বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞান অর্জনে আসে শিক্ষার্থীরা, লাশ হতে নয়: রাষ্ট্রপতি


ঢাবি টাইমস | Published: 2019-12-10 03:50:26 BdST | Updated: 2024-05-05 08:22:45 BdST

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোন ছাত্র লাশ হয়ে ফিরলে এর দায় কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আচার্য আবদুল হামিদ। তিনি বলেছেন, ‘শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করে জ্ঞান অর্জনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়, লাশ হয়ে হয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য নয়। কর্তৃপক্ষ সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ নিলে এসব অপ্রত্যাশিত ঘটনা অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব। তাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এর দায় একেবারে এড়াতে পারে না।’

সোমবার (৯ ডিসেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে এসব কথা বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য আবদুল হামিদ। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও গবেষকদের হাতে সনদপত্র তুলে দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২তম সমাবর্তন বক্তা ছিলেন জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের কসমিক রে রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. তাকাকি কাজিতা। অনুষ্ঠানে তাকেও সম্মানসূচক ‘ডক্টর অব সাইন্স’ ডিগ্রি দেওয়া হয়।

সম্প্রতি দেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া অমানবিক ও অনভিপ্রেত ঘটনা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ও শিক্ষার্থীদের সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা লেখাপড়া করে জ্ঞান অর্জনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়, লাশ হয়ে বা বহিষ্কৃত হয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য নয়। আমি আশা করব ভবিষ্যতে কর্তৃপক্ষ সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ নেবে।’

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘তোমাদের মা-বাবা অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে তোমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করেন। এমন অনেক পরিবার আছেন যারা সর্বস্ব দিয়ে তাদের ছেলেমেয়েদের মানুষ করার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠান। তোমাদের মূল দায়িত্ব হলো লেখাপড়া করা এবং দেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলা। তোমরা এমন কোনো কাজ করবে না যাতে তোমাদের পরিবার ও প্রতিষ্ঠানের সম্মান ক্ষুন্ন হয়।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো কোনো শিক্ষালয় নয়। বাঙালির ইতিহাসের সঙ্গে এই প্রতিষ্ঠানের রয়েছে ঘনিষ্ঠ যোগ। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যূদয়ের ইতিহাসে ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬ এর ছয় দফা, ’৬৯ এর গণঅভ্যূত্থান, সর্বোপরি ’৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ বিশেষ উল্লেখযোগ্য। প্রতিটি আন্দোলনের সূতিকাগার ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।” এসময় রাষ্ট্রপতি যেসব শিক্ষার্থী স্নাতকে ভূষিত হলেন এবং যারা গবেষকের স্বীকৃতি পেলেন তাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।

তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ডাকসু নেতাদের কর্মকান্ড আমার ভালো লাগেনা। তাদের উচিত ছাত্রদেরকে কল্যাণের কাজে প্রাধান্য দেয়া। তাদের নিয়ে এখন নানান কথা শোনা যাচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ভর্তিতে নানা ভোগান্তির বিষয় উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, এ বিষয়ে তো ডাকসু নেতাদেরই কথা বলার ছিল, আমি বলব কেন?

ডাকসু নির্বাচনের নানান ত্রুটির কথা আমি শুনতে পেয়েছি। আশা করি , আগামীতে এ রকমের ভুল ত্রুটি হবে না।

এদিকে রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্ধ্যকালীন কোর্স নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, সান্ধ্যকালীন কোর্সের মান এবং এর কারণে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস মেলায় পরিণত হয়। এ বিষয়ে সুচিন্তিত পদক্ষেপ নিতে হবে ।

রাষ্ট্রপতি বলেন, মেডিসিন বিদেশের জন্য একভাবে তৈরি করা হয়, ঢাকার জন্য এক ভাবে তৈরি করা হয়, গ্রামাঞ্চলের মানুষের জন্য আরেক ভাবে তৈরি করা হয় ছাত্রসমাজকে বিষয়টি রুখে দাঁড়াতে হবে।

সমাবর্তনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী শহিদুল্লাহ, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, সিনেট, সিন্ডিকেট, হল প্রভোস্টসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।