প্রমাণ ছাড়াই বলছেন ছাত্রলীগনেতা তাকে বিয়ে করেছেন


Dhaka University | Published: 2024-06-02 08:54:31 BdST | Updated: 2024-09-21 05:03:24 BdST

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সহ-সভাপতির কাছে বিয়ের সামাজিক স্বীকৃতি চাওয়ায় সংগঠনের সাবেক এক নেত্রী মারধরের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। তিনি এ ঘটনায় বিচার চেয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে অভিযোগ করেছেন। এছাড়া থানায় সাধারণ ডায়েরিও করেছেন।

ছাত্রলীগের সেই নেতা অভিযোগ অস্বীকার করে ওই তরুণীর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ করেছেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও অ্যাপের সাহায্যে তাকে ফাঁসানো হতে পারে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। তরুণীর বিরুদ্ধে থানায় তিনটি জিডি করেছেন তিনি।

ওই ছাত্রলীগ নেতার নাম মোহাম্মদ ফুয়াদ হাসান শাহাদাত। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এই সহসভাপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র ছিলেন। ওই তরুণী ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের সবশেষ আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন।

ছাত্রলীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কাছে তরুণীর অভিযোগ
ফুয়াদ হাসান শাহাদাতের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর অভিযোগ করেন ওই তরুণী। অভিযোগে তিনি লিখেন, ‘ফুয়াদ হাসান শাহাদাতের সঙ্গে আমার দীর্ঘ ১০ বছরের সম্পর্কে ঘটে যাওয়া অন্যায় নিয়ে আমি গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে অবহিত করি। তিনি আপনাদের (ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক) মীমাংসা করার দায়িত্ব দেওয়ার পর আমি শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি গত ৫ এপ্রিল মীমাংসা করতে বসার সময় নির্ধারণ করেন।

কিন্তু ৩ এপ্রিল শাহাদাত আমাকে অনেক অনুরোধ করে তার বাসায় ডেকে নেন পরিবারের সঙ্গে কথা বলে সমাধান করার জন্য। কিন্তু তিনি তা না করে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাতাড়ি লাথি মারেন এবং মারাত্মকভাবে জখম করেন। উপায় না পেয়ে আমি ৯৯৯-এ কল করি এবং পুলিশ এসে আমাকে উদ্ধার করে। ঘটনার সময় আমি শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান ভাইকেও অবহিত করি। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেই। এ ঘটনায় আমি মানসিক ও শারীরিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি। আমি সামাজিকভাবে স্বীকৃতি চাওয়ার পর থেকেই শাহাদাত আমার পরিবারের সবার বিরুদ্ধে মামলা এবং বিভিন্নভাবে ক্ষতি করার হুমকি দেন। এমনকি আমাকের প্রাণনাশের হুমকি দেন। তার এসব কার্যকলাপে আমি আতঙ্কিত।’

এ অভিযোগে তরুণী উল্লেখ করেন, ২০১৬ সালে মুসলিম রীতি অনুসারে আমাদের বিয়ে হয় এবং বিয়ের সব ডকুমেন্ট শাহাদাত নিজের কাছে আটকে রাখেন। পরবর্তীসময়ে বিষয়টি অস্বীকার করেন শাহাদাত।

শাহাদাতের বিরুদ্ধে থানায় জিডি
গত ২৬ মে রাজধানীর হাজারীবাগ থানায় জিডি করেন ওই তরুণী। জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, ফুয়াদ হাসান শাহাদাতের সঙ্গে ২০১৬ সালে তার বিয়ে হয়। তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহের পর গত ১৮ মে রাত ৯টা ৩৬ মিনিটে হোয়াটসঅ্যাপে কল করে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেন। একই সঙ্গে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

এ বিষয়ে জিডির তদন্ত কর্মকর্তা হাজারীবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. শাহাব উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তাধীন বিষয়ে কথা বলতে পারবো না। বিষয়টি যেহেতু সাইবার রিলেটেড সেহেতু সাইবার ইউনিটের সহায়তা নিয়ে কাজ করবো।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে সাবেক এ ছাত্রলীগ নেত্রীর সঙ্গে কথা বলেন জাগো নিউজের এ প্রতিবেদক। তিনি বলেন, ‘তার (শাহাদাতের) সঙ্গে আমার বিয়ে হয়েছে ২০১৬ সালে কক্সবাজারে। আমরা দীর্ঘদিন ঢাকায় একই বাসায় ছিলাম। এখন শাহাদাত এসব অস্বীকার করছেন।’

বিয়ের কাবিননামার বিষয়ে জানতে চাইলে তরুণী বলেন, ‘কাবিননামা আমার কাছে নেই। শাহাদাত আটকে রেখেছেন। যে কাজী বিয়ে পড়িয়েছেন তাকেও চিনি না। যারা সাক্ষী ছিলেন তাদেরকেও চিনি না। শাহাদাত এখন আমাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন। আমি সামাজিক মর্যাদা (বিয়ের স্বীকৃতি) চাই।’

তিনি অভিযোগ করেন, গত ৩ এপ্রিল শাহাদাতের বাসায় গেলে তার ওপর হামলা চালানো হয়। এসময় তিনি ৯৯৯-এ কল দিয়ে পুলিশের সাহায্য চান।

তবে শাহাদাতের অভিযোগ, ওই ছাত্রী তার বাসায় ঢুকে ভাঙচুর চালান। এসময় তারা ৯৯৯-এ কল করে পুলিশের সাহায্য চান।

জিডিতে যেসব অভিযোগ করেন শাহাদাত
গত বছরের ৩ নভেম্বর ছাত্রলীগ নেতা ফুয়াদ হাসান শাহাদাত হাজারীবাগ থানায় একটি জিডি করেন। জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, ইডেন কলেজের ওই ছাত্রীর সঙ্গে ফেসবুকের মাধ্যমে তার পরিচয়। এরপর বন্ধুত্বের সুবাদে বিভিন্ন জায়গায় একসঙ্গে ঘুরতে যান তারা। সে সময় কৌশলে তার ছবি তোলেন ইডেনের ওই ছাত্রী। পরবর্তীসময়ে তার কাছে বাসাভাড়া ও খরচের টাকা দাবি করেন ও দিতে বাধ্য করেন। টাকা না দিলে তার কাছে থাকা ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন।

গত ৪ এপ্রিল পল্লবী থানায় আরও একটি জিডি করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগের সাবেক এ সাধারণ সম্পাদক। এবারের জিডিতে শাহাদাত উল্লেখ করেন, ‘ইডেনের ওই ছাত্রী নিজেকে আমার স্ত্রী দাবি করে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুদের থেকে টাকা নেন। যদিও তার সঙ্গে আমার কোনো বৈবাহিক সম্পর্ক নেই।’

এআই দিয়ে ফাঁসানোর আশঙ্কা
গত ৭ এপ্রিল রাজধানীর শাহবাগ থানায় আরেকটি জিডি করেন শাহাদাত। এতে তিনি আশঙ্কা করেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অ্যাপের সাহায্যে ওই ছাত্রী তাকে ফাঁসাতে পারেন। জিডিতে শাহাদাত উল্লেখ করেন, ‘গত ৩ এপ্রিল ওই তরুণী হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে কল দিয়ে আমাকে বলেন তার কথা যদি না শুনি এবং কথামতো যদি কাজ না করি, তাহলে তিনি তার কণ্ঠ নকল করে এআই ও অ্যাপের মাধ্যমে অপ্রীতিকর মন্তব্যের ছোট ছোট অডিও ক্লিপ বানিয়ে সবার কাছে পাঠাবেন। কণ্ঠ ক্লোন করে এসব ক্লিপ বানানো হবে গুরুত্বপূর্ণ মানুষদের নিয়ে, যাতে খারাপ ও অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করা হবে।’

ছাত্রলীগ নেতা ফুয়াদ হাসান শাহাদাত বলেন, ‘তার সঙ্গে পরিচয় ছিল। মাঝেমধ্যে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে দেখা হয়েছে। এখন অন্য কারও প্ররোচণায় তিনি আমার ক্যারিয়ার শেষ করতে চাইছেন। মান-সম্মানের ভয়ে তাকে বলেছি কিছু টাকা-পয়সা নিয়ে হলেও আমাকে যেন আর বিরক্ত না করেন। তিনি চাইছেন তার নামে যেন ঢাকায় ফ্ল্যাট কিনে দেই। এত টাকা আমি কোথায় পাবো!’

তাকে বিয়ে করার প্রশ্নই আসে না জানিয়ে ছাত্রলীগের এ নেতা বলেন, ‘সব মিথ্য বলছেন। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি তিনি বিয়ের কোনো ডকুমেন্টস দেখাতে পারবেন না। উল্টো মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে আমার সম্মান নষ্ট করছেন। আমি তার নামে মানহানির মামলা করবো।