ঢাবির বহিস্কৃত শিক্ষক মোর্শেদ হাসানকে গ্রেফতারের দাবি


Dhaka | Published: 2020-09-17 22:04:40 BdST | Updated: 2024-05-04 12:32:42 BdST

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি, বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে কটূক্তি করার অপরাধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের বহিষ্কৃত শিক্ষক ড: মোর্শেদ হাসান খানকে দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।

আজ ১৭ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আল মামুনের সঞ্চালনায় উক্ত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল।

আরোও বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক ইয়াসির আরাফাত তূর্য, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি কামরুজ্জামান রাজু, রোমান হোসেন, মাকসুদ হাওলাদার, হুমায়ন আহমেদ, বাসির ভূইয়া, চকবাজার থানার সভাপতি আশরাফ হোসেন স্বাধীনসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আল মামুন বলেন, "মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ সবসময় মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর প্রশ্নে আপোষহীন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলঙ্ক ড: মোর্শেদ হাসান খান স্বাধীনতা বিরোধীদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্যই মুক্তিযুদ্ধের ভুল ইতিহাস উপস্থাপন করেছিল যা ৩০ লক্ষ শহীদ ও ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ২০১৮ সালে দৈনিক নয়াদিগন্ত ও যায়যায়দিন পত্রিকার নিবন্ধে প্রকাশিত তার লেখায় সংবিধানের ৫ম, ৬ষ্ঠ, ৭ম তফসিল ও অনুচ্ছেদ ৪ক লঙ্ঘন হয়েছে। উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত ভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে কটূক্তি করার অপরাধে এই বহিস্কৃত শিক্ষক কখনোই মহান মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে পারেন না। স্বাধীনতা বিরোধী জামাত-শিবিরের এজেন্ট পাকিস্তানী দালালের কলঙ্ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বইতে পারে না। দীর্ঘদিন কালক্ষেপণ করার মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে বহাল রাখার চেষ্টা করলেও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের আন্দোলনের মুখে মোর্শেদ হাসান কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য ও ইতিহাস বিকৃতির দায়ে অভিযুক্ত এই বহিস্কৃত শিক্ষকের বিরুদ্ধে আজও পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বা সরকার কোন আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি। অপরাধের প্রমাণ পাওয়ায় এ্যাটর্নি জেনারেল বিএনপি-জামায়াতপন্থী সাদা দলের অন্যতম নেতা মার্কেটিং বিভাগের এই বহিস্কৃত শিক্ষক কে সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে চাকরিচ্যুতির সুপারিশ করলেও রহস্যজনকভাবে তা অনেক দেরীতে বাস্তবায়ন হয়েছে। দেরীতে করলেও আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, অনেক দেরীতে বহিষ্কার করলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত আইনগত কোন ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। ভয়াবহ ইতিহাস বিকৃতি ঘটিয়েও এখনো কারাগারের বাহিরে আছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক মোর্শেদ হাসান খান।"

আল মামুন আরোও বলেন, "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী কোন ষড়যন্ত্র হলে তা শক্ত হাতে প্রতিহত করবে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য ও ভয়াবহ ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে এই বহিস্কৃত শিক্ষক চরমভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। তিনি বিভিন্ন গণমাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কে অবমাননা, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি ও বঙ্গবন্ধুর শাসন আমল নিয়ে মিথ্যা, বানোয়াট ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ মনগড়া তথ্য পরিবেশন করেন। ১৯৪৭ সাল থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালীদের সকল আন্দোলনের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুক্ত ছিলেন, নেতৃত্বও দিয়েছেন। তাঁর প্রদত্ত ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণা। ১৯৭২ সালের ১০ এপ্রিলে মুজিবনগর সরকারের জারিকৃত ঘোষণাপত্রে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মের পেছনে তাঁর অবদানসমূহ বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে। একটি মহল স্বাধীনতার ঘোষণা বিষয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির প্রয়াস চালালে সুপ্রীমকোর্ট এই মর্মে সিদ্ধান্ত প্রদান করে যে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই স্বাধীনতার ঘোষক। বাংলাদেশের সংবিধানের ৫ম তফসিলে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, ৬ষ্ঠ তফসিল বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণা, ৭ম তফসিলে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র সন্নিবেশিত করা হয়েছে এবং উক্ত দলিলসমূহ সংবিধানের অংশ হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। তাছাড়া সংবিধানের ৪(ক) অনুচ্ছেদে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ড. মোর্শেদ হাসান খান তার লেখায় স্বাধীনতার ঘোষণা সম্বন্ধে যা লিখেছেন তা সুপ্রীমকোর্টের রায়ের পরিপন্থী সংবিধানের ৬ষ্ঠ তফসিলের পরিপন্থী। তিনি ১৯৭১ সনের ২৫ মার্চের পরে যে আন্দোলনের চিত্র এঁকেছেন তা সংবিধানের ৭ম অনুচ্ছেদে বর্ণিত বক্তব্যের পরিপন্থী। মোর্শেদ হাসান খানের বিতর্কিত লেখাটি সংবিধানের ৬ষ্ঠ,৭ম ও ৪ক অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীসহ দেশের সকল মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। কিন্তু স্বাধীন মত প্রকাশের নামে দেশের সংবিধান লঙ্ঘন, মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কে নিয়ে কটূক্তি করলে তা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির মানুষরা কখনোই মেনে নিবে না। বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে কেউ বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারেন না। মোর্শেদ হাসান বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আঘাত করেছেন। আমরা অবিলম্বে তার গ্রেফতার দাবি করছি। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনে যাবে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।"