এমসিকিউ পদ্ধতিতে প্রকৃত মেধা যাচাই সম্ভব নয়


Shoeb Shuvro | Published: 2024-03-04 22:55:14 BdST | Updated: 2024-12-09 00:30:27 BdST

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলছে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা। এর মধ্যে চারটি বড় বিশ্ববিদ্যালয়—ঢাকা, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে প্রতিবছরই চলে নানা আলোচনা।

প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা এমসিকিউ পদ্ধতিতে হয়ে থাকে। কিন্তু এই পদ্ধতিতে প্রকৃত মেধা যাচাই হচ্ছে কি না—এ বিষয়ে বরাবরই প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষাবিদরা। প্রশ্নফাঁসসহ নানা ইস্যুর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে এমসিকিউ পরীক্ষার পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে নেওয়া হচ্ছে ভর্তি পরীক্ষা।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে এমসিকিউ প্রশ্নের পাশাপাশি ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতির মানোন্নয়নে চালু করা হয় লিখিত পরীক্ষা। সেখানে Short Answered Question (SAQ) পদ্ধতিতে সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর করতে হয়েছিল ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের।

পরীক্ষায় ৬০ নম্বরের এমসিকিউ এবং লিখিত ৪০ নম্বর ছিল। লিখিত অংশে ২০টি প্রশ্ন করা হয়, যার প্রতিটির মান ২ করে মোট ৪০ নম্বর। এমসিকিউ ৬০টি প্রশ্নের জন্য সময় বরাদ্দ ছিল ৫০ মিনিট আর লিখিত প্রশ্নের জন্য সময় দেয়া হয় ৪০ মিনিট।

এমসিকিউয়ের সঙ্গে লিখিত পরীক্ষা নেওয়ার যৌক্তিকতা দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের তৎকালীন প্রশাসক ও ভর্তি উপ-কমিটির সদস্য অধ্যাপক প্রভাষ কুমার কর্মকার গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, “এটা আমরা আগেও করতে চেয়েছিলাম, আমাদের পরিকল্পনায় ছিল। কারণ শুধু এমসিকিউ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাই করার চেয়ে লিখিত পদ্ধতিতে মেধা যাচাইটা সহজ হয়।”

তবে করোনার কারণে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই পদ্ধতিতে সরে আসে। এরপর থেকে কেবল এমসিকিউ পদ্ধতিতেই ভর্তি পরীক্ষা নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. লতিফুর রহমান সরকার এ প্রসঙ্গে বলেন, “এমসিকিউ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে পরীক্ষার্থীদের প্রকৃত মেধা যাচাই করা সম্ভব নয়।এমসিকিউ পদ্ধতির রয়েছে প্রথাগত (generic) ত্রুটি এবং এ পদ্ধতিতে অসদুপায় অলম্বন করা সহজ। অনেক পরীক্ষার্থী আছে, যারা দলবেঁধে পরীক্ষা দিতে এসে নানা উপায়ে অসদুপায় অবলম্বনের চেষ্টা করে, যা বন্ধ করা বেশ কঠিন। এমসিকিউ পদ্ধতিতে অসদুপায় অবলম্বন প্রতিরোধ করার জন্য প্রয়োজন পরীক্ষার্থীদের দূরে দূরে বসানো এবং কঠোর ভিজিল্যান্স। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে প্রতি গ্রুপে ১৮ হাজার পরীক্ষার্থী থাকায় দূরে দূরে সিট বসানোর চিন্তা একটি স্বপ্নবিলাস মাত্র। অনেক শিক্ষক কঠোর হলেও কিছু শিক্ষক আছেন, যাদের চোখ অতি স্বল্প সময়ের জন্য ফাঁকি দেওয়া ধূর্ত পরীক্ষার্থীদের জন্য কঠিন নয়।”

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ ও আইন বিভাগে এমসিকিউয়ের পাশাপাশি ভর্তি পরীক্ষায় লিখিত অংশের রেওয়াজ ছিল। ইংরেজি বিভাগে আলাদা লিখিত পরীক্ষা পদ্ধতি চালু থাকলেও, আইন বিভাগের ক্ষেত্রে সেটি তুলে দেওয়া হয়।

আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক আ.ন.ম. ওয়াহিদের কাছে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, “আইন বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তি কেন্দ্রের আইন অনুষদের আলাদা একটি ইউনিট ছিল। আমরা সেখানে লিখিত অংশ রেখেছিলাম। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল এমসিকিউয়ের পাশাপাশি লিখিত অংশটা থাকলে একদিকে যেমন মেধাবী শিক্ষার্থী নির্বাচন করাটা সহজ হয়, অন্যদিকে হাতের লেখা মিলিয়ে অন্যান্য অসদুপায় কেউ অবলম্বন করেছে কি না সেটা নিশ্চিত করা যায়।”

আইন অনুষদের এই ডিন আরো বলেন, “একটা সময়তো বিভাগগুলো আলাদা পরীক্ষা নিতো। শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে এগুলোকে আলাদা ইউনিট করে এখন পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। আমরা ভর্তি পরীক্ষার আগে আইন বিভাগে লিখিত অংশ চালু করার বিষয়ে বারংবার দাবি জানিয়েছি কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এ ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া পাইনি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে লিখিত অংশটি তুলে দেওয়াটা কতটা যৌক্তিক সিদ্ধান্ত ছিল?—এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. মো. লতিফুর রহমান সরকার জানান, “আমার জানা নেই ঠিক কোন কারণে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসলো। আমি নিজেও এ বিষয়ে একটি কলাম জাতীয় দৈনিকে লিখেছিলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যদি এমসিকিউ পরীক্ষার পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষা নিতে পারে, তাহলে আমরা কেন পারছিনা? বিসিএসসহ চাকরির পরীক্ষাগুলোতেও প্রার্থী নির্বাচনে এমসিকিউয়ের পাশাপাশি লিখিত পদ্ধতি চালু আছে। মেধাবী শিক্ষার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এমসিকিউ পরীক্ষার পাশাপাশি লিখিত অংশও চালু করা উচিত বলে আমি মনে করি।”

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কমিটির প্রধান ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, “আমরাও চাই ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রকৃত মেধাবীরাই যেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায়। তবে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সংখ্যাধিক্যের কারণে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে। আগামীতে ভর্তি পরীক্ষার বিকেন্দ্রীকরণের পাশাপাশি কিছু কাঠামোগত সংস্কারের বিষয়ে আমরা নজর দেবো।”