হিজাব বিরোধী শিক্ষকদের শাস্তি দাবি


ঢাকা | Published: 2024-08-22 16:37:50 BdST | Updated: 2025-05-31 21:59:23 BdST

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাববিরোধী ১০০ শিক্ষকের তালিকা প্রকাশ করেছে ‘অধিকার সচেতন শিক্ষার্থী সমাজ’ নামক একটি সংগঠন। আজ ২২ আগস্ট, ২০২৪, রোজ: বৃহস্পতিবার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির রাজু ভাস্কর্য নিকটে এক সমাবেশে হিজাববিরোধী শিক্ষকদের এ তালিকা প্রকাশ করে করে তারা। শিক্ষার্থীরা সমাবেশে ঐ শিক্ষকদের চাকুরীচ্যুতি ও শাস্তিও দাবী করে।

সমাবেশে ‘অধিকার সচেতন শিক্ষার্থী সমাজ’ এর আহবায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মুহম্মদ মুহিউদ্দিন রাহাত বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সবচেয়ে বেশি বৈষম্য আর নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন আমাদের হিজাব বা নেকাব পরা ছাত্রীরা। তাদের নানান উপায়ে এক শ্রেণীর শিক্ষক-শিক্ষিকা প্রতিনিয়ত নিপীড়ন করে থাকেন। তাদের ক্লাস, পরীক্ষা, ভাইভায় বাধা দেন, নিত্য নুতন কায়দায় হেনস্তা করেন। বর্তমান বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশে হিজাব পরিহিতা ছাত্রীদের উপর এতদিন ঘটে যাওয়া নিপীড়নের অবসান হওয়া চাই। তাই আমরা শিক্ষার্থীরা আমাদের সেই সব নিপীড়িত বোনদের পাশে দাড়াবো এবং যে সমস্ত শিক্ষক শিক্ষিকা হিজাব, নিকাব বা বোরকা পরিহিতা ছাত্রীদের নিপীড়ন করেছে আমরা তাদের চাকুরীচ্যুতি ও শাস্তি দাবী করছি।

বিজ্ঞাপন

মুহম্মদ মুহিউদ্দিন রাহাত বলেন, আমাদের গবেষণা বলছে, হিজাব বা বোরকা পরার কারণে অসংখ্য ছাত্রী প্রতিনিয়ত নিপীড়নের শিকার হলেও তারা সেই কষ্ট মুখ বুজে সহ্য করছেন, কারো কাছে প্রকাশ করছে না। এমনকি সেই সব ঘটনা নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলেও অভিযুক্ত শিক্ষক শিক্ষিকার নাম উহ্য রাখছেন। আমরা সেই সব হিজাব বা বোরকা পরিহিতা বোনদের বলতে চাই, আপনারা নিপীড়ক শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আর ভয় পাবেন না, তাদের পরিচয় গোপন করবেন না। আমরা গুগল ফর্মে একটি পেইজ খুলেছি। যার ঠিকানা : t.ly/i8hpO । আপনারা এ ঠিকানায় ঐ সমস্ত হিজাব বিরোধী শিক্ষিক-শিক্ষিকা সম্পর্কে জানান। আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নিবো ইনশাআল্লাহ।

‘অধিকার সচেতন শিক্ষার্থী সমাজ’ এর সদস্য সচিব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী মুহম্মদ ইয়াকুব মজুমদার বলেন, বিজ্ঞানের উৎকর্ষতার এ যুগে একজন শিক্ষার্থীর পরিচয় নিশ্চিত করতে মুখ দেখানোর কোন প্রয়োজন নেই। শিক্ষার্থীর আঙুলের ছাপ দিয়ে তার পরিচয় শতভাগ নির্ভুলভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব। তবে বিশেষ কারণে কোন ছাত্রীকে তল্লাশী করার প্রয়োজন হতে পারে, সেক্ষেত্রে সবার সামনে নয়, বরং শিক্ষিকা দ্বারা ছাত্রীদের আলাদা কক্ষে নিয়ে তল্লাশী করা প্রয়োজন। অথচ কিছু শিক্ষক-শিক্ষকা সেই কাজটি করেন না, বরং কোন ছাত্রী হিজাব বা বোরকা পরলে তাকে নারী-পুরুষ সবার সামনে হেনস্তা করে আনন্দ লাভ করে, যা খুবই ন্যাক্কারজনক বিষয়।

‘অধিকার সচেতন শিক্ষার্থী সমাজ’ এর সদস্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মুহম্মদ আবু মুরসালিন বলেন, একজন মানুষ তার শরীরের কোন অংশ ঢেকে রাখবে অথবা খোলা রাখবে, এটা সম্পূর্ণ তার প্রাইভেসী। কেউ যদি অন্যের হিজাব বা নেকাব খোলার চেষ্টা করে, তবে অবশ্যই এটা প্রাইভেসী অধিকার লঙ্ঘন।

‘অধিকার সচেতন শিক্ষার্থী সমাজ’ এর সদস্য চুয়েট শিক্ষার্থী মুহম্মদ জাফর সাজিদ বলেন, হিজাবী ছাত্রীদের দেখলে কোন কোন শিক্ষক বলে, তোমরা পাকিস্তান চলে যাও। আমরা সেই সমস্ত শিক্ষকদের বলতে চাই, হিজাব, বোরকা, নেকাব এগুলো বাংলাদেশের সংস্কৃতির অংশ। এগুলো ভালো না লাগলে আপনারা পাকস্তান চলে যেতে পারেন। ৯৫% শতাংশ মুসলমান সংগরিষ্ঠ বাংলাদেশে হিজাব বা বোরকা পরিধান করা সাংবিধানিক অধিকার, এই অধিকার কেউ লঙ্ঘন করতে পারে না। জাফর সাজিদ আরো বলেন, গবেষণায় দেখা যায়, যে সমস্ত শিক্ষক ছাত্রীদের বোরকা বা নেকাবের বিরুদ্ধে বলে, তারাই বিভিন্ন সময় ছাত্রী নিপীড়ন ও ধর্ষণের মত নিকৃষ্ট অপরাধে জড়িত।

বিজ্ঞাপন

সমাবেশে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলো। তারা সারা দেশের হিজাব বিরোধী ১০০ শিক্ষক-শিক্ষিকার তালিকা প্রকাশ করে এবং আগামীতে আরো হিজাব বিরোধী শিক্ষিক-শিক্ষিকার তালিকা প্রকাশ করবে বলে ঘোষণা দেয়।