পরিচিত মানুষে ভরে উঠুক ক্যাম্পাস


মো. রাকিবুল হাসান | Published: 2020-08-08 18:38:34 BdST | Updated: 2024-05-04 18:38:54 BdST

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে একমাত্র গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে নির্বাচিত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ। ছাত্র সংসদের প্রতিনিধি'রা বছরজুড়ে ব্যস্ত থাকেন শিক্ষার্থীদের নানান বিষয় নিয়ে। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। এমন সময়ে কেমন কাটছে তাঁদের দিনলিপি? এ নিয়ে ছাত্র সংসদের দায়িত্বরত চারজন প্রতিনিধির দিনলিপি জানার চেষ্টা করেছি।

জুয়েল রানা, গবি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি (ভিপি)। তিনি বলেন, করোনাকালীন সময়ে বেশি মনে পড়ে প্রাণের প্রিয় ক্যাম্পাস 'গণ বিশ্ববিদ্যালয়'। স্মৃতির পাতায় জমে থাকা হাজারো স্মৃতিময় ছবি, ঘটনা, অর্জন ও ক্যাম্পাসের উচ্ছ্বাসমুখর দিনগুলো মনে পড়ে। লকডাউনে ঘরবন্দী হওয়ায় ভীষণ মন খারাপ লাগতো। চারদিকে মৃত্যুর সংবাদে প্রচন্ড আশংকা ও অসহায় মনে হতো। সারাদিন কাটতো ফেইসবুক, ইউটিউব ও বইপড়ে। দিনের বেলায় গিটার ও গান চর্চা করে সময় যেত। মন ছটফট করতো বাইরে যাবার জন্য, ক্যাম্পাসে ফেরার জন্য।

জুয়েল রানা বলেন, কয়েকদিন পরে উপজেলা'তে করোনা মোকাবেলায় ভলেন্টিয়ার হিসেবে যোগ দিই। সুযোগ পেলাম কাজ করার। এরপর গণস্বাস্থ্য মেডিকেল হাসপাতালে অসহায়দের ত্রাণ বিতরণ শুরু হয়। তখন ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষ'কে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় উপহার বিলি করি। লকডাউন শিথিলের পরে ক্যাম্পাস এলাকায় থাকা প্রিয় মানুষদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। এই সময়ে আমার জীবনের চমকপ্রদ ও নির্মম পর্যায়গুলো দেখেছি। বিভিন্ন রকমের অভিজ্ঞতা হয়েছে এ করোনায়।

নজরুল ইসলাম রলিফ গবি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক (জিএস)। তিনি বলেন, মানবতা কি জিনিস! এ করোনায় শিখতে পেরেছি। এ দূর্যোগে অনেক মন্দ মানুষদের যেমন চিনতে পেরছি, তেমনি অনেক ভাল মানুষ কেউ দেখেছি। মানুষের উপকারের মধ্যে কতটা আনন্দ লুকিয়ে থাকে তা এ করোনায় বুঝেছি। সামনের দিনগুলোতে সবাইকে নিয়ে এমন কিছু করবো যাতে দেশ ও দশের কাজে লাগবে। শিক্ষার্থীদের থেকে দূরে থাকা অনেক কষ্টের। আমরা কাজের মধ্যে থাকলে ভাল থাকি। এ অবসর সকলের মন-মানসিকতা কে বদলে দিচ্ছে।

খাদিজা আক্তার সেতু গবি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের কোষাধ্যক্ষ। তিনি বলেন, ক্যাম্পাস বন্ধ তবে ছাত্র সংসদের কাজ থেমে নেই। ক্যাম্পাস কাছেপিঠে হওয়ায় ক্যাম্পাসে যেতে হয়। শিক্ষার্থীদের সময় দিতে হয়৷ শিক্ষার্থীদের সমস্যা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে কথা বলতে হয়। একাডেমিক পড়াশোনা'র চাপ কম থাকায় পরিবার কে সময় দিতে পারছি। বিভিন্ন পদের রান্না শিখছি। এ অবসরে সোশাল মিডিয়া ও বই পড়েই সময় কাটছে। খ্যাতিনামা ব্যক্তিদের জীবনীগ্রন্থ পড়তে ভাল লাগে। প্রত্যাশা করি, বড় ধরনের ক্ষয়-ক্ষতির পূর্বে এ দূর্যোগ কেঁটে যাক। কলিজার গবিয়ানরা ফিরে আসুক প্রাণের ক্যাম্পাসে। সংসদ ও ক্যাম্পাসের অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করতে চাই।

মাহতাবুর রহমান সবুজ গবি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ক্রীড়া সম্পাদক। তিনি বলেন, ক্যাম্পাস বন্ধের প্রথম আড়াই মাস ঘরবন্দী ছিলাম। তবে এখন প্রয়োজনের তাগিদে বের হতে হয়। দিনের বেশি ভাগ সময় অনলাইনে কাটছে। শরীর ও মনকে সতেজ রাখতে ক্যাম্পাসের ব্যায়ামাগারে যাই।

সবুজ আরও বলেন, অনলাইন প্রযুক্তিতে আমরা ক্লাস করেছি, পরীক্ষা দিয়েছি। তবুও এ দীর্ঘ বন্ধে একঘেয়েমি চলে আসছে। ছুটির নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকলে এমন হতো না। ক্যাম্পাসের রঙিন দিনগুলো ছেড়ে এখন মনমরা ভাবে দিন কাটছে। মায়াবী ক্যাম্পাস, বন্ধু-বান্ধব, অনুজ-অগ্রজদের কথা মনে পড়ে। ছাত্র সংসদের আলোচনা সভা ও আড্ডাগুলো অনুভব করি। ক্যাম্পাস কোলাহলে ভরে উঠুক আবার। পরিচিত মানুষের ভীড়ে হারিয়ে যাবো। প্রাণের ক্যাম্পাসে প্রিয় মানুষগুলোর সাথে আবার দেখা হবে। সবাই যেন সেপর্যন্ত সুস্থ থাকে।