বলাৎকারের বিরুদ্ধে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের নিয়ে মানববন্ধন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের


Dhaka | Published: 2020-12-15 23:08:45 BdST | Updated: 2024-05-04 12:18:10 BdST

মাদ্রাসা শিক্ষার্থী বলাৎকারের শাস্তি মৃত্যুদণ্ডসহ সাত দফা দাবিতে মাঠে নেমেছে আলেম-ওলেমা ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা।

আজ ১৫ ডিসেম্বর মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ আয়োজিত এক মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে মাদ্রাসার কোমলমতি শিক্ষার্থী বলাৎকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়।

বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো: আল মামুনের সঞ্চালনায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। আরোও বক্তব্য রাখেন শামসুল উলুম দাউদিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার মোহতামিম ক্বারী হাফেজ মাওলানা আব্দুল আহাদ, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ঢাবি শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদ ও ভাস্কর শিল্পী রাশাসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

প্রতিবাদ সমাবেশ ক্বারী হাফেজ মাওলানা আব্দুল আহাদ বলেন, "বলাৎকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে আজ আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়েছি। বলাৎকার ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম। বলাৎকারকারী ও এদের সমর্থনদাতারা ইসলামের শত্রু। ধর্ষণের ন্যায় বলাৎকারের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করার জন্য সরকারের নিকট আমরা আলেম সমাজ দাবি জানাচ্ছি।"

আল মামুন বলেন, "ইসলামের প্রকৃত আদর্শ চর্চাকারী আলেম-ওলামাদের কে আমরা সবসময় সম্মান ও শ্রদ্ধা করি। কিন্তু ধর্মীয় লেবাসধারী কতিপয় ভণ্ড আলেম যারা মাদ্রাসার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বলৎকার করে যাচ্ছে এবং বলৎকারের সমর্থন দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে সবসময় প্রতিবাদ করে আসছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। আমরা মনে করি, বলাৎকার কারীরা প্রকৃতপক্ষে এজিদের বংশধর। এরা ইসলামের শত্রু। এসব ধর্ম ব্যবসায়ীরা পবিত্র মসজিদ ও মাদ্রাসাগুলোকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এরা দেশের সংবিধান ও আইন মানে না। ইবাদতের জন্য পবিত্র মসজিদ। অথচ সেই মসজিদেও এরা রাজনীতি করার চেষ্টা করছে যা সম্পূর্ণ ইসলাম বিরোধী। বাইতুল মোকাররম মসজিদসহ দেশের সকল মসজিদে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা বন্ধ করতে হবে।"

আমিনুল ইসলাম বুলবুল আরোও বলেন, "আমরা হেফাজতে ইসলামকে বলতে চাই, বলৎকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে প্রমাণ করুন যে, আপনারা সত্যিকার অর্থে বলৎকারের সঙ্গে জড়িত নন বা সমর্থন করেন না। কেউ অপরাধ করলে দেশের প্রচলিত আইনে তার বিচার হবে। হেফাজতে ইসলাম এই ইসলাম বিরোধী নৃশংস হত্যাকাণ্ড নিয়ে আজও পর্যন্ত কোন বক্তব্য দেয়নি বা প্রতিবাদ করেনি। হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম-মহাসচিব মামুনুল হক কর্তৃক বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে উগ্র ভাষায় কথা বলা, চেয়ার থেকে লাফ দিয়ে উপরে ওঠা, দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তি যেমন- একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরকে প্রকাশ্য মুরগী চোরা বলা, সুপ্রীম কোর্টের সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে জুতা পেটা করার হুমকি, অধ্যাপক জাফর ইকবাল ও অধ্যাপক মুনতাসির মামুনকে হত্যার হুমকি, গণভবন, বঙ্গভবন ও সংসদ ভবন উড়িয়ে দেয়ার হুমকি ও রক্ত গঙ্গায় ভাসিয়ে দেয়ার হুমকি ইত্যাদি প্রমাণ করে ধর্ম ব্যবসায়ী মামুনুল হক কখনই ইসলামের আদর্শ ধারণ করেন না।"

তিনি আরো বলেন, "প্রত্যেকটি মুসলমানের উচিত মামুনুল হক কর্তৃক নবীজীর অবমাননার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার পাশাপাশি ধর্ম ব্যবসায়ী ও ইসলামের শত্রু মামুনুল হককে সামাজিকভাবে বয়কট করা। মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অপরাধে মামুনুল হককে অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে। এছাড়াও কিছুদিন আগে মৌলবাদী অপশক্তি মামুনুল হক ও ফয়জুল করিম কর্তৃক সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভেঙ্গে বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে। দেশের সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী এহেন বক্তব্যের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। জাতির পিতার ভাস্কর্য অপসারণের দাবি যারা তুলেছে, সেই মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত পদক্ষেপ না নিলে আমরা দেশ ও জাতির ‘সমূহ বিপর্যয়ের’ আশঙ্কা প্রকাশ করছি।"

বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সাত দফা দাবি:

১। ধর্ষণের ন্যায় বলাৎকারের অপরাধে অভিযুক্ত ও বলৎকারের সমর্থনদাতাদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করতে হবে।

২। মহানবী (সা:) কে অবমাননাকারী ও বলৎকারের সমর্থনদাতা মামুনুল হক গংদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

৩। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার লক্ষ্যে বাংলাদেশে অবিলম্বে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে এবং পবিত্র মসজিদ-মাদ্রাসাগুলোতে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা বন্ধ করতে হবে।

৪। বিভিন্ন ধর্মীয় সভা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় উস্কানিমূলক গুজব ছড়ানো ও অপপ্রচারকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

৫। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবমাননাকারীদেরকে অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে এবং দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও জেলা, উপজেলায় বঙ্গবন্ধুর ভার্স্কয নির্মাণ করতে হবে।

৬। মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে, মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের বাক-স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে এবং মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের ওপর যৌন নিপীড়ন বন্ধে মনিটরিং সেল গঠন করে নজরদারি বাড়াতে হবে।

৭। সকল মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত জাতীয় সংগীত বাজানো, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, শহীদ মিনার নির্মাণ ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানানো বাধ্যতামূলক করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।