করোনা সংকট মোকাবেলায় শিক্ষার্থীদের পাশে ঢাবির ইইই বিভাগ


Dhaka | Published: 2020-06-08 23:48:58 BdST | Updated: 2024-05-04 19:23:01 BdST

কোভিড-১৯ এর করাল গ্রাসে বিশ্ব আজ বিপর্যস্ত; বিপর্যস্ত সব শ্রেণীপেশার মানুষের জীবন। দেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর গেলো ২৬শে মার্চ থেকে সকল সরকারী, আধা-সরকারী ও সায়ত্ত্বশাশিত প্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। তবে স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও গণপরিবহন বন্ধের কথা মাথায় রেখে ২০ মার্চ নাগাদ বন্ধ করে দেয়া হয় দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বন্ধ করে দেয়া হয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবসাগুলো। এমতবস্থায় দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ২০ মার্চ রাতের মধ্যে সকল শিক্ষার্থীকে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়। ফলে হুমকীর মুখে পড়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ হাজার আবাসিক শিক্ষার্থী সহ ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন। দীর্ঘ প্রায় তিন মাস পর প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কার্যক্রম সীমিত আকারে চালু হলেও বন্ধ রয়েছে ক্লাস পরীক্ষা সহ সকল একাডেমীক কার্যক্রম।

এই পরিস্থিতিতে বেশ সঙ্কটের মধ্যে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অসচ্ছল শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন কয়েক হাজার শিক্ষার্থী রয়েছেন যারা শুধুমাত্র টিউশনির মাধ্যমে নিজেদের খরচ চালানোর পাশাপাশি পরিবারের দেখাশোনা করতেন। কেউ আবার করতেন খন্ডকালীন চাকুরী কেউবা আউটসোর্সিং। সরকার ঘোষিত লকডাউনের কারণে শিক্ষার্থীদের আয়ের এই সকল উৎস প্রায় পুরোপোরি বন্ধ। পরিবার নিয়ে শিক্ষার্থীদের জীবন যখন অনিশ্চয়তার মধ্যে তখনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক কৌশল বিভাগ এই সংকটকালীন সময়ে বিভাগের অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নেয়। সহযোগীতায় এগিয়ে আসেন বিভাগের শিক্ষক সহ সাবেক ও বর্তমান সকল শিক্ষার্থী।

বিশেষ করে বিভাগের অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের উদ্যোগে ইতঃমধ্যে ৪ দফায় মোট ৪২ জন শিক্ষার্থীকে সর্বমোট ৫লক্ষ ৬০ হাজার টাকা আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে। এছাড়া বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থীরা দেশ-বিদেশ থেকে বিভাগে সর্বমোট ১২ লক্ষ টাকার অধিক আর্থিক সহযোগীতা পাঠিয়েছেন। প্রতিবছর বিভাগের ২১ জন অসচ্ছল শিক্ষার্থীকে মাসিক বৃত্তি প্রদান করে থাকে বিভাগের অ্যালামনাই এসোসিয়েশন। তবে এখন থেকে অতিরিক্ত ২১ জন শিক্ষার্থী সহ মোট ৪২ জন শিক্ষার্থীকে নিয়মিত বৃত্তি প্রদানের আশ্বাস ব্যাক্ত করেছেন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত ছাত্র-উপদেষ্টা জনাব প্রফেসর জোনায়েবুর রশীদ। বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যান জনাব অধ্যাপক মোস্তাফা আল মামুন এর সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে শিক্ষার্থী সহায়তা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। পুরো কার্যক্রমে তাঁর সকল দিক নির্দেশনা ও পরামর্শ অত্যন্ত্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

বিভাগীয় অধ্যাপক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জনাব জেড.এম. পারভেজ সাজ্জাদ জানান, “আমরা প্রতি বছরই বিভাগের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের সচ্ছলতা নিশ্চিত করতে উপবৃত্তি প্রদান সহ বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকি। এই করোনা কালে আমাদের কোনো শিক্ষার্থী যাতে আর্থিক সংকটের মুখে না পড়ে সেজন্য বিভাগের এলামনাই এসোসিয়েশন থকে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আর্থিক সহযোগীতার পাশাপাশি এবছর আমরা শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যগত দিক গুলো মাথায় রেখে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি”।

এক ফেসবুক পোস্ট এর বরাত দিতে, সহযোগীতায় এগিয়ে আসা সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে অধ্যাপক জোনায়েবুর রশীদ বলেন, “ আমরা এই সঙ্কটকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে বদ্ধ পরিকর”। বিভাগের প্রত্যেক ব্যাচ থেকে সামর্থবান সকলকে সমান ভাবে এগিয়ে আসার আহ্বানও জানান তিনি।

বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জনাব জাহিদুল ইসলাম জানান, “পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে; বিভাগের আরো কোনো শিক্ষার্থী যারা টিউশন বা অন্য কোনো উপায়ে নিজের পরিবারের দেখাশোনা করত, নিকট ভবিষ্যতে তাদের সহযোগীতার প্রয়োজন হলে তারা যেনো তাদের সম্বন্ধে বিস্তারিত জানাতে সঙ্কোচ না করে। বিভাগের অ্যালামনাই এসোসিয়েশোন তাদের পাশে দাঁড়াতে সর্বতঃভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাবে”।

শিক্ষার্থী সহযোগীতা ব্যবস্থাপনার অন্যতম ব্যস্থাপক ও বিভাগের তরুণ শিক্ষক জনাব আরিফুল ইসলাম বলেন, “ আমরা ইতঃমধ্যে ৪০ এর অধিক শিক্ষার্থীকে আর্থিভাবে সহযোগীতা করেছি। যে যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসলেই কেবল এই সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব”।

এছাড়া বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে বিভাগের আরও তিনজন শিক্ষার্থীকে ৩০ হাজার টাকা উপহার হিসেবে প্রদান করা হয়েছে। এ ব্যাপারে বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া-লস এঞ্জেলেস এর বর্তমান সহকারী গবেষক জনাব স্বপ্নিল শয়ন সাহা বলেন, “ এই সঙ্কটময় মুহূর্তে বিভাগ ও বিভাগের শিক্ষারথীদের নেয়া এই মহতী উদ্যোগ সত্যি প্রশোংসার দাবীদার”।