশোধ না নিতে পারে, সে বিষয়ে নজরদারি চালাতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পিটিয়ে মানুষ হত্যার মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডসহ সব ধরনের অপরাধের সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। কোনো শিক্ষার্থীকে দায়িত্ব দেওয়ার আগে তার অতীত কর্মকাণ্ড ও চরিত্র সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজ নেওয়ার জন্য বিনীত আহ্বান জানাচ্ছি।

কৃষিবিদ মো. আতিকুর রহমান
শিক্ষার্থী, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগ
আহ্বায়ক, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল