অমর একুশে গ্রন্থমেলায় নামাজ, কী বলছেন সেই ইমাম?


ঢাবি টাইমস | Published: 2020-02-24 05:33:47 BdST | Updated: 2024-05-01 11:27:10 BdST

অমর একুশে গ্রন্থমেলায় মুসলিমদের নামাজ আদায় নিয়ে ফেসবুক জুড়ে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

বইমেলায় নামাজ আদায় নিয়ে বিস্তারিত ফেসবুকে লিখেছেন সেই সালাতের ইমাম হাবিবুর রহমান মিসবাহ।

হাবিবুর রহমান মিসবাহ বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন চরমোনাই এর সমর্থক। তিনি দেশজুড়ে আলোচিত- সমালোচিত একজন বক্তা।

ফেসবুকে দেয়া তার বিস্তারিত স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো

গত ১২ তারিখ একচক্কর গিয়েছিলাম বইমেলায়। তার আগে জীবনের প্রথমবার যখন বইমেলায় যাই, তখন নামাযের জায়গা ছিল না বললেই চলে। তার আগে আদৌ ছিল কি না জানা নেই। গত দু’বছর ধরে মোটামুটি সুন্দর ও পরিপাটি মসজিদ রেখেছেন মেলা কর্তৃপক্ষ। তবে জায়গা পর্যাপ্ত নয়। ফলে চার পাঁচ জামাতে নামায আদায় করতে হয়। ১২ তারিখ তো মাগরিবের নামায কাযা হওয়ার অবস্থা হয়েছিল। যদিও এবার নির্দিষ্ট ইমামও রেখেছেন। নিশ্চয়ই মেলা কর্তৃপক্ষ এজন্য ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।

২১ ফেব্রুয়ারি আমার নতুন বই #চেঞ্জ_ইউর_মাইন্ড’র মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান ছিল। বিকাল ৩টা নাগাদ পৌছি বইমেলায়। প্রচুর পাঠক সমাগম হয় সেদিন। স্টলের সামনে যেতেই আগ্রহী পাঠকদের বায়না— অটোগ্রাফ! কেউ কুড়িগ্রাম, কেউ রংপুর, মোমেনশাহী, কুমিল্লা আবার কেউ চট্টগ্রাম থেকে এসেছেন শুধু বইয়ের জন্য! দশ মিনিট থাকার পরই হৈচৈ! কী হয়েছে? একাডেমিতে অলরেডি অভিযোগ পড়েছে। রাস্তাঘাট বন্ধ #চেঞ্জ_ইউর_মাইন্ড’র পাঠকভিড়ে। পাশের স্টলওয়ালারাও অনুনোধ জানালেন যেন লেখকমঞ্চের দিকে গিয়ে অটোগ্রাফ দিই, কারণ #চেঞ্জ_ইউর_মাইন্ড’র ভিড়ে তাদের স্টলও ব্লক!

বাবুই প্রকাশনীর মালিক ও সেলাররাও বললেন অটোগ্রাফের জন্য অন্য জায়গায় গেলে ভালো হয়। ৩২২-৩২৩ নং স্টল ছেড়ে লেখকমঞ্চ চত্বরে যাই। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পাঠকভিড় বাড়তে থাকে। আসরের সময় হলে দ্রুত নামাযে রওয়ানা হই। লেখকমঞ্চ থেকে নামাযের জায়গা খানিকটা দূরে। মহান মাতৃভাষা দিবস ও শুক্রবার হওয়ায় লোকজনের এত ভিড় ছিল যা কল্পনাও করা যায়নি। যেতে যেতে তিন জামাত শেষ। সিরিয়াল আছে আরও দুই জামাত! ওয়াক্ত যায় যায় অবস্থা। একেবারে শেষবেলায় আসর পড়ি।

মাগরিবের সময় আবার মসজিদের দিকে রওয়ানা হই। কয়েকজন বললেন এখানেই পড়ে নিই। আমি বললাম যেহেতু নামাযের নির্দিষ্ট জায়গা আছে সেহেতু ওখানে যাওয়াটাই উত্তম। আবার ভাবলাম— আসর তো কাযা হয়েও হয়নি, মাগরিব নিশ্চিত কাযা হবে কারণ ওয়াক্ত ছোট এবং মসজিদ আমাদের থেকে তুলনামূলক দূরে। তা ছাড়াও চত্বরে তখন গ্রুপ গ্রুপ বসে গীটার বাজিয়ে গান করছিল। তাহলে আমরা নামায পড়তে তো অসুবিধা নাই! ওদিকে লেখকমঞ্চ থেকেও বিশাল সাউন্ডবক্সে হাইভলিউমে গান বেজেছে সন্ধ্যার আগ থেকেই।

আমরা তো এ দেশে ভাড়াটিয়া নই, তাই ময়দানেই নামাযে দাঁড়িয়ে যাই। তার আগে অবশ্য মুফতী মুহিব্বুল্লাহ ভাইর ইমামতি ছোট একটি জামাত হয়েছে। মেলা থেকে বের হয়ে অনলাইনে ঢুকতেই দেখি নামাযের দৃশ্য ভাইরাল। ছবিগুলো সংরক্ষণ করি আমিও। আমি কখনও কাউকে দিয়ে ছবি তোলাই না। অনলাইন থেকেই সংগ্রহ করি। কিন্তু সেটা নিয়ে স্বজাতির বিদ্বেষ কষ্ট দিয়েছে আমাকে।
২১ ফেব্রুয়ারি থেকেই আমার বই #চেঞ্জ_ইউর_মাইন্ড, নামায ও বইমেলায় হুজুরদের ভিড় নিয়ে বামপাড়ায় হৈচৈ লক্ষ্য করেছি। তাদের মায়কান্না দেখে মনে হয়েছে তারাই দেশের মালিক বাকিরা ভাড়াটিয়া! দেশে তাদের সংখ্যা কত! তারা নামাযের বিরোধিতা করে কোন অধিকারে?

#চেঞ্জ_ইউর_মাইন্ড’র পরিবেশক বাবুই প্রকাশনীর মালিক মোরশেদ ভাইকে তিনবার ডেকেছে মেলা কর্তৃপক্ষ— কেন তার স্টলের সামনে এত ভিড়। ভিড় না কমালে স্টল বন্ধ করে দেবে! এটা কি স্ববিরোধী কাজ নয়? তারা মেলার আয়োজন করেছেন কেন? লেখক স্টলে যাবেন, পাঠক ভিড় করবে, অটোগ্রাফ নেবে এটাই তো স্বাভাবিক নাকি? তাহলে পরিবেশককে সতর্ক করা হলো কেন? আমরা হুজুর বলে! একাডেমি কর্তৃপক্ষের এমন আচরণ একজন লেখককে অপমানের শামিল। ৯৫% মুসলমানের দেশে ইসলামকে বাদ দিয়ে কোনোকিছু করা যায় না, যায়নি, যাবেও না।

একুশে বইমেলা ইসলামিক লেখক দিয়েই বেঁচে আছে। তাদেরকে সম্মান করুন, কদর করুন।

 

ছবি : ইরফানুল্লাহ রনি