কে এই আদম তমিজি হক?


টাইমস অনলাইনঃ | Published: 2018-01-11 05:57:34 BdST | Updated: 2024-12-11 01:00:22 BdST

সময় পাল্টে গেছে। নিন্দুকেরা বলেন এখন নাকি গাছের পাতাও আওয়ামী লীগার। আক্ষরিক অর্থে সেটা সত্যি না হলেও চারদিক বিবেচনায় একেবারে অমূলকও নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার যখন সাফল্যের সব মুকুট নিজের করে নিচ্ছে, তখনই চারপাশ ঝলসে উঠছে নব্য, সুবিধাবাদী আওয়ামী লীগারদের দাপটে। দলের মধ্য থেকেই যাদেরকে বলা হচ্ছে ‘কাউয়া’, বলা হচ্ছে ‘হাইব্রিড’। ঠিক তেমন একজন কি-না নিশ্চিত করে বলা না গেলেও ঢাকার রাজনীতিতে হঠাৎ আবির্ভুত এক নাম আদম তমিজি হক। সবার মুখে একই প্রশ্ন কে এই আদম?

আসন্ন ঢাকা উত্তরে মেয়র পদে নির্বাচন নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনাকল্পনা। নির্বাচনকে সামনে রেখে আলোচনায় সরগরম হয়ে উঠেছে পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকান থেকে শুরু করে শহরের অলিগলি সর্বত্র। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা দলীয় নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে ছুটছেন জনগণের কাছে। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আশায় কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা মাঠে-ঘাট চষে বেড়াচ্ছেন বিপুল উদ্দীপনায়।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে উপ-নির্বাচনে নিজেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বলে প্রচারণা করেন হক গ্রুপের স্বত্বাধিকারী আদম তমিজি হক। তবে মজার বিষয় হল, তাকে রাজধানীর অধিকাংশ মানুষই চেনেন না। এমনকি আওয়ামী লীগ থেকে এখনও মনোনয়ন পাননি তিনি। মনোনয়ন না পেয়েও তার এমন প্রচারণায় চারদিকে হাসির রোল উঠেছে। প্রশ্ন ওঠেছে কে এই আদম তমিজি হক?

খোজ নিয়ে জানা গেছে, আদম তমিজি হক দীর্ঘদীন দেশের বাইরেই ছিলেন। কিছুদিন পূর্বে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগে যোগদানের মাধ্যমে তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। এরপর থেকেই মেয়র নির্বাচনের জন্য নিজের প্রচারণার দিকে নজর দেন তিনি। এজন্য বিভিন্ন জায়গায় তার নামের পোষ্টার-ফেস্টুনে ভরে গেছে। তবে তার অনলাইন প্রচারণা সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে। মূলত সেখানেই তাকে না চেনার কারনে হাসি ও আলোচনার ঝড় ওঠেছে।

আওয়ামীলীগ থেকে এখনও চূড়ান্তভাবে কাউকে মনোনয়ন দেয়া না হলেও আদম তমিজি হক অধিকাংশ জায়গায় নিজেকে নৌকার প্রার্থী বলে প্রচারণা চালাচ্ছেন। কয়েকটি ভুঁইফোর অনলাইনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী দাবি করে সংবাদ প্রকাশের পর সেই সংবাদ বুস্ট করার মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এমনই একটি পোর্টাল সময়ট্রিবিউনে ‘আদম তমিজি হককেই আওয়ামী লীগের সবুজ সংকেত’ শিরোনামের একটি খবরে স্পষ্ট বলা হয়েছে-
অবশেষে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ তরুন ব্যবসায়ী আদম তমিজি হককে মনোনয়ন দিচ্ছে। জানা গেছে, সরকারের কয়েকজন দায়িত্বশীল মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্টজনরা ইতিমধ্যেই আদম তমিজি হককে সবুজ সংকেত দিয়েছেন। তারা তাকে নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সবুজ সংকেত পেয়ে আদম তমিজি হক তার নির্বাচনী ইশতেহার তৈরিসহ সার্বিক নির্বাচনী প্রস্তুতিও শুরু করেছেন।

এই খবরের সঙ্গে যে একটি ছবি ব্যবহার করা হয় যেখানে প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আদম তমিজিকে দেখা যাচ্ছে। এই ছবিটি পুরনো। সম্ভবত প্রধানমন্ত্রীর ত্রানতহবিলে দান করার সময় তোলা ছবি। অথচ ছবির ক্যাপশনে সেসব উল্লেখ নেই।

শুধু তাই নয়, তাঁতী লীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সহ কয়েকজন নেতা-কর্মী প্রকাশ্যে তার পক্ষে কাজ করছেন বলে জানা গেছে।

হঠাৎ করেই ডিসেম্বরে প্রথম দিকে আদম তমিজি হককে ঢাকা মহানগর উত্তর তাঁতী লীগের প্রধান উপদেষ্টা বানানো হয়। এতে করে ফুঁসে উঠেছে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। একাধিক কর্মীর দাবি এখনও দলের হাইকমাণ্ডের কোনো নির্দেশনা আসেনি। তাই আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন হিসেবে এখনই নির্দিষ্ট কোনো প্রার্থীর প্রচারণা স্পষ্টতই সংগঠনের গঠনতন্ত্র পরিপন্থী।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের এক সিনিয়র নেতা বিজনেস বাংলাদেশকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী এখনও কাউকে আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়ন দেননি। তাই নৌকার হয়ে কেউ যদি প্রচারণা চালান তা অবশ্যই দলীয় শৃঙ্খলা বিরোধী।

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দেবেন দলের নেতাকর্মীরা তার হয়েই কাজ করবেন। আদম তমিজি হক কিসের ভিত্তিতে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী সেঝে প্রচারণা চালাচ্ছেন তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন আওয়ামী লীগের ওই সিনিয়র নেতা।

এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, কয়েকদিন আগে রাজনীতিতে প্রবেশ করে মেয়র পদে একটি বড় দল থেকে মনোনয়ন পাওয়া সুখকর নয়। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, রাজনীতি এমনিতেই ব্যবসায়ীদের হাতে চলে যাচ্ছে। এখন যদি কেউ উড়ে এসে জুড়ে বসার সুযোগ পায় তাহলে তা প্রকৃত রাজনীতিবিদদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে।

যদিও মূল ধারার সংবাদমাধ্যম সূত্র বলছে আতিকুল ইসলামই পাচ্ছেন আওয়ামী লেগের টিকেট। আতিকুল ইসলাম ২০১৩-১৪ সেশনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত পরিষদের ব্যানারে রপ্তানিমুখি তৈরী পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠনের (বিজিএমইএ) সভাপতি নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি ইসলাম গার্মেন্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। প্রধামন্ত্রীর আস্থাভাজন হিসেবে আতিকের সুনাম রয়েছে। তার ক্লিন ইমেজ বলে দিচ্ছে কোনো প্রকার সিগন্যাল না পেলে এমন ব্যক্তিত্বের একজন মানুষ কেনোমতেই প্রচারণায় আসতেন না। মূল ধারার গণমাধ্যমও সে কথাই জানান দিচ্ছে।
তবে কতগুলো অনলাইন পোর্টাল আদম তমিজিকে পারলে লিখেই মেয়র বানিয়ে ছাড়ছে। প্রমাণ না মিললেও ফেসবুকে স্পন্সরড পোস্ট এর সংখ্যা বলে দিচ্ছে এসব প্রচারণার পেছনে রয়েছে কাড়ি কাড়ি টাকার লেনদেন।

সেইসব অনলাইনে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, মাত্র ৯ বছর বয়সেই আদম তমিজি হক পাড়ি জমান লন্ডনে। সেখানেই তিনি তার লেখাপড়া শেষ করেন। দীর্ঘ সময় প্রবাসে কাটানোর পর দেশে ফিরে বাবার কাছ থেকে বুঝে নেন হক গ্রুপের দায়িত্ব। হক গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে প্রতিষ্ঠানটিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন নিজের মতো করে। নিজেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক বলে জানাচ্ছেন আদম। বিভিন্ন সামাজিক এবং উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে বরাবরাই অবদান রেখে চলেছেন। দেশে বন্যার্তদের সহায়তায় এগিয়ে গেছেন। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ভাণ্ডারে অবদান রেখেছেন নিজেদের সাধ্যমত। আবার সাম্প্রতিক সৃষ্ট রোহিঙ্গা সমস্যায়ও দেখা গেছে তার উদার অংশগ্রহণ। নিজের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ত্রাণ নিয়ে এগিয়ে গেছেন দুঃস্থ রোহিঙ্গাদের সেবায়।

এই বর্ণণা যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে ঢাকা সিটি নির্বাচনী প্রচারণায় ভুল পথে ভুল মানুষদের সঙ্গে মিশছেন আদম তমিজি হক। কারন আশে-পাশের মানুষদের ভুল নির্দেশনা একজন ক্লিন ইমেজধারী পরীক্ষিত সৈনিককেও বিপদে ফেলে দিতে পারে। সে তুলনায় মানুষ হিসেবে যেমনই হোন না কেন, রাজনীতিতে আদম তমিজি হককে একেবারে নতুনই বলা যায়। শুরুতেই যদি অঙ্কে ভুল করে বসেন তাহলে উত্তর না মেলার সম্ভাবনাই জানাচ্ছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

তবে শেষ পর্যন্ত কে মনোনয়ন পাচ্ছেন আর কে নির্বাচিত হবেন নগরপিতা সেটি জানতে হলে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে আরো কিছুদিন।

বিডিবিএস