শোক দিবসে গণ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধাঞ্জলি


মো. রাকিবুল হাসান | Published: 2020-08-16 01:11:02 BdST | Updated: 2024-05-04 02:31:04 BdST

১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদাতবার্ষিকী। ১৯৭৫ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়। রচিত হয় এক কালো অধ্যায়।

জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পরিচিত এই দিনটিতে বঙ্গবন্ধু ও বাঙালীর ইতিহাস নিয়ে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধাসহ অভিমত তুলে ধরেছেন মো. রাকিবুল হাসান

ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্সেস অনুষদের ৮ম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী মো. তাজমিলুর রহমান। তিনি বলেন, যখন ১৫ আগস্ট কে ফিরে দেখি তখন মনে হয় মানুষকে ভালোবাসা ও বিশ্বাস করার কারণেই বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে প্রাণ দিতে হয়েছে। যিনি এদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা ও প্রতিষ্ঠাতা। তাঁকে এরকম নির্মমভাবে ঘাতকের বুলেটে প্রাণ দিতে হবে, তা কল্পনার অতীত। বঙ্গবন্ধু বাংলাকে ও বাঙালীকে এতটাই ভালোবেসে ছিলেন যে, এদেশের কেউ তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে, এটা তিনি কল্পনাও করতে পারেননি।

তিনি আরও বলেন, জাতীয় ও আন্তজার্তিক ষড়যন্ত্রের মুখে ফেলে কিছু বিশ্বাসঘাতক রাজনৈতিক চক্রান্তে এবং কয়েকজন বিপথগামী আর্মি অফিসারের দ্বারা সংঘটিত হত্যাকাণ্ড বঙ্গবন্ধুকে মুছে দিতে পারেনি। বাংলার মানুষ তাঁকে আগের মতোই ভালোবাসে। শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালীর কাছে চিরস্মরণীয় এক নাম। বাঙালীর প্রেরণার নাম। যিনি না থেকেও বাংলার মানুষের হৃদয়ে বেঁচে আছেন—মৃত্যুঞ্জয়ী বঙ্গবন্ধু হয়ে। ১৫ আগস্টের শোক এদেশের মানুষের জন্য শক্তিতে পরিণত হোক এ কামনা রইল।

অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহবুবা বিনতে মুজিব। ৮ম সেমিস্টারের এই শিক্ষার্থী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট যেন ইতিহাসে বিশ্বাসঘাতকতার নতুন এক নজির সৃষ্টি করেছে। বাঙালী জাতির ইতিহাসে এক কলঙ্কময় দিন। নিভে গেল বাংলার উন্নয়নের জ্বলজ্বল করে জ্বলতে থাকা শিখাময় প্রদীপ। ঘাতকেরা এ দিন জাতির পিতাকে নিজ বাসভবনে স্বপরিবারে হত্যা করেছে। পর্দার অন্তরালে ছিল সামরিক-বেসামরিক ষড়যন্ত্রকারীরা। তিনি কখনো কল্পনা করতে পারেননি কোনো বাঙালীর হাতে তাঁর মৃত্যু হবে! এ কারণে নিজের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে কখনো শঙ্কিত ছিলেন না। তাই যখনই কোনো শুভাকাঙ্ক্ষী তাঁকে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন করতো, তখন তিনি দৃঢ় বিশ্বাসে বলতেন-আমাকে কোনো বাঙালী মারবে না। কিন্তু হায়, ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! তাঁকে মরতে হলো তাঁরই বিশ্বাসযোগ্য কিছু লোকের হাতে। ১৮টি গুলির ঘায়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে বঙ্গবন্ধুর নিথর দেহ। এই ছিল তাঁর বিশ্বাসের চরম প্রতিদান। ১৮টি গুলি এখনো লেগে আছে বাংলার বুকে। এ দেশ এখনো কেঁদে বেড়ায় সেই যন্ত্রণা ভুলতে না পেরে।

মাহবুবা আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর আজও আমরা সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারিনি। কিছু বিশ্বাসঘাতক ভেঙে দিয়েছে বাংলার মেরুদন্ড। কিন্তু সেই হত্যাকারীর দল আজও কী মুছে ফেলতে পেরেছে বাংলার ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর কীর্তি কে? পারেনি আর কখনো পারবেও না। কারণ এদেশের প্রতিটি মানুষের মুখে আজও উচ্চারিত হয় বঙ্গবন্ধুর নাম। কবি অন্নদাশঙ্কর রায়ের লেখা পঙক্তি মনে পড়ে যায়-

"যতদিন রবে পদ্মা যমুনা
গৌরী মেঘনা বহমান
ততদিন রবে কীর্তি তোমার
শেখ মুজিবুর রহমান"।

ফার্মেসি বিভাগের পঞ্চম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী শাহনেওয়াজ আরিফ। তিনি বলেন, ১৫ আগস্ট শুধু একটি তারিখ নয়। এটি বাঙালী জাতির জন্য কলঙ্কময় এক দিন। যে দেশকে তিনি নিজ হাতে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে বাঙালী জাতিকে উপহার দিয়েছেন, সেই দেশের মাটিতে তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনে জেল-জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন আর স্বৈরশাসকের রক্তচক্ষু ছিল বঙ্গবন্ধুর নিত্যসঙ্গী। তিনি নিশ্চিত মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন বহুবার। তাঁর জন্য একাধিকবার ফাঁসির মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল। বাঙালীর প্রতি তাঁর আস্থা ও বিশ্বাস ছিল আকাশচুম্বী। এ কারণে হাসিমুখে, নির্ভীকচিত্তে মানুষের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সব ধরনের জুলুম-নির্যাতন সহ্য করেছেন তিনি। আমৃত্যু গণতান্ত্রিক, প্রগতিবাদী ও অসাম্প্রদায়িক সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখে ছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন, বাংলাদেশে যথাযথ রূপায়ণই হবে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের সর্বোত্তম উপায়।

প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ৫ম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী সুপর্ণা রহমান বলেন, বাঙালীর রক্তে বয়ে চলে বঙ্গবন্ধু। এক নাম এক ডাক ও চেতনায় থাকবে আমৃত্যু পর্যন্ত। তিনি এদেশের মানুষের মুক্তির প্রতীক ও পরম আত্মীয়। তাঁর বজ্রকন্ঠে উচ্চারিত বাণী বাঙালীকে করেছে বীরের জাতি। এদেশ গড়া ও উন্নয়নে লাখ মানুষের পথ প্রদর্শক তিনি। ১৯৭৫ সালের এই রাতে ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকান্ড ও বাঙালীর অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যায়। পরের দিন ১৬ আগস্ট লন্ডন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়- তাঁকে ছাড়া বাংলাদেশের বাস্তবে কোনো অস্তিত্ব নেই।

ফিজিওথেরাপি বিভাগের ৬ষ্ঠ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ১৯৭১ সালে শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম’। সেই ডাকে প্রাণ বাজি রেখেছিল বাংলার সাধারণ মানুষ। যার ফলাফল আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ। কিন্তু ১৯৭৫ সালে তাঁকেই সেনা বাহিনীর কতিপয় বিপথগামী সদস্যরা হত্যা করে। এছাড়াও তাঁর পরিবারের সদস্য ও আত্মীয় স্বজনসহ ১৬ জনকে একে একে মেরে ফেলে। বাঙালীর এক কালো অধ্যায়ের রচনা করে বিপথগামী সেনারা।

তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধে ধর্ষিতা মেয়েদের বাবার নামের জায়গায় আমার নাম লিখে দিও, আর ঠিকানা দিয়ে দিও ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর’- এমন কথা যে বলতে পারে, সে হচ্ছে মহাপুরুষ। এরকম মহাপুরুষ পৃথিবীতে আর জন্ম নিবে কি না আমার জানা নেই।

ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ৩য় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী রিয়া দেবনাথ বলেন, আগস্ট বাঙালীর শোকের মাস। আগস্ট এলে বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে ওঠে। চেপে ধরে অজানা নানা শঙ্কা। মনের ভেতর প্রশ্ন জাগে, এতবড় শোক কীভাবে বইছে আগস্ট! ‘আমরা তরুণ প্রজন্ম স্বাধীনতা দেখিনি। তবে যুদ্ধে আহত কোনো মুক্তিযোদ্ধা বা কোনো বই অথবা স্বাধীনতার কোনো চলচ্চিত্র দেখে অনুভব করেছি স্বাধীনতা কী জিনিস। কত কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে সে সময়কার মানুষগুলোকে। পৃথিবীর ইতিহাসে যে সমস্ত দেশ যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করেছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। আর এই স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে সেদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে লাখো বাঙালি চব্বিশ বছর পাক হায়েনাদের নির্যাতন থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায় মৃত্যুকে অনিবার্য জেনেও নেতার আদেশকে শিরোধার্য মনে করে মুক্তির নেশায় মৃত্যুকে আপন করে নিয়েছিল।